Click the image to explore all Offers

অণুগল্প।। আত্মগ্লানি।। রীতা রায়




                                                                             আত্মগ্লানি

রীতা রায় 


শমিতার মনে ধারনাটি বদ্ধমূলভাবে গেঁথে গেছে বলা যেতে পারে। চেনা পরিচিতেরাও জেনে গেছে, ওটা ওর ম্যানিয়া। ওর সামনে পরস্পরে মুখ চাওয়া চাওয়ি করলেও পিঠ-পিছে ওকে নিয়ে চলে রীতিমতো মস্করা। শমিতাকে গয়নাশূণ্য দেখে দেখে সকলে অভ্যস্ত। কেউ কেউ তাকে অত্যাধুনিকা বলে কটুক্তি করতেও ছাড়ে না। কিন্তু, একমাত্র মেয়ে রিম্সিতা হঠাৎ জেদ ধরে বসেছে --- আজ তার মা বাবার পঁচিশতম বিবাহ বার্ষিকীতে তার মাকে নিজের হাতে সাজাবে। তার নতুন পাওয়া চাকরির মাইনের টাকা জমিয়ে কিনে এনেছে, মায়ের জন্য শাড়ি-গয়না আর বাবার জন্য ধুতি-পাঞ্জাবী।'

        সাজালো,--- মনের মতো করে। কিছুটা আধুনিক, কিছুটা পুরোনো স্টাইলে। বাঃ খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। এই বয়সেও রূপ যেন নতুন করে ঝলসে উঠলো। সোনার বালাজোড়া হাতে নিয়ে রিম্সিতা মায়ের বাঁ হাতটা ধরে হালকা টান দিতেই.. শমিতা সযত্নে তার হাতখানা ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
   -- দে, আমি নিজে পরছি।
  
নিমন্ত্রিতজনেরা আসতে শুরু করেছে।
সপরিবারে হৈ হৈ করে ঢুকলো শমিতার ছোটবেলার বন্ধু কনিকা। শমিতাকে কনের সাজে দেখে তার মুখে খই ফুটতে শুরু করলো,--- 'দেখলি তো, কিছুই হল না। শুধু শুধু ভয়ে ভয়ে এতটা বছর কাটালি? হাতে চুরি পরলেই নাকী তুই মরে যাবি--- যত সব আদিখ্যেতা'।
            
            শমিতা এতক্ষণ যেন ঘোরের মধ্যে ছিল। কনিকার কথায় সম্বিত ফিরে পেল। চোখের দুই কোটরে তৃষিত চাতকের করুনা ছলকে উঠলো। ঘর ছেড়ে একছুটে বেরিয়ে এসে ঢুকে পড়ল তার নিজের শোবার ঘরে। কাঁধে ভর করা প্রতিবন্ধকতা ধাওয়া করলো তাকে। মনের কোণে সূদীর্ঘ  ভারের বোঝা। বিস্ময়ে হতবাক সকলে। প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দিল কেউ কেউ --- কী হল?

               রিম্সিতাও ছুটলো পিছু পিছু। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকেই থমকে যেতে হল তাকে। একী দেখছে সে---?
শমিতার দুচোখে পঙ্গুগ্লানি। বাঁহাতের কব্জি থেকে রবারের হাতটা খসিয়ে মেঝেয় ছুঁড়ে ফেলেছে। ফুলহাতা ব্লাউজের হাতা বেয়ে ঝরে পড়ছে রক্তধারা..।
   
           রিম্সিতা দৌড়ে গিয়ে  অচেতনপ্রায় শমিতাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। থরথর কন্ঠে ব্যক্ত হল তার মনক্লিষ্টতা...,
    ---'মা, তোমার ছোটবেলার বন্ধু  কনিকামাসি সব জানে, আর আমি.. তোমার শরীরের অংশজ.. তোমার নিজের মেয়ে হয়েও.. আমাকে কোনোদিন কিছুই বুঝতে দাও নি? কেন মা.. কেন? বলো মা, বলো?
মা ও মেয়ের অশ্রু মিশে গেল একই স্রোতধারায়...।
দরজার বাইরে অনেকজোড়া বিহ্বল চোখ....।

---------------------------------------------------------- 


  রীতা রায়
মহেশমাটি রোড, মালদা
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
মোঃ 6295207603 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.