Click the image to explore all Offers

নিবন্ধ ।। আলপনার ভাষা ও ভাবনা ।। নীলমাধব প্রামাণিক





   আলপনার ভাষা ও ভাবনা

      নীলমাধব প্রামাণিক 


গ্রামের প্রতিটি গৃহস্থের নিকানো আঙিনা জুড়ে ফুটে ওঠে আলপনার নিপুণ সুষমা । বার ব্রত আর নানা পার্বনে বদলে যায় আলপনার ভাষা  ও ভাবনা ।

আলপনা শিল্পের প্রতিটি আঁচড়ের ছত্রে ছত্রে জেগে থাকে কামনা ও বাসনার অলিখিত ইঙ্গিত । কোথাও একটা না পাওয়ার অতল গভীরে ঘাই মারে । গ্রামীন প্রত্যন্ত জীবনের নিতান্তই সে চাওয়া পাওয়া । কামনা একটু ভালো থাকার ।
বেঁচেবর্তে থাকার বাসনা । না । এখানে কোনো লোভের চিহ্ন নেই । যা আছে তা হলো প্যাঁচ হীন দেহাতী সরল মনের মুনাফা হীন চাহিদা । যা তার বিলাসিতার সামগ্রী নয় । বেঁচে থাকার উপাদান ।

সেই চাওয়া ফুটে ওঠে আলপনার মাঙ্গলিক লাবণ্যের অব্যক্ত ভাষায় । কি আছে সেখানে ?
আছে গোলা ভরা ধান , শস্য ক্ষেত , আঁকা বাঁকা বয়ে চলা জল ভান্ডার (নদী ) । আর আছে লাঙল মই । ধানের ছড়া । মা লক্ষ্মীর পদচিহ্ন ।
পুকুর ভরা মাছ , সিড়ি । ধানের গাদা । ঢেঁকিশাল ।আরো নানা নিত্য প্রয়োজনীয় টুকিটাকি ।

বারো মাসের তেরো পার্বনের দেশে বিভিন্ন ব্রতকথার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে বহু যুগের এই আলপনা র মাঙ্গলিক ভাবনা ।
এর সূচনা কাল বুঝি কোন এক আদিম যুগে ।
যখন মানুষের মুখে কোনো ভাষা ফোটেনি ,
তখন আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে হয়তো
আলপনা র মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছেন আমাদের পূর্বসূরিরা তাদের অস্ফুট স্বর । বহু গুহাচিত্রে আজও ফুটে আছে তার অঢেল নিদর্শন ।

অঞ্চল ভেদে বদলায় আলপনার নকসা ও ধরন। আতপ চালের গুঁড়ো গুলে, তাতে সাদা নেকড়া ডুবিয়ে আঙুলের সূক্ষ্ম আঁচড়ে লেখা হয় আলপনা। তবে এ পক্রিয়াটি যতটা সহজে বলা হয়েছে আদপে ততটাই কঠিন কাজ। এ এক সহজাত প্রতিভা । যা আমাদের বাড়ির মহিলারা আজও কমবেশি বহন করে চলেছে। শুধু তাই নয় এই পরম্পরা তারা পৌঁছে দিচ্ছে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের চেতনায়।

আজও তারা এক মনে এঁকে যায় ধানের ছড়া।
মা লক্ষ্মীর পদচিহ্ন। যে চিহ্ন পৌঁছবে বাংলার প্রতিটি গৃহে। তারা চায় মা লক্ষ্মীর আগমনে শস্যশালি হোক ক্ষেত। বাড়ুক সম্পদ। সমৃদ্ধ হোক সমস্ত সংসার।



------------------------

 


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.