নমস্য
উম্মেসা খাতুন
ভোরের আযান শেষ হয়েছে, জামিন মিয়ার ঘুম ভাঙলো। তারপর সে খানিক আলস্য কাটিয়ে বলদ দুটো নাদে বেঁধে দিয়ে এক ডালি শুকনো খড় ঢেলে দিল," লে, একটু জলখাবার খাইয়্যা লে, ম্যালা দিন তোধের দিইয়্যা কুনু কাম করাই নি, আজ একটু কাম করাব। শিষ্যার মাঠে আমার একটা এ্যাক বিঘ্যা ভুঁই আছে, ভুঁইডা চষতে হবে। এ্যাখুন এ্যাক চাষ দিইয়্যা ফেল্যা রাখব। তাহিলে ঘাস যা আছে সব মইর্যা যাইয়্যা ভুঁইডা পরিষ্কার হইয়্যা থাকবে। পরে আর এ্যাক চাষ দিইয়্যা বাতাল কইর্যা রাই বুনব। এই ভুঁইডায় রাই খুব ভালো হয়। নাহিলে ত্যালের যা দাম ত্যাল কিইন্যা খাতি পারব না। আমার মুতোন মানুষ জ্যান্ত মইর্যা যাবো। হ্যাঁ রে, সত্যি বুলছি। লে, তাড়াতাড়ি খাইয়্যা লে!..."
মাঠে গিয়ে লাঙ্গল জুড়ে অর্ধেক ভুঁই চাষ করে জামিন মিয়ার খুব খিদে আর জল তেষ্টা পেয়ে গেল। লাঙ্গল ছেড়ে দিয়ে জামিন মিয়া তখন ভুঁইয়ে একটা বাবলা গাছতলায় বসল, এ্যাখুন এ্যাক থালি পানি দ্যাওয়া বাসি ভাত পালে খুব ভালো হতো, জানডা ঠাণ্ডা হতো। কিন্তু সাকিনা আজ বাড়ি লাই। কাল তার মা'র বাড়ি গেলছে। বাড়িতে থাকলে সে ঠিকই এ্যাক থালি পানি দ্যাওয়া বাসি ভাত আনত। সে তার বিহ্যা করা স্ত্রী না! আর সে তা মজা কইর্যা খাতো। কুনও কারণে যিদি আসতে না পারত তো কাহুকে দিইয়্যা পাঠিয়্যা দিত। কিন্তু আজ আর সেডা হওয়ার লয়। আজ তাকে এ্যাক প্যাট খিদ্যা লইয়্যা ভুঁই চাষ করতি হবে। বাড়িতে জুয়ান ব্যাটারা থাকলেও কেহু আসবে না। বুড়া বাপডা খাতে পালো কি পালো না কেহু কুনু দিন খোঁজ লিইয়্যা দ্যাখে না।...."
"জামিন মিয়া, ও জামিন মিয়া...."
"কে গো?" জামিন মিয়া উঠে দাঁড়ালো।
"আমি গো, নির্মল মাজি।" কাছের কলাবাগান থেকে উত্তর এল।
"ও, নির্মল মাজি!"
"হ্যাঁ।"
"কী হলো, বুলো।"
"বুলছি, ভাত খাবা নাকি? খালে আসো। ম্যালা ভাত আছে।"
"তা খালে হতো।"
"আসো তাহিলে।"
"কী ভাত? বাসি না গরম?"
"বাসি। খাবা কি? খালে চলে আসো।"
বলামাত্র জামিন মিয়া চলে গিয়ে হাত, মুখ ধুয়ে বসে গেল," দিবা তো দ্যাও তাহিলে,খাই!"
নির্মল মাজি নিজে অর্ধেক আর জামিন মিয়াকে অর্ধেক ভাত দিল। ভাতগুলো খেয়ে দু' জনেরই ক্ষুধা নিবৃত্ত হল। শান্ত মনে তারা এবার নিজ নিজ কাজ করতে পারবে। সাদা মনের এই সব মানুষগুলো চিরকালই আমার নমস্য।
--------------------------------------
উম্মেসা খাতুন
গ্রাম-দেবীপুর, পোস্ট:-মদনপুর,
থানা-দৌলতাবাদ,জেলা-মুর্শিদাবাদ।