Click the image to explore all Offers

অণুগল্প ।। এন্ডির ভাবনা ।। বৈজয়ন্ত শ্রীমানী


          



সেদিন সাত সকালে বাজারে গিয়ে সব্জীর আগুন দাম দেখে মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠল এন্ডির। কিপটে প্রকৃতির সে। মাসী-বোনপোর সংসার। ছোট থাকতেই মা কে হারিয়ে মাসির কাছে মানুষ এন্ডি। মাসী তাকে লেখাপড়া শিখিয়েছে। নিজের ছেলের মতই মানুষ করেছে। কপালে চাকুরি নেই। ২০০০সালের বন্যায় তখন  এন্ডি ঘর ছাড়া সেই সময় নাকি তার নিয়োগ পত্র পোস্ট অফিসে এসে পড়ে থেকে ফেরত চলে যায়। পরে ও যখন জানতে পারে তখন করার কিছুই ছিলনা। মনে ধাক্কা খেয়ে এন্ডি নিজেকে ক্রমেই গুটিয়ে নেয় বন্ধু বান্ধব-আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে। মাসীর ফ্যামিলি পেনশন আর নিজের এল.আই.সি. এজেন্সি থেকে টুকটাক রোজকারে সংসার গড়িয়ে গড়িয়ে চলে যায়। সকাল বেলায় ছাতুর সরবত খায় তারপর চিঁড়ে সেদ্ধ গলাধকরণ করে। দুপুরে ডাল- ভাত- আলু সেদ্ধ আর বাগানে লাগান লাউ পাতার ঝোল রোজকার মেনু। ঘর কন্যার কাজ নিজে হাতেই সামলায়। দুপুরের খেয়ে লম্বা ঘুম সেই ভরসন্ধ্যা অবধি । বাজার কালেভবে যায়। কিন্তু সেদিন গোল পাকাল একটা ফোন। ওর দূর সম্পর্কের দাদার ফোন। দুপুরে আসছে। খাওয়া দাওয়া করবে তারপর রাত্রে বাড়ি ফিরে যাবে। দীর্ঘ দিন কোন আত্মীয় আসেনি বা খোঁজ খবর নেয়নি। দাদা আসছে তাই বুকটা একটু দুরু দুরু করে উঠল তার। দাদাকে তো আর লাউ পাতার ঝোল খাওয়ান যায় না। তাই অগত্যা বাজারে যেতেই হল তাকে। অনেক দিন বাদে বাজারে গেল। বাজারের দামেরও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বর্ষার শেষ দিক তখন। বাজারে ইলিশ আছে। দুই দেশের। ওদেশেরটার আগুন দাম সাধ্যের বাইরে। তাই দেশেরটা অনেক দর দস্তুর করে ৭০০ গ্রামের একটা গোটা ব্যাগে ঢোকাল এন্ডি। মাছ তো নয় হল । কিন্তু সব্জী ! তার তো আগুন দাম। সবই পঞ্চাশের ওপরে কেজি পিছু দাম। মেজাজ হারিয়ে বাজারিকে ধমকায় এন্ডি- ব্যবসা করছ না ডাকাতি করছ, এত দাম কি করে হয়? ঝাঁঝাল সুরে উত্তর এল মশায় জানেন না এবছর খুব বৃষ্টি হয়েছে, সব্জী ক্ষেত জলের তলায়। সাপ্লাই নেই। দাম বাড়বে না তো কমবে। কিনে খেতে হবে না আপনাকে পাতলা হন তো এখান থেকে। বাজারির কাছে শেষ কালে অপমানিত হতে হল লজ্জার ব্যাপার। ভাবতে ভাবতে বাড়ি ফেরে এন্ডি। সব্জী যে সেদিন সে কেনেনি তা নয় তবে দামের ব্যপারে  একটু মনের ভেতর খুঁত খুঁতানি নিয়ে বাজার থেকে বাড়ি ফিরল সেদিন। দাদাকে আপ্যায়নে সেদিন কোন ত্রুটি রাখেনি সে। দাদা সন্ধ্যা বেলায় চলে যেতেই ঝপ করে অখণ্ড নীরবতা যেন গ্রাস করল যেন বাড়িকে। নানা চিন্তা তার মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল। ভাবতে লাগল ভাগ্যিস সংসার পাতিনি। খরচের ঠ্যালা সামলাতে পারতাম না। মাঝে মাঝে মাসি এন্ডিকে বলে- বে কর বাবা...বে কর। আমিইবা আর ক দিন!  বয়েস হয়েছে। তারপর তোকে কে দেখবে? চুপচাপ শুনে যায় ও কোন মন্তব্য করে না। ভরা যৌবন আর নেই। চুলে পাক ধরেছে। এই বয়েসে এন্ডির মন চায়না বিয়ের পিঁড়িতে বসতে। বউ বেগরবাই করলেই মুস্কিল। কুড়িয়ে বাঁশ নেওয়ার কোন মানে আছে? মনকে প্রশ্ন করে এন্ডি। দু একজন বোঝাতে গিয়েছিল বিয়ের উপকারিতা নিয়ে। বেকার চেষ্টা করেছিল তারা। হরিদ্বার থেকে সেদিন বন্ধু তরুণ ফোন করে বলল- মাসীকে নিয়ে চলে আয়। হরির আশ্রয়ে ভাল থাকবি। আমি তোদেরকে দেখব আমার ছেলে দেখবে।আমাদের টাকা পয়সার নমিনি করে দিয়ে যাবি। সেলাই জানা পাত্রীর খোঁজ এনে দিলাম, তোর মাসি কায়স্থ নয় বলে বাতিল করে দিল। বিয়ে দিল না তোর সাথে। এখনকার দিনে কেউ কি জাত পাত মানে? মাস গেলে সংসারে নয় নয় করে পাঁচ হাজারটাকা যোগান দিতে পারত। সেটাই বা কম কি এ বাজারে?  এক মনে শুনে যায় এন্ডি। বুড়ো বয়সে দায়িত্ব নিতে ভয় লাগে এন্ডির। ফোনে বলে ওঠে সে  –এই বেশ ভালো আছি। আদ্দেক জীবন তো  কেটে গ্যাছে বাকিটাও কেটে যাবে। জীবন তো ক্ষণস্থায়ী ।

                            ----------------- 


baijoyanta srimani

kantalpara
naihati
north 24 patganas
ph...9830053650

-----------------




Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.