সৌম্য ছোটবেলা থেকেই আবেগপ্রবণ। বন্ধুদের, পাড়া-প্রতিবেশীদের আপদে-বিপদে সে সবার আগে পৌঁছে যেত। নিজের পকেটে যা থাকতো অকাতরে অপরের জন্য উৎসর্গ করতে পিছপা হতো না।
প্রতিবছর সৌম্যর উদ্যোগে ক্লাবে হত রক্তদান উৎসব। মানুষকে উৎসাহিত করতো রক্ত দেওয়ার জন্য ।তারই নিরলস প্রচেষ্টায় এবছর রক্তদান উৎসবের সাথে যুক্ত হলো অঙ্গদান ও দেহ দান অঙ্গীকার কর্মসূচি। অঙ্গদান দেহদান অঙ্গীকার পত্রে স্বাক্ষর করলো বত্রিশ জন বিভিন্ন বয়সের মানুষ জন । এখানেও অঙ্গীকার দাতার নামের তালিকায় সৌম্য এক নম্বরে।
সৌম্য সব সময় বলতো মৃত্যুর পর অঙ্গ দান করা মহৎ কাজের অন্যতম। অন্ধ মানুষ চক্ষু পাবে, নতুন করে সে জগতকে দেখতে পাবে ।অঙ্গহীন মানুষ অঙ্গ পেয়ে স্বাবলম্বী হবে ।হৃৎপিণ্ড পেয়ে মুমূর্ষু মানুষ প্রাণে বাঁচবে। তাই শুধু শুধু এই অমূল্য সম্পদ আগুনে ভস্মীভূত করার কোন মানে হয় না। তাই আমাদের মনে রাখতে হবে মৃত্যুর পর প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেন অসহায় মুমূর্ষু মানুষের স্বার্থে উৎসর্গ করা হয় ।এই দেহটা যেন চিকিৎসাবিজ্ঞানের কাজে লাগে।
নিজের কাজ উপেক্ষা করে কত মুমূর্ষু রোগীর প্রাণ বাঁচাতে, তাদের পাশে বিনিদ্র রাত কাটিয়েছে তার ইয়াত্তা নেই।
এমনি এক কুয়াশার চাদরে ঢাকা রাতে, মোটর বাইক নিয়ে ব্লাড ব্যাংক থেকে মুমূর্ষু রোগীর জন্য রক্ত নিয়ে ফিরছিল সৌম্য, জমাট কুয়াশায় গাড়ির হেডলাইটে রাস্তা বুঝতে পারছিল না। অতি সন্তর্পনে আস্তে- আস্তে গাড়ি চালিয়ে আসছিল, কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই অপর দিক থেকে আসা দৈত্য কার একটি লরি তাকে পিষে দিয়ে চলে গেল । একটা মানবিক মুখ অকালে ঝরে গেল। সৌম্যর করা অঙ্গীকার মত তার বাবা-মা আত্মীয়-স্বজনরা, তার চোখ, অঙ্গ সহ দেহদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলেন। হাজার জনস্রোতের বেড়া ভেঙে অশ্রুসিক্ত নয়নে সকলে তাকে বিদায় জানালো। সাদা ফুলের বিছানায় সৌম্য বিজয়ী বীরের মতো চির শান্তির দেশে পাড়ি দিল। সৌম্য রা মরে না।তারা চির অমর।মানুষের হৃদয়ে জেগে থাকে চিরন্তন। অনির্বাণ দীপশিখা প্রজ্জ্বলিত থাকে মরমী মানুষের মনের মণিকোঠায়।
----------------------
অশোক দাশ
ভোজান, রসপুর ,হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
মোবাইল নম্বর-৮৩৪৮৭২৫৩৩৩