'ভেনাস' - পাম্প কোম্পানির সুপারভাইজার মধুবাবু তাঁর বস এ কে আগরওয়াল-কে খুবই তৈলমর্দন করে চলেন বলে সামনে সকলে ম্যানেজারবাবু বললেও, 'গ্যাঁড়া সোনা' আর 'ছোটো অজয়' ছাড়া বাকি সকলেই আড়ালে তাকে বলে 'ফ্ল্যাটারার বাবু'। গ্যাঁড়া সোনা এ কে আগরওয়ালের খুব কাছের লোক। অনেক দু'নম্বরি কাজ করে এসে তাঁর হাতে টাকা গুঁজে দেয়। তবে এ কে আগরওয়াল যাকে দেখতে পারে না তার অবস্থা এ-কোম্পানিতে নিতান্তই
করুণ হতে বাধ্য। তাই মধুবাবুর কোনো দোষ দেখে না গ্যাঁড়া সোনা। ছোটো অজয় অবশ্য কাউকে তেল দিয়ে চলে না। কাজের লোক সে, মেশিন তার হাতে কথা বলে। প্রোডাকশনের স্বার্থে আগরওয়ালের ভাষাও তার কাছে বেশ নরম হয়ে যায়। মধুবাবু তার বাড়িতে ভাড়া থাকে তাই সে তার কোনো দোষ দেখতে চায় না।
মধুবাবু ওরফে ফ্ল্যাটারার বাবু মদ খেতে ওস্তাদ। পর পর বেশ কয়েকটা বিশ্বকর্মা পুজোয় দেখা গেল ওয়ারকার্-রা মদ খেয়ে বেহুঁশ কিন্তু মধুবাবু দিব্যি হেঁটে গল্প-গুজব করেই চলেছে। তাই বলে সে যে কম খেয়েছে তাও নয়। রীতিমতো চ্যালেঞ্জ করে গ্লাসের পর গ্লাস উড়িয়ে দিয়েছে, কিছুই হয়নি তার।
মধুবাবুর এই চ্যালেঞ্জটা এই প্রথম সরাসরি অ্যাকসেপ্ট করল সিনিয়র ওয়ার্কার পশুপতি রায়। বলল, " এবার দেখব ম্যানেজারবাবু, কেমন করে সোজা হেঁটে বেড়ান !"
সেবার বিশ্বকর্মা পুজোয় ফল-প্রসাদ খাওয়ার পর একইভাবে মদের আসর বসল। পশুপতি রায় মধুবাবুর সামনে বিয়ারের একটা বড়ো বোতল খুলে বলল, " আজ এই বোতলটা পুরো শেষ করে দেখান তো ?"
মধুবাবু হেসে বিদ্রূপাত্মক ভাষায় বলে উঠল, " ভদকা-রাম গেল তল, / চ্যালেঞ্জ জানায় চিরেতার জল !"
বলেই বোতলটা ধরে ঢকঢক করে খেয়ে ফেলল।
আধঘণ্টা পরে সুকুমার এসে চেঁচিয়ে বলল, " অ্যাই পশুপতিদা, কী এমন খাওয়ালে গো যে ফ্ল্যাটারারবাবু একদম ফ্ল্যাট হয়ে গেল !"
চোখ নাচিয়ে হেসে পশুপতি রায় বলল, "কেন ? চিরেতার জল !"
----------------
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২১
পীযূষ কান্তি সরকার
১/১, কুচিল ঘোষাল লেন কদমতলা, হাওড়া -১
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।