মাধবী ত্রিবেণীর ঘাটে,মা গঙ্গার কাছে বসে।এই ঘাটের পাশে শ্মশান।এখানেই তার নশ্বর দেহ পোড়ানো হয়েছে কিছুক্ষণ আগে।আত্মীয়স্বজনের কান্নার রেশ চলছে তখনও।সে যে সবার খুব প্রিয় ছিল।সবাইকে কেমন মায়ায় বেঁধে রাখতো।'মায়া' শব্দটা মনে আসতেই প্রথমে একটা দীর্ঘশ্বাস,তারপরেই তার মুখে একটা স্নিগ্ধ হাসি ফুটে উঠল।ঘাট থেকে অনতিদূরে প্রিয় মানুষগুলোকে দেখে মনে পড়লো,তাকে এবার এই জগতের সমস্ত মায়া ত্যাগ করে অনেক দূরের যাত্রা শুরু করতে হবে।ছেলেমেয়েরা কষ্ট পেলেও তারা নিজের নিজের জীবন ও সংসার নিয়ে ব্যস্ত। মাধবীর চলে যাওয়াতে তারা সেরকম একাকীত্ব বোধ করবেনা।একা হয়ে যাবে ওদের বাবা,মাধবীর স্বামী কেশব।
বুকের মধ্যে তার একটু কষ্ট দানা বাঁধছে কি,মানুষটার জন্য? কিন্তু সে তো এখন এসবের উর্ধ্বে।আর মায়া কাটাতে সে তো ছোট থেকেই পারদর্শী।সেই যে যখন তার ছোট ভাই জন্মাল,তখন নিজের ভাগের সব আদর ভালবাসা,সব খেলনা,পুতুল আর মা-বাবার কোল-এসবের মায়া কাটানো কি খুব সোজা ছিল? তারপর বিয়ের পর বাপেরবাড়ির মায়া কাটানো,শ্বশুরবাড়ি এসে নিজের সব পছন্দের জিনিসের মায়া কাটানো,সব কিছু সবার সুখের জন্য এতদিন তো ছেড়েই এসেছে সে।কই তখন তো এত কষ্ট হয়নি তার?তবে কি এসব ত্যাগের মধ্যেও একরকম আত্মসুখ ছিল,নিজের মায়ায় সবাইকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে রাখার তৃপ্তি ছিল?সত্যিই প্রিয়জনদের জন্য কষ্ট হচ্ছে নাকি নিজের বানানো মায়ার সংসার ছেড়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে,সে বুঝে উঠতে পারলনা।
ততক্ষণে ওপারের ডাক এসে গেছে।এবার যে তাকে যেতেই হবে।সব মায়ার বাধন ছিঁড়ে যেতে হবে। মিলিয়ে গেল তার ছায়াশরীরটা।
ছবিঋণ- ইন্টারনেট।
-----------------------------------
নামঃ- ঈশিতা পাল
ঠিকানা ঃ-ব্যাঙ্গালোর,কর্ণাটক,ভারত।