Click the image to explore all Offers

ভৌতিক গল্প ।। তাহলে কে সে! ।। গোবিন্দ মোদক






বছর দশেক পর দেশের বাড়ি ফিরছি। মনে একটা অদ্ভুত টান অনুভব করছি। গন্তব্য স্টেশন যতো এগিয়ে আসছে ততোই যেন মনের মধ্যে একটা অন্যরকম অনুভূতি। সেই অনুভূতিকে গায়ে মেখে যখন স্টেশনে এসে নামলাম তখন রাতের ঘড়ি আটটার ঘর পেরিয়ে গেছে। স্টেশনে নামতেই একটা জোরদার হাঁক শুনতে পেলাম – আরে গৌর যে! গৌর! ভালো আছো? কতোদিন পর এলে! 

– আজ্ঞে হ্যাঁ, ভালো আছি কাকা। আপনাদের খবর সব ভালো তো? 

– ভালো। আচ্ছা, পরে কথা হবে। তুমি এখন যাও, বাড়ি যাও, বিশ্রাম নাও।

পাড়াতুতো কাকার সঙ্গে কথা শেষ করে স্টেশনের বাইরে আসতেই কোথা থেকে কাশেম চাচা ছুটে এসে একেবারে আমাকে জড়িয়ে ধরল – অনেকদিন পরে দেশে এলি রে বাপ আমার!

আমি বললাম – হ্যাঁ চাচা। তোমাদের সব খবর ভালো তো! 

এভাবে বিভিন্নজনের কাছে কুশলাদি আদানপ্রদান করে নিয়ে এসে পৌঁছলাম হরিদার চায়ের দোকানে। শীতের রাত। খুব একটা লোকজন নেই। আমাকে চা দিতে বলতেই হরিদা ভালো করে আমাকে দেখে নিয়ে বলল – গৌর যে! এতোদিন পর দেশের মাটিকে মনে পড়লো বুঝি! আহা এসো, বসো। চা খাও। 

কিছুক্ষণ পর জায়গাটা ফাঁকা হয়ে গেল। একজন চাদরধারী বয়স্ক মানুষ এসে বসলো। তারপর ঘড়ঘড়ে গলায় বললো – ভালো আছো তো! অনেকদিন তোমাকে দেখিনা! 

– হ্যাঁ, উত্তম কাকা। অনেকদিন পর দেশে ফিরলাম।

– ঠিক আছে, আমার জন্য এক কাপ চা বলো দেখি। আমি উত্তমকাকার জন্য এক কাপ চায়ের অর্ডার দিলাম। তারপর চা খেতে খেতে গল্প চললো। উত্তমকাকাকে বললাম – তোমার গলার স্বর এমন হলো কেন! 

– আরে বাবা, বয়স হলে গলার স্বর এর চেয়ে ভাল হয়? 

– তাহলেও কেমন যেন লাগছে! আর একটা জিনিস লক্ষ্য করছি, যতদূর সম্ভব তোমার কপালে কাটা দাগটা ছিল না।

– একদম ঠিক বলেছ বাবা। কাটা দাগ আগে ছিল না। কিন্তু এখন এটা আমার সঙ্গের সাথী হয়েছে।  সারা জীবন এইটাই আমাকে বইতে হবে। 

– তার মানে? 

– হ্যাঁ বাবা। রেললাইনে পড়ে গিয়েছিলাম। কপালটা সাংঘাতিক রকম কেটে গিয়েছে। যাইহোক আমার কথা ছাড়ো। তুমি অনেকদিন পরে দেশে ফিরলে। যাও, বাড়ি যাও। বাড়িতে সবাই তোমার অপেক্ষায়। …. ও হ্যাঁ, আর একটা কথা। এই নাও।
এই বলে একটা হাতঘড়ি আর কিছু টাকা আমার হাতে গুঁজে দিল উত্তমকাকা। 

– এসব কি! কি হবে! 

– আমার হয়ে তোমাকে একটা কাজ করতে হবে। বাপীকে মনে আছে তো? 

– হ্যাঁ হ্যাঁ মনে আছে কাকা। তোমার সেজো ছেলে।

– হ্যাঁ, এগুলো বাপীকে দিয়ে বলবে বাবা পাঠিয়েছে।

– আমি কেন, তুমিই তো দিতে পারতে! আমি কেন দেবো! 

– ভয় নেই। অন্য কোন কারণ নেই। আসলে আমি এই ট্রেন ধরে অনেকদূর যাবো। কাজেই এ দু'টো আর পৌঁছে দেওয়া হবে না। তাই তুমি একটু দিয়ে দিও। তবে তাড়া নেই। তুমি কাল সকালে দিলেই হবে। আজ রাতে না গেলেও চলবে। 

– ঠিক আছে, কাল সকালেই দিতে যাবো। আচ্ছা, সাবধানে যেও কাকা।

– আচ্ছা বাবা। তুমি ভালো থেকো। 

আমি ঘড়ি আর টাকাটা সাবধানে রেখে আমার ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে হাঁটতে লাগলাম। বাড়ির দিকে যেতে যেতে ভাবলাম বাপীদের বাড়িটা বরং ঘুরেই যাই। এই ভেবে বাপীদের বাড়ির রাস্তা ধরলাম। বাপীদের বাড়ির সামনে গিয়ে দেখি একটু লোকজনের ভীড়। ভীড় কেন! ব্যাপারটা আমার ঠিক বোধগম্য হলো না। যাইহোক বাপীর নাম ধরে ডাকতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর বাপী বেরিয়ে এলো। – এ কি! তোর মাথা ন্যাড়া কেন! 

– ও, গৌরদা তুমি! তুমি তো অনেক দিন পর দেশে ফিরলে দাদা। তুমি তো জানো না আমার বাবা মারা গেছে। শ্রাদ্ধশান্তি চুকিয়ে উঠলাম। আজ নিয়মভঙ্গের ভোজ চলছে। 

– তার মানে! 

– তার মানে যা তাই! বাবা মারা গেছেন! 

– সে কী রে! উত্তম কাকা মারা গেছেন! বলিস কিরে!

– হ্যাঁ ট্রেন এক্সিডেন্টে মারা গেছেন।

– তাহলে এই ঘড়িটা! আর এই টাকাটা!

– মানে! এই ঘড়িটা তো আমার মনে হচ্ছে!

– হ্যাঁ, এই ঘড়ি আর এই টাকা উত্তমকাকা আমার হাতে দিয়ে বলল বাপীকে দিস। 

– সে কী! কী বলছো তুমি! বাবার সঙ্গে তোমার কী করে দেখা হবে! এ তো হতে পারে না! বাবা মারা গেছে আজ দু সপ্তাহ হয়ে গেল! 

– আমিও তো তাই ভাবছি! জলজ্যান্ত লোকটার সঙ্গে আমি এইমাত্র চা খেয়ে আসলাম হরিদার দোকানে বসে! সে আমাকে অনুরোধ করে বলল যে সে ট্রেনে করে অনেকদূর যাবে! কাজেই ঘড়ি আর টাকাটা যেন বাপীকে পৌঁছে দিই! 

– কি বলছ গো গৌরদা! 

– ঠিকই বলছি রে বাপী! আমি তো অবাক হচ্ছি তোর কাছে উত্তমকাকার মরার খবর শুনে! আচ্ছা, কি হয়েছিল বল তো! 

– যেদিন বাবা ট্রেন এক্সিডেন্টে মারা যায়, সেদিন বাবা আমার কাছ থেকে 2000 টাকা আর আমার এই ঘড়িটা নিয়েছিল। বলেছিল একদিন পর ফেরত দেবে। কিন্তু সে অবকাশ আর হয়নি! তার আগেই… বাপীর কণ্ঠস্বর আর্দ্র হয়ে আসে।

আমি বাপীকে শান্তনা দিয়ে বলি – তাই বুঝি আজ উত্তমকাকা আমার হাত দিয়ে তোকে এগুলো পাঠালো। … কিন্তু তা না হয় বুঝলাম, তাহলে আমি যার সঙ্গে কথাবার্তা বললাম, একসঙ্গে চা খেলাম, সে কী আর সে কোথা থেকে এলো! আর কিভাবেই বা ঘড়ি আর টাকাটা দিলো!

এ প্রশ্নের উত্তর আজও মেলেনি।
-------------------------
 

 
প্রেরক: গোবিন্দ মোদক। 
সম্পাদক: কথা কোলাজ সাহিত্য পত্রিকা। 
রাধানগর, ডাক- ঘূর্ণি, কৃষ্ণনগর, নদিয়া। 
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত, ডাকসূচক - 741103
WhatsApp/ফোন: 8653395807/ 7044404333

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.