Click the image to explore all Offers

গল্প ।। বিয়ের প্রস্তাব ।। রূদ্রাণী মিশ্র


 

 


হ‍্যাঁ হ‍্যাঁ ঠিকই পড়েছেন, বিয়ের প্রস্তাব। বেশিরভাগ লোকজনই জানে, অনামিকা চৌধুরী সিঙ্গেল পেরেন্টিং করে মেয়ে রুকুকে বড়ো করছে। তাই কিছু লোকজনের তাদের চিন্তায় রাতের ঘুম ও ঠিক ঠাক হয় না। সেজন্য অবশ্য রুকু ভাবতেই পারে, 'আমার মায়ের বিয়ে' বা 'মায়ের পাত্র' বা নিদেনপক্ষে :মায়ের বয়ফ্রেন্ড', কিন্তু এসব তো ভাবেই না। উল্টে "সি ইজ আ কুইন উইথআউট কিং"(তিনি দেশি মায়ের বিদেশি বাচ্ছা) এসব বলে বেরোয়। তা সেক্ষেত্রে অবশ্য পাত্রপক্ষ ও কোনরকম ধানাইপানাই না করে সোজাসুজি অনামিকা চৌধুরীকে জানায় যে তারা তার 'পাণিপ্রার্থী'। সেরকম দুটো গপ্পো বলি। অনামিকা আমার খুব কাছের বন্ধু বলেই, গল্পগুলো জানতে পেরেছি।


প্রথমেই জানাই, এই দুটি বিয়ের প্রস্তাব ই এসেছে, দুটি সাতাশ কি আঠাশ বছরের 'ছোকরা' থেকে। প্রথমে যে ছোকরা টি প্রস্তাব দিয়েছিল, তার 'আকাশচুম্বী 'জ্ঞান। মাঝে মাঝেই তার জ্ঞানের পরিচয় অনামিকা পেয়ে থাকে। আর তাই অনামিকার খুব জানতে ইচ্ছে করে সে কোন রেশনের চাল খায়, তাহলে অনামিকা ও রুকু কে খাওয়াতো আর কি। তা যা হোক, সে একদিন অনামিকা কে জানালো, তাকে বিয়ের জন্য সেই পাত্রটি 'সবকিছু' করতে রাজি। আমাদের অনি (অনামিকার ডাক নাম) সাতের ঘরে জন্মেছে, সে নয়ের ঘরে, তাই বিয়ের পর অনি যখন বুড়ি হয়ে বাহ‍্যে করে বিছানা ভরিয়ে দেবে, তিনি সেসব ও হাসিমুখে পরিস্কার করা থেকে শুরু করে অনির সব সমস্যার একটাই 'চাবি' হয়ে তাকে সবরকম সার্ভিস দেবেন বলে অনিকে তিনি বোঝান। অনি সব কাজের ফাঁকে একটু সাহিত্য চর্চা করে, তাই তার সেই কবিতা, সাহিত্য প্রীতির জন্য ও তিনি তার পার্টির আনন্দ ত‍্যাগ করে অনির কাছে বসে, কবিতা, গল্প, উপন্যাস নিয়ে আলোচনা করবেন (তা তার জন্য যতই কষ্টকর হোক না কেন) । তিনি বিদেশ ভ্রমণ ছেড়ে শুধুমাত্র অনির জন্য কবিতা আবৃত্তি গান নিয়ে মেতে থাকবেন।, শুধু মাত্র অনির জন্য শান্তিনিকেতনে যাবেন। সেখানে তিনি বাঙলা না জানলে ও বুঝলেও রবীন্দ্রনাথের কবিতা শুনবেন। অনির শুধু মনে হয়, বাঙলা জানা টা কি খুব আউটডেটেড? তারপর তার যখন জীবন উপভোগের সময় আসবে, আমাদের অনি তখন প্রচুর রোগের অধিকারীনি হয়ে কষ্ট পাবে। কিন্তু রুকু  তো তখন সামনে থাকবে না। সে তার ভবিষ্যত গড়ার লক্ষ্যে ছুটবে। তখন সে অনির প্রতি নজর রাখবে। রুকু খুব ইন্টেলিজেন্ট তাই তার গর্ব হবে, রুকূর 'বাবা' হয়ে। রুকু কে মানসিক ভাবে তিনি সব কিছুতে সমর্থন করবেন। বাবা, মেয়ের এক অনবদ্য বন্ধন তৈরী হবে। অনি ভাবে, তিনি যদি একবার টিও জানতেন, রুকু কি প্রকারের ফাজিল যন্তর, তাহলে তিনি তার দুঃস্বপ্নে ও  এসব ভাবতেন না, জেগে স্বপ্ন তো দূরস্থান। তিনি অনেক ভাবে বোঝান অনিকে, তার মনের লৌহকপাট যেন সে খুলে দেয়। মনের বাগানে প্রজাপতির প্রবেশাধিকার দেয়। তাহলে আদপে তার ই ভালো হবে। পাত্রটির তো সব ক্ষতিই ক্ষতি। তাও তিনি এই অভাগিনীর জন্য এত্তো ত‍্যাগ করতে প্রস্তুত। তিনি তার এই ভালোবাসার জন্য তিনি এই দামগুলি দিতে সদা প্রস্তুত। 


কিন্তু তিনি তো আসল ব‍্যাপার জানেন না। প্রথমত, প্রজাপতি এলে শুঁয়োপোকা ও আসবে। অনি শুঁয়োপোকা বড্ডো ভয় পায়, এই জন্য তাকে ইন্জেকশন ও নিতে হয়েছিল ছোটবেলায়। তাই 'কারার ঐ লৌহকপাট' সে জীবনে ও খুলবে না।  তার সেই ছোট্ট 'পাণিপ্রার্থী' টি অবশ্য হাল ছাড়েননি। তবে ছোকরাটি জানে না, যে পাপীদের সে ঘেন্না করে। এই অনামিকা চৌধুরী সেদিক দিয়ে 'পাপী নং 1'


এবার বলি দ্বিতীয় পাণিপ্রার্থীর কথা। তিনি প্রথমের থেকে ১৮০° বিপরীতে। তিনি ম‍্যান্সেজারে এসে বললেন, "একটা কথা বলবো?" অনি তার টাইমপাসের জন্য ম‍্যান্সেজারে কে কি লিখলো, সেগুলো পড়ে, আর হেসে হেসে টাইমপাস করে। তখন এই প্রশ্ন দেখে কৌতুহলী হয়ে বললো,সে লিখলো 'বলুন'। তিনি বললেন, "নাহ থাক"। অনি কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললো, "হ‍্যাঁ কুরুচিপূর্ণ কিছু হলে, "থাক"। তিনি বেশ জোরের সঙ্গে জানালেন,"না তা নয়"। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, অনিরর বয়স কত? অনি থাকে কোথায়? ইত্যাদি ইত্যাদি।  সেই সঙ্গে জানালেন যে এই যে অনি সিঙ্গেল পেরেন্টিং করে মেয়েকে বড়ো করছে,, তা জীবনের পথে কতটা শক্ত কাজ। অনি কিছুক্ষণ ভাবলো, সত্যিই কি খুব শক্ত কাজ? সারাদিন মা মেয়ের হুল্লোড় করেই তো কেটে যায়। তাও সে বললো, "নাহ, সব ই দৃষ্টিভঙ্গি। জীবনকে আমার তো শক্ত লাগে না"। এই শুনে আবার তিনি জিজ্ঞেস করলেন, বয়স কত? থাকেন কোথায়?  অনি শুনে মানে ঐ পড়ে বলল, "থাকি তো এঁদো গায়ে, ঐসব গ্ৰামের নাম আপনি কোনও দিন শোনেননি"। তিনি প্রতিবাদ করে বললেন, ফেসবুকে লেখা আছে, 'কলকাতা'? মনে মনে প্রমাদ গুনে সে স্থির করলো, ওটা বদলাতে হবে। তারপর বললো, "ওটা লিখতে হয়, নাহলে কেউ পাত্তা দেয় না"। সেই সঙ্গে জানালো "আমি একদম গ্ৰামের অবলা" যদিও পাড়ায় অনিকে সবাই দজ্জাল মহিলা আখ‍্যায়িত করে। তাও সে বিনয়ী হয়ে এই অবলা, মহিলা বলে চিত্তসুখ খুঁজে পায়। তারপর তিনি তার বয়স জানার জন্য উদগ্ৰীব হয়ে উঠে বললেন, "আমিই বোকা, নিজের আঠাশ বছর বলে দিলাম, আর আপনি চেপে গেলেন"। সে তখন মহাশয়কে প্রকৃত বয়স জানালো। ভদ্রলোক বা ছোকরাটি বোধহয় তখন অন্য কারো চোখের জল মুছিয়ে দিচ্ছিল (ভার্চুয়ালি) কিছু ক্ষণ পর ঘুরে টুরে এসে জানালেন, "বয়স একটি সংখ্যা"। বিশ্বাস করুন, মেসেজের পপ আপটি দেখে আনন্দে অনির চোখে  জল এসে গেছিল। অনি  ও তার সব সুন্দরী দিদিদের ও সুন্দরী বান্ধবী দের এই কথাটাই বলে।  অনির ভীষণ ভালো লাগে প্রত‍্যোকটি মহিলার জীবনযুদ্ধ। সে জানে একটি পুরুষ থেকে একটি মহিলার যুদ্ধ অনেকাংশে শক্ত। কারণ প্রতিমূহুর্তে তাদের নিজেকে প্রমাণ করতে হয়, যে সেও পারে। তাই তার  এই নারী ও মহিলাদের প্রতি প্রেম দেখে তার এক পঁচাত্তর বছর বয়সী পানিপ্রার্থী একদিন তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, "আচ্ছা অনামিকা তুমি কি লেসবিয়ান?" যাই হোক সেসব কথা, মেসেজ টি দেখে আর ওমুখো হয়নি অনি। 


তাই বলছি, মোটা দাগে জীবনে কিছুই দাগাতে যাবেন না। আর এটা ভাববার কারণ নেই, যে অনামিকা চৌধুরী ' নিঃসঙ্গ 'মহিলা বলে এসব তার সাথে হচ্ছে। অনামিকার চেনা জানা এইরকম জ্বালাতন পুরুষরাও 'ফেস' করেন।, তাকে একজন এইরকম নিঃসঙ্গ পুরুষ দুঃখ করে  বলেছিলেন। "আরে বলো না, অনি , মহিলাদের অত‍্যাচারে, ছেলেকে স্কুল থেকে আনতে যেতাম না, রিকশার ব‍্যবস্থা করে দিয়েছিলাম"। এসব কথা শুনে অনির এক পিসতুতো ভাই বলে, "শোন দিদি, সারাজীবন মা বাবা সব কিছু শিখিয়ে দেয় তো, তাই মহিলাদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় ভারতীয় পুরুষদের সেটা আর সারাজীবনে শেখা হয়ে ওঠে না"।


এসব শুনে মাঝে মাঝে রুকু বলে ওঠে, "ও মা গো ওওওওওও টুরু লাব"।

-------------------------------

রূদ্রাণী মিশ্র


😝😎

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.