Click the image to explore all Offers

গল্প ।। আর্তনাদ ।। অঙ্কিতা পাল

 

 আর্তনাদ 

 অঙ্কিতা পাল 



অমল ও শম্পার মেয়ে  নীলিমা এখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে, বয়স প্রায় ১৩ - ১৪ বছর বয়স হবে। অমল কোন রকমে রিকশা চালিয়ে ও শম্পা লোকের বাড়ি কাজ করে সংসার চালায়। বাড়িতে এই তিনজন ছাড়া আছে অমলের অসুস্থ মা ও তাদের ছোট ছেলে অরুণ, সে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। এত হাড় ভাঙ্গা কষ্টের পরেও তাদের পক্ষে সংসার চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না, তাই তারা মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল যে, নীলিমাকে শহরে কোন এক বাবুর বাড়িতে কাজে দেবে। এ ব্যাপারে অমলের আপত্তি থাকলেও সংসারে অভাব অনটনের জন্য কিছুই করার নেই তারা অসহায়। 
এর কিছুদিন পর ওরা চারজন একসাথে দুপুরে খেতে বসেছে, এমন সময় অমল মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে গম্ভীর গলায় বলে, দেখ মা তুই তো সেয়ানা হয়েছিস, আমাদের অবস্থাও ভালো  না, তাই অতনু রে কইলাম তোরে যেন কালে শহরে রেখে আসে। তুই কাল দিয়ে সেইখানেই থাকবি। মেয়ে চোখ ভরা জল বেজায় কষ্ট তবুও বুকে পাথর চাপা দিয়ে মাথা নেড়ে  সম্মতি প্রকাশ করে। 
পরদিন ভোরে ট্রেনেই নীলিমা অতনুর সাথে শহরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়............
অতনু হলো অমল দের গ্রামের দালাল, সে নাকি বহু ছেলেমেয়েদের শহরের নিয়ে কাজ দেয়। এই বিশ্বাস করে অমল ও শম্পা তাদের একমাত্র মেয়ে নীলিমাকে কাজে পাঠিয়ে দেয়।
এভাবে কেটে গেছে বেশ কয়েকটি দিন, কোন রকম খোঁজ খবর না পেয়ে একদিন সন্ধ্যাবেলা শম্পা অতনুর বাড়িতে হাজির হয়। অতনু তখন অনেকগুলি মহিলার সাথে অশ্লীল ভাবে নাচানাচি করছে, এই ঘটনা দেখে শম্পার চোখ দাঁড়িয়ে যায় তার মনে কেউ যেন কুঠার এর মত আঘাত করে সে তখন কৌতুহলী হয়ে প্রায় উচ্চস্বরে প্রশ্ন করে - আমার নীলিমা  কোথায়? কেমন আছে সে? 
অতনু মদ্যপ অবস্থায় দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে টলতে টলতে বলতে থাকে, কে নীলিমা, কোথায় গেল, হারিয়ে গেল, চলে গেল। দূর শালা উটকো ঝামেলা। তুই যা তো বলেই শম্পাকে এক ধাক্কায় মাটিতে ফেলে দেয়। তারপর চিৎকার করে বলতে থাকে, এ কে আছিস বের করে দে পার্টি থেকে এ ছোটলোক টা কে।
শম্পা কূলকিনারা না করে প্রচন্ড প্রাণের ভয়ে ছুটতে ছুটতে বাড়িতে এসে সমস্ত ঘটনা অমল কে খুলে বলে, অমল প্রচন্ড রেগে যায়।
পরের দিন ভোর বেলায় তারা শহরে দেওয়া ঠিকানায় পৌঁছে যায় এবং সেখানে স্থানীয় লোকজনদের কছে নীলিমার কোথায় জানতে চায়। কোন প্রকার খোঁজ না পেয়ে নিরাশ হয়ে বাড়ি ফিরে আসে। তারা মেয়ের খোঁজ না পেয়ে পাগলের মত এদিক ওদিক ছুটতে থাকে খবরের আশায়। বেশ কিছু মাস এভাবেই পার হয়ে যায়..........
একদিন খুব ভোরবেলা শম্পা যেন তাদের দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ পায়, সে তৎক্ষণাৎ দরজা খুলে দেখে একজন উলঙ্গ পাগলের মত নোংরা কেউ তাদের মাটির দাওয়ায়  মাথা গুঁজে বসে আছে। শম্পা ধীরে ধীরে তার কাছে গিয়ে প্রশ্ন করে, কেগা এত সকালে কি করতিছো? উত্তরে কাঁপা কাঁপা গলায় সে বলে, নিলু গো মা। কথাটি শুনে নীলিমার মা যেন মনে মনে শান্তি পায় কিন্তু মেয়ের এ অপরিচ্ছন্ন দশা দেখে সে তড়িঘড়ি নীলিমাকে ঘরে নিয়ে আসে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে জিজ্ঞেস করে, কি হয়েছে রে মা তোর? কত খুঁজেছি তোরে? নিলিমা ও তার মাকে শক্ত করে ধরে রাখে এবং অতি কষ্টে কার সাথে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনার কথা মাকে বলে আর কোলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।

মারা যাওয়ার পূর্বে লিমা যে ঘটনার বিবরণ দিয়েছিল তাহলে এই রূপ - অতনু তাকে শহরে নিয়ে যাওয়ার নাম করে একটি ঘরে হাত পা বেঁধে ফেলে রেখে দিয়েছিল। প্রায়শই কিছু লোক তাকে শারীরিক নির্যাতন করতো বারবার অনুরোধ করার পরেও তারা তাদের কাজ করতো। হে ভগবান কি নিষ্ঠুর; বাচ্চা মেয়েটির আর্তনাদ শুনবার মতো কেউ ছিলনা। একদিন একজন লোক মৃত ভেবে অজ্ঞান অবস্থায় মাঠের মাঝখানে ফেলে দেয়। সে অনেক কষ্ট করে অনেক বাধা অতিক্রম করে রাতের আধারে তার বাড়িতে পৌঁছায়।

মেয়ের মৃত্যু যন্ত্রণায় ক্ষিপ্ত হয়ে শম্পা পাগলের মত চিৎকার করতে থাকে এবং গ্রামের লোকজন জড়ো করে নীলিমার মৃতদেহ নিয়ে অতনুর বাড়িতে হাজির হয় ।  তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। 
--------------------

নাম - অঙ্কিতা পাল
ভাঙ্গড় দক্ষিণ ২৪পরগনা

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.