Click the image to explore all Offers

গল্প।। কুন্তী নদীর ধারে ।। তপন তরফদার


 

কুন্তী নদীর ধারে

তপন তরফদার

 

      সরকারি চাকরি বদলি রুখতে উমেদারি আমি পছন্দ করিনাস্বাভাবিক কারনেই যেখানেই বদলি করা হয় আমি চলে যাই নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে, জায়গার সঙ্গে পরিচয় হয় আমার ভালোই লাগে খন আমার আস্তানা হস্তিনাপুরের জঙ্গলের ভিতর কুন্তী নদীর ধারের পুরানো এক বাংলোয় শুনেছি এখানে হাতিদের বসবাস ছিল বলেই নাম হয়েছে হস্তীনাপুর নদীর নাম  কেন কুন্তী হয়েছে তা এখনো জানিনা

          এক সন্ধেবেলায় ঝুল বারান্দায় বসে আছিসামনে কুয়াশার চাদরে মোড়া  অমাবস্যার জঙ্গল,  জলের আওয়াজ। স্রোত বেশ বেগবান কানে ভেসে আসছে নদীর কুলকুল আওয়াজ ঘন্টা কয়েক আগে মুষলধারে  বৃষ্টি হয়েছে  এই কুন্তী নদীর গর্ভকোষ  বৃষ্টির জলকে সাগরে মেলায় আমরা অনেক ধরনের বনভূমির কথা জানি চিরহরিৎ বৃক্ষের গবনভূমি পর্ণমোচী বৃক্ষের বনভূমি ইত্যাদি এই অঞ্চলকে মোটামুটি চিরহরিৎ বনাঞ্চল বলা যায়।  কয়েকটি নিশাচর  প্রাণীর নৈশ অভিযানের আওয়াজ  আরও রহস্যের জাল ছড়িয়ে দিচ্ছে। এই  বাংলো  নিয়ে অনেক গাল গল্পের জাল ছড়িয়ে আছে বিশ্বাস অবিশ্বাস সর্বদাই ব্যক্তি অনুযায়ী নির্ভর করে। আমি ফরেস্ট অফিসার আমার ভয় পেলে চলবে না আমাকে প্রমাণ করতেই হবে এই বাংলোয়  ভয়ের  কিছুই নেই

               পাল বংশের জমিদারির  পোড়ো বাগান বাড়িটিকে সংস্কার করে ফরেস্ট বাংলো করা হয়েছে। জঙ্গলের ভিতর পোড়ো বাড়ি অসামাজিক কাজের উপযুক্ত জায়গা যাদের স্বার্থ আছে তারা এমন কিছু  করবে বা রটিয়ে দেবে যাতে ওই দিকে  যাতে কেউ না ঘেঁষে 

      গত পূর্ণিমার পূর্ণ চাঁদের মনোমোহিনী রূপ  দেখতে দেখতে আজ অমাবস্যার জঙ্গলের নদীর ঝংকার শুনছি  কাট গ্লাসে চুমুক দিয়ে উপভোগ করছি স্থান মাহাত্মকে বঙ্কিম চন্দ্রের কপাল কুন্ডলার সৃষ্টি এই অঞ্চলেই। সরকার বিভিন্ন পুরানো প্রাসাদকে এখন "হেরিটেজঘোষণা করছে সবাইকে খুশি করার জন্য সচেষ্ট বাংলোটা সারাই করা হয়ছে। চাকর-বাকরদের থাকার জন্য টিনের ঘর করা হয়েছে  কোনো স্থানীয় কাজের লোক রাতে এখানে থাকতে চায়না, থাকেও না  বর্তমানে হাগর মাহাতো নামের এক জন আদিবাসী কাজ করে জাতে লোধাও না সাঁওতালও না ওড়িয়া আর মেদনিপুরের মিশ্রনে "কুড়মি জাত" আমাকে ওর জাত নিয়ে ভাবলে চলবেনা ওর কাছ থেকেই নিজের সুখ স্বাচ্ছন্দটাও গন্ডায় আদায় করে নিতে হবে সারাদিন  গাধার মতো খাটে আজ ভূতচর্তুদশী অমাবস্যা তাড়াতাড়ি বাড়ি যাবে কারণ জিজ্ঞাসা করলে আকার ইঙ্গিতে অশরীরীর কথা বলে আমি মুচকি হেসে তুড়ি মেরে ওকে ছুটি দিয়েছি। রান্নাবান্না সব করে গেছে

      আমার নেশা হয়নি,নতুন বোতল খুলে বসেছি কাটগ্লাস এখনো শেষ হয়নি  পরিস্কার শুনতে পাচ্ছি সদর দরজার কড়া নাড়ছে হাগর হয়তো এসেছে হ্যারিকেন নিয়ে দরজা খুলে দেখি কেউ নেই। অন্ধকার আরো ঘন হয়েছে প্রায় এক ঘন্টা কেটে গেছে আবার দরজায় খটখট আওয়াজ এতো জোরে মনে হচ্ছে দরজা ভেঙেই ঘরে ঢুকবে এবার আমি আর ভুল করলাম না,প্রশ্ন করলাম কে? ওপাশ থেকে বললো, আমি কুন্তী

    মহাভারতের কুন্তীর বিষয়টি জানি কুন্তী, মহাভারতে পান্ডুর স্ত্রী কুন্তী আমারা জানি পান্ডুর সন্তান জন্মদানে অক্ষম াই ুন্তী ক্ষেত্রজ সন্তান উৎপাদন করতেন খন াজ মহলে ্রথা নিষিদ্ধও ছিলনা ুন্তীর ক্ষেত্রজ ুত্রসন্তান ন্মদানের ঘটনা রহস্যময় কাহিনীর অন্তরালে ইতিবৃত্তের কুয়াশা কাটিয়ে জানা যায়, ভোজের রাজদরবারে অতিথি হয়েছিলেন সূর্যসম তেজস্বী পুরুষ দুর্বাসা তিনিই ছিলেন কুন্তীর প্রথম সন্তান কর্ণের জন্মদাতা যুধিষ্ঠীরের পিতা ধর্মের জন্মের আড়ালে আছেন কুন্তীর দেবর বিদুর িদুর ুদ্রা ননীর র্ভে ব্রাক্ষণের ঔরসজাত ভীমের জন্মদাতা শতশৃঙ্গ পর্বতেরই কোনো এক বলশালী ঋষি এবং পরশুরামের মত অস্ত্রচালনায় বিশারদের ঔরসে অর্জুনের জন্ম

   দরজা খুললাম।

খুলতেই দেখি এক অনন্যা সুন্দরীপরনে ধবধবে দুধসাদা শাড়ি, চওড়া লাল পার ঘন অন্ধকারেই চিকচিক করছে কপালে গোলটিপ সিঁথিতে সিঁদুর মাথায় ঢেউ খেলানো চুল  কোলে সদ্য জাত এক শিশু কোন দেবী যেন স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে কুন্তী কি সশরীরে ফিরে এসেছে আমাকে দেখেই ছুটে কাজুবাদাম গাছের আড়ালে লুকিয়ে গেল আমি ওর পিছনে ছুটলাম হ্যারিকেনের আলোয় বুঝতে পারলাম ও নদীর দিকেই ছুটছে আমি কিছুতেই ওকে ছাড়বোনা হারিকেন হাতে নিয়েই সাবধানে ছুটতে লাগলাম

      ুটছে নদীর  দিকেই আমার ভয় লাগছিল, ও ধরা দেবেনা বলে নদীতে ঝাঁপ দেবেনা ত! বাচ্চাটার কি হবে? বার নতুনভাবে কর্ণ ফিরে আসবে রূপবতী কুন্তী, কুন্তী নদীর ধারে আচমকাই দাঁড়িয়ে পড়লো আমার চোখে  চোখ রেখে আমাকে বললোআপনি কেন আমার পিছু নিলেন আমি  বললাম  এই রাতে কোথায় যাবেন আসুন আমার  বাংলোতেই থেকে যান ও বললো ওই বাংলোর ইতিহাস জানেন মন দিয়ে  শুনুন নদীর  ধারের বকুল গাছের তলায়  দুজনেই বসলাম

কুন্তী এক দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বললেন, বাংলোটা প্রথমে ছিল নীলকুঠি, পরে হয় পাল জমিদারদের বাগান বাড়ি  এখন বন দপ্তরের বাংলো জমিদার পান্ডু চন্দ্র পাল আমাকে গর্ন্ধব মতে বিয়ে করে এই বাগান বাড়িতে রাখে আমি ওই সময়ের সেরা সুন্দরী নর্তকী ছিলাম অনেক বিখ্যাত ধনী ব্যক্তিরা আমার কাছে পতঙ্গের মত উড়ে আসতো আমাদের সন্তানকে  স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে পান্ডু চন্দ্র পাল মহাভারতের পান্ডু নন, উনি এ যুগের পান্ডু তিন তিনটে সন্তানের জনক আমাদের  সন্তান কে গলাটিপে মারতে যায়,বলেন "ওকে বাঁচালে লোক জানাজানি হয়ে গেলে ভবিষ্যতে এই সন্তানও জমিদারির ভাগীদার হবে  আমার বাবা কিছুতেই মেনে নেবে না আমাকেও তাড়িয়ে দেবে। এই ছেলেকে মরতেই হবে আমি ছেলেকে বাঁচতে কুন্তী নদীতে ভেলায় চাপিয়ে ভাসিয়ে দিই এই  ভূতচর্তুদশীতেই পান্ডু মদের নেশায় যখন ও চুর হয়েছিল, তখনই তরোয়াল দিয়ে ওই বাড়িতেই ওর মুন্ডু কেটে খুন করেছি লাশটি ওই কাজুবাদাম গাছের গোড়ায় পুঁতে দিই পান্ডুর মুন্ডুটা এই বকুল গাছের তলায় কুন্তীর চোখ দিয়ে  আগুনের গোলা বেরুচ্ছে আমি অশরীরী আত্মাকে বিশ্বাস করিনা কি হলো কে জানে আমি চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লাম চোখে সরষে ুল দেখলাম আর কিছু মনে নেই

       সকালে মাহাতো পাঁজাকোলা করে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে চোখে জলের ঝাপটা মারতে মারতে বলে যাচ্ছে, "বাবু হুড়কা খুইলা নিদ যাসনে।"

                                          --------------------------

 তপন তরফদার 

প্রেমবাজার (আই আই টি)খড়গপুর। 

  ফোন  হোয়াটসঅ্যাপ  9434077490      

 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.