অণুগল্প ।। কৈতব ।। চন্দন মিত্র
কৈতব
চন্দন মিত্র
সকালবেলা স্বয়ং রাষ্ট্রপতি দেখা করতে এলেও রাজীব বিরক্ত হবে। সে প্রায় সারারাত চাকরির পরীক্ষার জন্য পড়াশোনা করে। তার যখন সকাল শুরু হয় জাগতিক নিয়মে তখন প্রায় দুপুর। রাজীব বেলা বারোটার দিকে উঠে ব্রাশ করে, চা-খায়, প্রাতঃকৃত্যে যায়। বাবা-মা তাকে বোঝে। তারাও তাকে বিরক্ত করে না।
গোল বাধল এক রোববার। বাড়িতে এলেন সমীরবাবুর অফিসের বড়োকর্তা। তিনি এদিকে একটি বাগানবাড়ি বানাতে চান। সমীরবাবুকে জমি দেখতে বলেছিলেন। আজ তিনি সেই জমিটি সরেজমিনে দেখতে এসেছেন। বারান্দায় সোফায় বসে কফিতে চুমুক দিতে দিতে রাজীবের জানালায় তাঁর চোখ চলে যায়। তিনি সমীরবাবুকে বলেন, তোমার ছেলে বুঝি ! সমীরবাবু ঈষৎ লজ্জিত হয়ে সম্মতিসূচক মাথা নাড়েন। নিতান্ত বাধ্য হয়ে তিনি রাজীবকে ডাক দিয়ে বলেন, বাবু ওঠো, দ্যাখো কে এসেছেন। রাজীব জানত, চৌধুরীবাবুর আসার সম্ভাবনা আছে। ফলে সে অনিচ্ছাসত্ত্বেও উঠে বসে। তড়িঘড়ি ব্রাশ করে সেও চা নিয়ে কাছাকাছি একটি চেয়ারে বসে যায়। সমীরবাবু প্যান্টজামা পরে রেডি হওয়ার জন্য পাশের ঘরে ঢুকলেন।
সাগ্রহে কথা শুরু করলেন চৌধুরীবাবু।
—এমনভাবে আলস্যে কাটিয়ে দিলে চলবে ! একটা চাকরি তো জোগাড় করতে হবে। সমীর তো তোমার বিষয়ে কিছু বলেনি। তোমার বাবা খুব চাপা স্বভাবের বুঝলে ! আমাকে আগে বললে একটা ব্যবস্থা করে দিতাম। তা পড়াশোনা কদ্দুর করেছে ? মাধ্যমিক ?
—হ্যাঁ।
—তা বেশ ! তবে কী জানো, মাধ্যমিক পাশে তোমাকে কোথায় বা দেব। তোমারও ভালো লাগবে না, আমারও খারাপ লাগবে।
—না, মানে মাধ্যমিক দেওয়ার পর ভেবেছিলাম পড়াশোনা ছেড়ে দেব। তারপর কী মনে হল আবার পড়াশোনা শুরু করলাম।
—তা ভালোই করেছ। তবে কী বলতো এখন চাকরির বাজারের যা অবস্থা তাতে উচ্চমাধ্যমিক পাশ কারোর ব্যাপারে কাউকে বলতে কেমন যেন সংকোচ হয়। খুব বোকামি করলে, গ্রাজুয়েশনটা করে নিলে তোমাকে আর ভাবতে হত না।
—কাকু, আসলে আমি পড়াশোনা ছেড়ে দেব ভেবেও ছাড়তে পারিনি। গ্রাজুয়েশনটাও শেষমেশ করে ফেলেছি।
—বা ! গ্র্যাজুয়েট হয়েছ ভালো করেছ। তবে কী জানো, এখন বিএ পাশের ছড়াছড়ি। যদি সায়েন্স গ্র্যাজুয়েট হতে তাহলে তোমাকে নিশ্চিত কোথাও লাগিয়ে দিতাম।
—কাকু আমি গণিতে স্নাতক। আপনি কফিটা খেয়ে নিন। বাবা রেডি হয়ে গেছেন। আমি উঠি।
চন্দন মিত্র
ভগবানপুর (হরিণডাঙা),
ডায়মন্ড হারবার, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা
সূচক— ৭৪৩৩৩১