লাবণ্য বেশ কিছু দিন শয্যাশায়ী। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চলৎশক্তিহীন হয়ে পড়েছে। রমেন বাবু সব সময় সেবা-শুশ্রূষা করে চলেছেন। রমেন বাবু আর লাবণ্য সুখী দম্পতি ।পঞ্চাশ বছর একসাথে সুখে-দুখে, আনন্দ- বিষাদে, মান অভিমানে, ভালোবাসায় প্রাণচঞ্চল ভরা দুটি মন। তাঁরা নিঃসন্তান হলেও মনে কোনো আক্ষেপ নেই।
পাড়া-প্রতিবেশী ক্লাব সংগঠন নাটক গান বাজনা এই সমস্ত নিয়ে হাসিখুশি হৈ-হুল্লোড়ে তাদের জীবন বেশ আনন্দেই কাটছিল।
হঠাৎই তাদের সুখের ঘরে নেমে এলো ঘনঘোর আধার। ডাক্তার বলেছেন লাবণ্য কোনদিনই হাঁটাচলা করতে পারবে না।
বেশ কয়েকদিন তেমন কিছু খাচ্ছে না, ক্রমশঃ শরীর দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।
লাবণ্যর শিয়রে বসে আছেন রমেন বাবু, মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। আর ভাবছেন ফেলে আসা দিনের কথাগুলো। হঠাৎই লাবণ্য রমেন বাবুর হাত বুকে টেনে নিয়ে ক্ষীণ কন্ঠে বলে ওঠে সেই গানটা একবার শোনাও। যে গানটা আমরা দুজনে কতবার নির্জন নিরালায় বসে গেয়েছি।বড্ড শুনতে ইচ্ছে করছে।
রমেন বাবু অশ্রুসজল নয়নে আবেগ ভরা কন্ঠে গাইতে শুরু করলেন ,
'ভালোবাসি ভালোবাসি
এই সুরে কাছে দূরে জলে স্থলে বাজায় বাঁশি
আকাশে কার বুকের মাঝে
ব্যথা বাজে...
ক্ষীণ কন্ঠে লাবণ্য দেবীও রমেন বাবুর কন্ঠে কন্ঠ মেলান।
দিগন্তে কার আলো আঁখি আঁখির জলে যায় গো ভাসি
ভালোবাসি ভালো----------
স্তব্ধ হয়ে যায় লাবণ্যর কণ্ঠ। লাবন্যর বুকের উপর আছড়ে পড়ে রমেন বাবু, দুহাতে মুখটা ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে বলতে থাকে ভালোবাসি ভালোবাসি, আর একবার বল ভালোবাসি।
-----------------------
অশোক দাশ
ভোজান, রসপুর ,হাওড়া ,পশ্চিমবঙ্গ ,ভারত
মোবাইল নম্বর-৮৩৪৮৭২৫৩৩৩