কড়াই
প্রতীক মিত্র
জনৈক জাগ্রত ঠাকুরের পুজো শেষ।দেবীর কাছে যে যার মতন বর চেয়ে আর তাকে বলির প্রসাদ উৎসর্গ করে করে সবাই ক্লান্ত।গ্রামের দক্ষিণ দিকে খালের কাছে যে মাঠ সেখানের প্যান্ডেল তখনও খোলা বাকি।পাশ দিয়ে এঁকেবেঁকে যাওয়া রাস্তাতেও আলো খোলা বাকি।বাকি মাঠে রাখা রান্নার ঢাউস দুটো কড়াইকে নিয়ে যাওয়াও।ওগুলো তাও ওখানে পড়ে আছে দিন সাতেক হল।বিনয় যখনই সময় পায় ওই শেষ হওয়া পুজোর মাঠে রাখা ঢাউস কড়াইটার কাছে যায়।
কি যে মাপে, মাথা নেড়ে ঘাড় বেঁকিয়ে কি যে বোঝে সেই জানে। পুজো কমিটিতে থাকা মানুষগুলো আবার ব্যস্ত হয়ে পড়ে রোজগারের তাগিদে।মন্দিরের সামনেই মুদিখানায় বসে থাকা মাঝবয়সী মহিলাটা বিনয়কে দোকানের ব্যস্ততার মধ্যেও পর্যবেক্ষণ করে।ওর বিনয়ের বাবার সাথে বিশেষ ঘনিষ্টতা।সেটা আর কেউ বিশেষ জানেনা।বিনয়ের মা'কে মারধর খেতে হয়েছে এই গোপন সত্যটি জানে বলে।তার লাঞ্ছনার ঘটনাটা দিনের পর দিন ঘটে যেতে থাকে তারই সন্তান ছোট্ট বিনয়ের সামনে।বিনয় মাকে যত ভালোবাসে বাবাকে তত ভয় পায়।তার কি যে খারাপ লাগে বাবা যখন মা'কে ওইভাবে... তারপর একদিন সন্ধ্যেবেলা যখন চত্বরটা খালি ও রীতিমতো ওই কড়াইএর মধ্যে ঢুকে টানটান শোয়ার চেষ্টা করে।এটার প্রত্যক্ষদর্শী শুধু যে ওই মুদিখানার মহিলা ছিল তা নয়, বিনয়ের দুর সম্পর্কের পিসিও সেটা দ্যাখে।পিসির ছেলেদের সাথে গ্রামের অন্যান্য লোকেরাও হৈহৈ করে আসে বিনয়কে পিটবে বলে।পুরোহিত বাঁচায় বিনয়ককে।পুরোহিতের মত বাকিদেরও কৌতুহল মেটে বিনয়ের উত্তর শুনে।
" আমায় তুমি বলেছিলে...দুষ্টু ছাগলগুলোকে বলি দিতে হয়।বাবা যেরকম দুষ্টুমি করচে...মা'এর সাথে... আমিও তাই কড়াইটা মেপে নিচ্ছি!যদি বাবাকে বলি দিতে হয়!"
পুরোহিত ভাবেনি ওকে এমন জবাব শুনতে হবে।মন্দিরের কাছে ছেলের জন্য ভীড় জমেছে শুনে বিনয়ের মা এমনকি বাবা হাজির।পুরোহিতের সাথে বিনয়ের আবার চোখাচুখি হলে বিনয়ের উপরের পাটির ধারের দুটো দাঁত চকচক করে ওঠে।
-------------------------
প্রতীক মিত্র
কোন্নগর-712235, পশ্চিমবঙ্গ