Click the image to explore all Offers

গল্প ।। বাংলার মুখ ।। আবদুস সালাম

 

বাংলার মুখ

আবদুস সালাম

 

দাদা ঠাকুর মোড় থেকে আসলাম ভাই ফল কিনে নিয়ে আসছে  ওমরপুর বাজার। মিঁয়াপুর কালী মন্দিরের সামনে জনাকয়েক ছেলে দাঁড়ালো  লাঠি হাতে । মাথায়  লাল ফেটি  বাঁধা । টকটকে লাল চোখ । টলমল করছে পা  । ঠিকমতো হাঁটতে পারছে না  ।   

   কালীপুজোর রাতে সারারাত খেলেছে  জুয়া ।যেটুকু সম্বল ছিলো গ্যাছে হেরে । ঘড়ি মোবাইল  কিছু বাদ যায়নি । বউ এর কানের দুল জোড়াও কেড়ে নিয়ে এসেছিল বউ কে মেরে। ছোট ছেলেটি কাঁদছে দেখে এক থাপ্পড় মেরে শুইয়ে দিয়েছিল।


      রাস্তায় টোটো ,অটো আটকে স্লোগান  দিচ্ছে জয় সিয়ারাম । জয় সীয়ারাম ধ্বনিতে কেঁপে উঠছে কালীতলা। অনেকেই ঠাট্টা করে বলছে কালিমাতা, দূর্গা মাতা আমাদের  আর  বাঙলা রক্ষা করতে পারছে না । বাইরে থেকে দেবতা ভাড়া করে নিয়ে আসতে হচ্ছে।      এর মাঝে একই সুরে সুর মিলিয়ে সবাই কালী মন্দির তলা   সরগরম করে তুলছে  ।  এক কথা দু কথা  হতে হতে  ভবেশ আসলামের ফলগুলোকে দিল রাস্তায় ছিটিয়ে । রাস্তার লরি ,বাসের চাকায় সেগুলো   পিশে দিল  । মনে হচ্ছে কেউ যেন রাস্তায় আদা রশুন পিশে রেখে দিয়েছে ।  পাঞ্জাবি ধরে  শুরু করেছে টানাটানি । পাঞ্জাবির অর্ধাংশ রইলো আসলামের গায়ে আর অর্ধাংশ রইলো ভবেশের হাতে ।

    ফল গুলো বিক্রি করেই আসলামের সংসার চলে, অন্য কোনো আয়ের  উৎস নেই ।বাড়িতে অসুস্থ মা ,ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ সবই চলে ফল বিক্রি পয়সায় ।আগামীকাল মা বিপত্তারিণীর পূজো । পাশের গ্রাম থেকে মেয়েরা দল দলে আসে পুজো দিতে ।জাগ্রত কালীমন্দির । এখানে মানসিক করলে মনের আশা পূরণ হবেই হবে  ।  প্রচুর ভক্তের সমাগম হয় ।পূজোর ফলও  বিক্রি হয় বেশি । অন্যদিনের তুলনায় লাভের পরিমান ও বেশিই হয় বইকি । তার  কথাবার্তা ,ব্যবহার, পরিচ্ছন্নতা সবাইকে মুগ্ধ করে।  হিন্দু-মুসলিম সবাই পছন্দ করে  তাকে  ।


    এই বাজারে বেশিরভাগ দোকানে পরিমাপ ঠিক থাকেনা । আসলাম কিন্তু কোরআনের  বাণী অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলার চেষ্টা করে । (তোমরা মাপ ও ওজন ন্যায়-নিষ্ঠার  সাথে  দাও)  ! সূরা মুতাফফিফীন  ১-৬ নং আয়াত ।  (যারা মাপে কম দেয় তাদের জন্য দুর্ভোগ)  সূরা আনআম ১৫২ নং আয়াত। 

ছোট ছেলে থেকে শুরু করে সব বয়সের খরিদ্দার তার উপর ভরসা রাখে । বাড়ির মালিকেরা অনেক সময় কাজের লোক ,ছোট ছেলেকে পাঠিয়ে দেয় ফল আনতে।তারা জানে ছেলে টা অসম্ভব রকমের সৎ।

    হাওমাঁও করে কাঁদতে  কাঁদতে বাড়ি চলে যায় আসলাম। বাড়িতে অসুস্থ  বৃদ্ধা মা ও স্ত্রীকে তার হেনস্থার কথা জানায়। তারা দেশের অবস্থা বুঝে কুঁকড়ে যায়। নামাজের পাটিতে বসে তারা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে । আল্লাহ  তুমি এর  বিচার করিও । বাড়ি গিয়ে গোসল করে। খেয়ে দেয়ে আসরের নামাজ পড়ে সুরাজ মহাজনের কাছে ঘটনার বিবরণ দেয় । ওরাও খুব আফশোষ করে ।আসলাম ভাই আপনার  যতো  ফলের দরকার হয় নিয়ে যান ।   আপনি কোন চিন্তা করবেন না। বেচাকেনা করে আস্তে আস্তে অল্প অল্প করে ফেরৎ দিবেন। সুরাজ মহাজনের দেখা দেখি হরি দা,খায়ের ভাই,বকুল হালদার  ডেকে  আসলাম ভাইকে টোটো ভর্তি করে মাল দিলেন দোকান সাজাতে।  আর ঐ বাঁদরটার এই কীর্তীকে মনে মনে সবাই ধিক্কার জানলেন।

     সকাল থেকে মন্দির চত্বরে ভিড় হতে শুরু করে। দোকান খুলে বসেছে সবাই । বেচাকেনা ও শুরু হয়েছে। ভবেশ  মুখ নিচু করে বসে আছে ।  আসলামের দিকে তাকাতে ও পারছেনা ।

মনে মনে ভবেশ ভেবেছিলো   শালা আসালামের   আজ মাল থাকবে না ।  আমার কাছে  সবাই মাল কিনতে আসবে ।  দারুণ মজা হবে । মনে মনে ভেবেই  নিয়েছে আজ দুপয়সা কামাই ভালোই হবে ।আজ বাড়িতে বেশি খরচ আছে । পূজা বলে কথা ।তার পর একটু রঙিন তো হতেই হবে । কিন্তু এতো দেখছি ব্যাপার সম্পূর্ণ আলাদা । আজ শালা মাল লাগালো কেমন করে?   ভেবেছিল পূজার দিন , আর কেউ থাকবে না । আমার কাছে সবাই আসবে ।

গত কালকের ঘটনা পাড়ার লোকে সবাই দেখেছিল ।দেখেছিল ভবেশ এর ব্যবহার। তাই আজ ভদ্রলোক, ভদ্রমহিলাগণ পূজার প্রয়োজনীয় ফল তার কাছে কিনতে যায়নি ।লাইন দিয়ে আসলাম এর কাছে সবাই ফল কিনেছে ।বেলা এগারোটা পর্যন্ত তার কাছে একটা খরিদ্দার ও ভুল করে আসেনি ।


 আসলাম সব দেখছে। এখন পর্যন্ত  তার বাটখারায় জল পড়েনি।বোহনী ও  হয়নি । পার্শ্ববর্তী  গ্রামের লোক  আসতে শুরু করেছে পূজা দিতে। ফলের সতেজতা দেখে ভক্তরা আসলামের দোকানের  দিকেই এগিয়ে আসছে। আসলাম মনে মনে ভাবতে লাগল কি করা যায় । চকচকে টাটকা তাজা ফল দেখে একজন খরিদ্দার এলো । দামও বেশি করে হাঁকছে ।

  নিজে বলছে পাশের দোকানে যান সস্তায় পাবেন । ফলের দাম জিজ্ঞেস করলে আসলাম একটু বেশি করেই হাঁকছে । 

 সজল খান মেম্বার মানুষ । দামদর করতে শুরু করে ।আসলাম বলে ভাই  আমি দাম কম নিতে পারব না  । আমি দরাদরি করিনা ।আপনি  বরং পাশের দোকানে যান। ওখানে একটু সস্তা পেতে পারেন। মেম্বার ভবেশের  দোকানে কিছু ফল কিনলেন এবং বললেন এখানে অনেক কম দাম ।আপনি তো  দিলেন না ।

দেখুন ভাই ওই লোকটার  সকাল থেকে বহোনি হয়নি ।ফল বিক্রি না হলে ওর সংসার চলবে কি করে। সজল মেম্বার মনে মনে বলতে লাগলো এটাই আমাদের  বাংলার সংস্কৃতি । 

###২৪/০২/২০২২

 --------------------------------

 

প্রয়াস শ্রীকান্তবাটি মাদারল্যান্ড
ডাক রঘুনাথ গঞ্জ মুর্শিদাবাদ ৭৪২২২৫
৯৭৩৪৩৩২৬৫৬

 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.