বিশ্বজিৎ রায় চৌধুরী
দিগন্তে আকাশের নীলিমার আঁচলে আঁকাবাঁকা ঘন সবুজের সমারোহে উজ্জ্বল লাল আভা , ওরই ফাঁকে অবস্থান খুঁজে অসংখ্য পাপড়ি মেলেছে হলুদ রাঙা প্রেম । শিমূল , পলাশ , কৃষ্ণচূড়া , রাধাচূড়ার প্রেম । জড়াজড়ি , গলাগলির আদিখ্যেতা । নদী তীরে হাওয়ার হুটোপুটি । মৃদু মৃদু শীতল পরশ ।
রিসর্টটা এগিয়ে এসেছে নদীর বুকে । সাথে বাঁধা রয়েছে অগুন্তি ছিপ , পানসি তরী । কিংবা সুইমিং বোট । দূর থেকে বহুদূরে দখিনা দিগন্তে ছুঁয়েছে নদী প্রকৃতির মিশ্রিত বিযুক্ত ভুমি ।
রিসর্টে ট্যুরিস্টরা এসময়ে বাসন্তিক অবকাশ যাপনে মিলন সুধায় অভিসিঞ্চিত হয় । জোড় বেঁধে মন দেওয়া নেওয়ার কুহেলী মায়ায় জড়ায় । মনের সাথে মনের , শরীরের সাথে শরীরের ঘনিষ্ঠতা যেন নিবিড়তর হয় এমন পরিবেশে । এ পরিবেশ যেন বিমূর্ত প্রেমের শৈল্পিক এক নিবিড় প্রেম যমুনার কৃষ্ণ - রাধার প্রেম কুঞ্জ । এখানে নর - নারী মুখরিত ভালোবাসার গুঞ্জনে ।
প্রকৃতি রচনা করে বিদগ্ধ প্রেমসিক্ত পটভূমি । যেন মুহুর্মুহু আহ্বান জানায় , এসো , এসো হে
নগরনন্দন , এসো হে নগরনন্দিনী , এসো সগৌরবে প্রেমকূজনে মত্ত হও ।
এই রিসর্টে বেশ কয়েকদিন হয়ে গেল তমাল ও মিশার । মানে মধুযামিনী যাপন যা বিরামহীন দিন কয়েক । এখনো মিশার অঙ্গে প্রলেপিত হয়ে আছে তাজা রক্তিম সিঁদুরের আভা । শুধু কপালের ওপর কেশ বিভাজিকার মধ্যদেশেই নয় , অঙ্গাভরনের তন্তুতে তন্তুতে , অঙ্গসৌষ্ঠভের তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে নব বধুর বিবাহ শ্রী ছড়িয়ে রেখেছে নিদর্শন । আর তমালের প্রতিক্ষণ ভরিয়ে দিচ্ছে স্নিগ্ধ পারফিউমের সুগন্ধ ।
মুল্যবান বেনারসী ছেড়ে আলনায় ঝুলিয়ে রেখেছে মিশা । দুধে আলতা রঙের জামদানী শাড়ী পরে বেগনী রঙের ব্লাউজে ফর্সা গা ঢেকে আপ্রাণ সাজসজ্জায় চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি সে ।
তমাল মেরুন রঙের ব্লেজার আর নীল রঙের জিনসের ট্রাউজার ।
এখন ওরা রয়েছে মাঝ নদী বক্ষে , যুগল ভ্রমনের পানসি চড়ে । মাঝি ঐসী হেঁইয়ো , দাঁড় টানো জোয়ান হেঁইয়ো না বলে নিশ্চুপ পেশীবলে দাঁড় টেনে ভরা গাঙের মাঝ দরিয়ায় পানসি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নৌকাবিহার মগ্ন ।
বসন্তের দখিনা সুপবন নদীর ছোট ছোট ঢেউয়ের সঙ্গে জলকেলি করতে করতে ঝিরঝির ছন্দে উড়িয়ে নিচ্ছিল মিশার পিঠের ওপর আলুলায়িত চুলের সাজ । মিশার আরক্ত কপালের চন্দন রঙা টিপের ওপর , গোলাপী দু'গাল বেয়ে , লালে লাল দু'ঠোঁটের ওপর আদুরে পরশ বুলিয়ে হাওয়ায় উড়ছিল হালকা সে চুলের গাছি । কি অপরূপ শোভা ওর সর্বাঙ্গে যখন শেষ বিকেলের পশ্চিমে ক্রমশঃ ঢলে পড়া সূর্যের আলো মাখামাখি করে খেলা করছিল ।
তমাল ওর বিপরীত পাটাতনে বসে সব লক্ষ্য করছিল । ওর চোখ অবশ্য সানগ্লাস । সেটা খুলে বাঁ হাতের মুঠিতে ধরে ডান হাত দিয়ে মিশার এক হাত ধরে টানল নিজের কাছে ।
মিশা সলজ্জ কন্ঠে বলল , " আ : কি হচ্ছে এসব , সবাই দেখতে পাবে তো । "
তমাল মৃদু হেসে বলল , " এখানে সবাই থাকলে তো । এখানে কেউ নেই । শুধু তুমি আর আমি । কেউ দেখতে পাবে না । "
বলে মিশাকে জড়িয়ে ধরে আদরে সোহাগে উন্মাদ করে দিতে লাগল । মিশার উত্তুঙ্গু দু'টি স্তনের বাদামী বৃন্ত বারবার বিঁধে যেতে লাগলো তমালের বুকের খোলা জায়গায় , মুখে - গলায় ।
মিশার দু'টি ঠোঁটের সবটুকু সুধা শুষে নিতে কার্পন্য করল না তমাল । দু'জনের হৃদয়ের পাঁজড়ের খাঁজে দু'টি হৃদয়ের স্পন্দন মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে বৈকালিক প্রমোদ বিহারে ।
কি যেন হয়ে গেল পানসির দোলায় । কাত হয়ে উল্টে গেল মুহুর্তে ।
" মি ... শা.......আ..... আ..., মি ...... শা ...... আ ..... আ......... , মি........শা ....... আ.........আ....আ ..........। "
তমাল চিৎকার করে ঝাঁপিয়ে পড়ল নদীর জলে । সে দক্ষ সাঁতারু । পাকড়ে ধরল মিশার শরীর । মিশা তখন সম্পূর্ণ সমর্পন করে দিয়েছে নিজেকে তমালের জিম্মায় । ওদিকে পানসিটাকে ভাসিয়ে নিয়ে মাঝি ঐসী প্রাণপন সাঁতার কেটে টেনে নিয়ে চলল তীরের দিকে ।
সূর্য ওদিকে অস্তাচলে । নদীর অতল জলে রক্তিম বর্ণচ্ছটা ঢেলে দিচ্ছে আবীর রঙ । নদী পাড়ের রিসর্টের সাঁকোর অনতি দূরে মিশাকে সাঁতরে তীরে তুলল তমাল ।
* * * * *
রাত আটটা । রিসর্টের আরাম কক্ষে শায়িত মিশা । হট প্যাড জোগাড় করে প্লাগে লাগিয়ে মিশার সর্বাঙ্গে উষ্ণ সেঁক দিতে ব্যাস্ত তমাল । নগ্ন মিশাকে উষ্ণ আদর ভালোবাসায় ভুলিয়ে দিতে চাইছে তমাল । ঘটে যাওয়া ভয়ংকর ঘটনা যেন স্মৃতি হয়ে না থাকে ।
সমাপ্ত