ঋণস্বীকার- ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত।
কালো বৌ
হারান চন্দ্র মিস্ত্রী
পূরবী উত্তেজিত ছিল। সে মায়ের ফোন পেয়ে বলল,"বলো মা।"
অপর প্রান্ত থেকে পূরবীর মা জিজ্ঞেস করল,"কোন অসুবিধা হয়নি তো?"
"না না। আমার শাশুড়ী আমাকে বরণ করে ঘরে তুলে নিয়েছে। তুমি চিন্তা করো না।" জানাল পূরবী।
করোনার সময় কর্মবিরতি ছিল পূর্ণর। প্রতিদিন ঘরে বসে আত্মীয়-স্বজনদের ফোন করে কুশল জানত সে। একবার একটা সংখ্যা ভুল টিপতে এক অচেনা মেয়ের কন্ঠ শুনতে পেল সে। সে "রং নাম্বার" বলে ফোন কেটে দিতে উদ্যত হলে মেয়েটি থামিয়ে দিয়ে নিজের পরিচয় দেয় এবং পূর্ণর পরিচয় জেনে নেয়।
এরপর তার প্রতিদিন ফোন করে একে অপরের খোঁজ নেয়। দুজনের প্রতিদিন কথা হয়। তারপর কথা হতে থাকে দিনে তিন চার বার। দুজনে অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে গেছে। অনেক দিন ধরে পুর্ণ তাকে একটা কথা বলতে চাইছিল। আজ পূরবী পূর্ণকে সরাসরি বলল,"আমি তোমাকে ভালোবাসি।" রোমাঞ্চিত হয়ে উঠল পূর্ণর মন। পূরবী প্রতিদিনের মতো তাকে নিজের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানাতে ভুলল না।
অনেক টানপোড়েনের পর লক্ষ্মী পূজার দিন পূরবীদের বাড়িতে গিয়ে হাজির হলো পূর্ণ। চমকে গেল পূরবী। সুন্দর গায়ের রঙ আর চোখ-মুখ তার। শুধু পড়াশুনোর বহরটা জানায় নি সে। নিরক্ষর নয় নিশ্চয়, ভাবে পূরবী।
পূরবীর দিদি তার মাকে বলল,"তার পাশে দাঁড়াতে পারবে কী করে কালো ত্বকের মেয়েটি!"
"জামাই আর তুমি যা সিদ্ধান্ত নেবে, তাই হবে।" বলল তার মা।
পূরবীর দিদি পূরবীকে ডেকে বলল,"পূর্ণ কি তোকে ভালোবাসার কথা বলেছে?"
পূরবী বলল,"তা বলেনি। তবে ভালো না বাসলে সে এলো কেন?"
"সে আগে তোকে দেখেনি। এখন দেখার পর আর সম্পর্ক রাখবে কি না জানি না,"বলল তার দিদি।
"সে গরিব না ধনী, শিক্ষিত না অশিক্ষিত, আমি জানতে চাই না। তুই যেভাবেই হোক ওর সঙ্গে আমার বিয়েটা দিয়ে দে দিদি,"আকুতি জানালো পূরবী।
"বাবা বাড়িঘর, শিক্ষা, কাজকর্ম কী করে না জেনে বিয়ে দিতে রাজি হবে না," বলল তার দিদি।
"আমি কিছু শুনতে চাই না। ও আমাকে নিয়ে গাছতলায় থাকতে চাইলে, আমি সেখানেই থাকব," বলল পূরবী।
তার দিদি বলল,"পূর্ণ এখান থেকে একবার বেরিয়ে গেলে আর আসবে না। তোর ফোনই ধরবে না।"
"ঠিক বলেছিস দিদি। আজকেই আমদের গাঁটছড়া বেঁধে দে। নয়তো আমি কি করব জানি না," হতাশা ব্যক্ত করল পূরবী।
পূরবীর দিদি বলল," তুই পূর্ণর উপর নজর রাখ। আমি তোর জামাইবাবুর সঙ্গে পরামর্শ করছি।"
"ঠিক আছে দিদি," বলেই সে খুশি মনে পূর্ণর কাছে চলে গেল।
পূরবীর দিদি তার স্বামীকে ডেকে বলল,"পূরবীর সঙ্গে ঐ ছেলেটির ফোনে আলাপ। ওর নাম পূর্ণ। তখন কেউ কাউকে চোখে দেখেনি। ওকে দেখে পূরবী পাগল হয়ে গেছে।"
পূরবীর জামাইবাবু বলল,"কতদূর লেখাপড়া করেছে, কোন বংশের ছেলে জানো?"
"জানি না। পূরবীও ভালো জানে না। কিন্তু, ওকে পাওয়ার জন্য নির্লজ্জভাবে আমাকে বিয়ের ব্যবস্থা করতে বলছে। বিয়ের জন্য পাগলী হয়ে উঠেছে ও," বলল পূরবীর দিদি।
তার জামাইবাবু জিজ্ঞেস করল,"বাবা-মা রাজি আছে?"
"কেউ কিছুই জানে না তেমন। বাবা একদমই জানে না," বলল সে।
"হবু ভায়রাভাই চমৎকার দেখতে। শালী যখন রাজী তখন আজই বিয়ের কাজ সেরে দেব। চলো, ওকে নিয়ে বাবার সঙ্গে কথা বলি," বলে সে সবাইকে ডেকে নিয়ে শ্বশুরের ঘরে ঢুকল।
এদিকে পূর্ণর পাশে গিয়ে বসল পূরবী। পূর্ণকে বলল,"আমাদের বাড়ি তোমার কেমন লাগছে?"
"ভালো," বলল পূর্ণ।
"আর আমাকে?" জিজ্ঞাসা করল সে।
"ভালই," বলল পূর্ণ।
পূরবী পূর্ণর এই সংক্ষিপ্ত উত্তরে সন্তুষ্ট হতে পারে নি।
সে বুঝল, তার গায়ের রং পূর্ণর মনে ধরে নি। তার বা কী করার আছে! এমনই রং নিয়ে সে পৃথিবীর প্রথম আলো দেখেছে। বিষণ্ণতায় ভরে উঠল তার মন। কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল পূরবী। তাকে থামিয়ে পূর্ণ বলল,"তোমার গায়ের রং কালো কুৎসিত। তোমার মতো মেয়েকে ভালোবাসা যায়!"
পূরবীর মন আরও সঙ্কুচিত হয়ে এলো।
পূর্ণ বলতে লাগল,"তোমার মনটা যেমন গায়ের রং তেমন নয়। তাহলে কিভাবে তোমার হাত ধরা যায়?"
পূরবী ভাবে, গায়ের রং কালো বলে এত ঘৃণা পূর্ণর।
ফর্সা চামড়ার মানুষের মন এতো নিচু হয়! দু'চোখ ঠিকরে দু'ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল তার।
পূর্ণ আরও বলতে থাকে,"এমন মানুষ আমি নই পূরবী। তোমার মিষ্টি ভাষা আমাকে তোমার কাছে এনে দিয়েছে। তোমার একটা ভালো মন আছে। বাকিটা তোমার সিদ্ধান্ত।"
চোখে-মুখে দু'হাত চেপে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলল পূরবী।
এতক্ষণ পূরবীর দিকে না তাকিয়ে কথা বলছিল পূর্ণ। পূরবীর কান্নার শব্দ শুনে তাকে ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে পূর্ণ বলল,"কি হলো পূরবী? তুমি কাঁদছ কেন? আমাকে তোমার পছন্দ হয়নি?"
পূর্ণর প্রশ্ন শুনে এবার ককিয়ে কেঁদে উঠল পূরবী। সে বলল,"তুমি আমাকে নিয়ে রহস্য করছ?"
দুহাত দিয়ে পূরবীর চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বলল পূর্ণ,"রহস্য করিনি। তোমাদের বিশাল অট্টালিকা আর বৈভব দেখে আমি চমকে গেছি। আর---"
"আর?" কান্না ভেজা গলায় জিজ্ঞাসা করল পূরবী।
"আর তোমার সুন্দর মুখশ্রী, গভীর কালো চোখ এবং হাঁটু পর্যন্ত লম্বা কালো চুল দেখে মনে হলো, এতো সম্পদ কী আমার হবে!"
"ধ্যাত্," বলেই সে পূর্ণর বুকে মাথা রেখে তাকে জড়িয়ে ধরল। তারপর সে মুখ তুলে বলল,"তুমি যেমন কাঁদাতে পারো তেমন হাসাতে পারো। তুমি আমার একমাত্র আশ্রয়।" বলেই সে আবার পূর্ণর বুকে মাথা গুঁজে দিল।
অদুরে দাঁড়িয়ে ছিল পূরবীর দিদি। সে তাদের ডাকতে এসেছিল। মান-অভিমানের পালা চলছিল বলে তাদেরকে সতর্ক করেনি সে। তারা কতটা কাছাকাছি আসতে পেরেছে জানতে চাইছিল সে।তাদের আলিঙ্গন হওয়া দেখে আশ্বস্ত হলো পূরবীর দিদি।
সে পূরবীর নাম ধরে ডাকল। সতর্ক হয়ে পূরবী বলল,"দিদি, আমরা এখানে আছি।"
"ওখানে বসে থাকলে হবে! বাবা সবাইকে তার ঘরে ডেকেছে। তাড়াতাড়ি চলে আয়," বলে চলে গেল তার দিদি।
পূরবী পূর্ণকে বলল,"এখনও শ্বশুরকে চোখে দেখনি। চালো, বাবা আমাদের ডেকেছে। শ্বশুরের সঙ্গে পরিচয় করবে চলো"
"আমি! ওরে বাবা, আমি যাব না। যা বলার তুমি গিয়ে বলো," বলল পূর্ণ।
"বাবা কিছু বলবে কিনা জানি না। কিন্তু, তোমাকে নিশ্চয়ই দেখতে চাইবে। কার হাতে মেয়ে তুলে দেবে যাচাই করে নেবে না?" মন্তব্য করল পূরবী।
"আজ লক্ষ্মী পূজা। বিয়ে কি আজ হচ্ছে?" জিজ্ঞাসা করে পূর্ণ।
"উঁ---, ধরে নাও তাই।" খানিকটা ঠাট্টাচ্ছলে বলল পূরবী। তারপর সে উঠে দাঁড়িয়ে পূর্ণর হাত ধরে টেনে তোলে। সে বলে,"আগে দেখা তো করো।"
তারপর দুজনে হাঁটতে থাকে।
পূরবীর বাবার ঘর বেশ প্রশস্ত। ঘরে ঢুকতেই বেশ কয়েকজন লোক দেখতে পেল পূর্ণ। পূরবী পূর্ণকে একজন বৃদ্ধ ও একজন বৃদ্ধাকে দেখিয়ে বলল," এরা আমার বাবা-মা। তুমি সবার সঙ্গে পরিচয় করে নাও।"
পূরবীর জামাইবাবু বলল,"পূর্ণ আমাদের নতুন অতিথি। কিভাবে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেবে। আমি পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি।"
পূরবীর জামাইবাবু পূর্ণকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। পূর্ণ অনুমান করল পূরবীর বাবা যথেষ্ট বৈষয়িক ও বুদ্ধিধর মানুষ। পূরবীর বাবা তাকে জিজ্ঞেস করলেন,"কতদূর পড়াশুনো করেছ?"
পূর্ণ উত্তর দিল,"এমএ পাস করেছি।"
সবাই একে অপরের মুখের দিকে তাকাল।
পূরবীর বাবা আবার জিজ্ঞেস করলেন,"বাড়িতে কে কে আছে?"
"শুধুই মা। বাবা মারা গেছে পাঁচ বছর আগে," উত্তর পূর্ণর।
পূরবীর মা বলল,"আহা রে!"
পূরবীর বাবা বলল,"আমার আর কিছু জানার নেই।"
তার জামাইবাবু পূর্ণর হাত ধরে বলল,"এত জিজ্ঞেস করার কি আছ? তুমি চলো আমার সঙ্গে।"
পূর্ণর কিছু বোঝার আগে তাকে দোতলার একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে বসাল।
একদল মেয়ে ঢুকল ঘরের মধ্যে। একজনকে টিফিন ও চায়ের ব্যবস্থা করতে বলে বেরিয়ে গেল পূরবীর জামাইবাবু। নানারকম মিষ্টি ও চা-বিস্কুট এলো। মাথার উপর পাখা বন বন করে ঘুরছে। মেয়েরা কেউ কেউ তাকে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছে। চা-বিস্কুট আর তোয়াজ-ভক্তিতে স্বস্তি আসছে না পূর্ণর। সে বলল,"অস্বস্তি লাগছে আমার। একটু বাইরে গিয়ে বসি।"
উঠে দাঁড়াতে চাইছিল পূর্ণ। দুই দিক থেকে মেয়েরা চেপে বসিয়ে দিল তাকে। একজন বলল,"ভয় কি, আমরা তো আছি।"
পূর্ণ জিজ্ঞাসা করল,"পূরবী কোথায় ?"
মেয়েটি হেসে বলল,"তাকে তুমি চিরদিনের জন্য কাছে পাবে। এখন আমাদের সঙ্গে সময় কাটাও।"
পূর্ণ বুঝে গেছে কোনো একটা অঘটন ঘটতে চলেছে। এখান থেকে পালিয়ে যাওয়া অসভ্যতা ও কাপুরুষতা বিবেচিত হবে। তবে সে যা ভাবছে তাই যদি ঘটে তবে পুরবীরাও কম অপরাধী হবে না। সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে অপরাধ বোধ মানুষের বিবেকে ঠাঁই পায় না, ভাবেনি সে।
প্রায় দুই ঘন্টা অতিবাহিত হয়ে গেছে। পূরবীর জামাইবাবু একজন ছেলেকে নিয়ে ঘরে ঢুকল। সে বলল,"সরো সরো। তোমরা বাইরের কাজটা সেরে ফেল। আমরা এখানের কাজ সেরে নিই।"
মেয়েরা বেরিয়ে গেল। পূরবীর জামাইবাবু পূর্ণকে বলল,"দাঁড়াও দেখি, তোমাকে কেমন মানায়।"
পূর্ণর কথা বলার আগে ছেলেটিকে সে বলল,"তোকে এখানে মুখ দেখতে এনেছি। পূর্ণ কোনোদিন ধুতি-পাঞ্জাবী পরেছে? ওকে পরিয়ে দে।"
তারা পূর্ণকে কোনো কিছু বলার আগে তাকে বরের বেশে সাজিয়ে দিল।
পূরবীর জামাইবাবু বলল,"আমার শালীর বিয়ে বলে কথা। আমাদের চুপ করে বসে থাকলে চলবে না। কোলে তুলে নিয়ে চল।"
ছেলেটির শরীর বেশ মোটাসোটা। লম্বায় প্রায় ছয় ফুটের কাছে। সে পূর্ণকে বুকের উপর তুলে গট্ গট্ করে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে লাগল। পূর্ণ বলল, "আমাকে নামাও। আমি নিজে নামতে পরবো।"
পূরবীর জামাইবাবু পেছন থেকে বলল,"না না। আজ তা হয় না। আজ তোমাকে আমাদের সেবা করার সুযোগ দিতে হবে।"
মুহূর্তের মধ্যে তাকে নিয়ে ছাতনা তলায় উপস্থিত। পূর্ণ মনে মনে খুব অসন্তুষ্ট হলো। কিন্তু, মুখে কিছুই বলল না।
বিয়ের বাসরে সমস্ত ব্যবস্থা প্রস্তুত দেখে হকচকিয়ে গেল পূর্ণ। তাহলে আগে থেকে পূরবীদের প্রস্তুতি নেওয়া ছিল! ভাবে পূর্ণ। বিয়ের বাসরে শাড়িতে সালঙ্কারা পূরবীর সৌন্দর্য অবশ্য তাকে মুগ্ধ করেছে।
বিয়ের পর তাদের একটি ঘরে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেখানে পূরবীকে একান্তে পেয়ে পূর্ণ বলল,"তোমার বাবা-মা, দিদি-জামাইবাবু আমাকে তোমার সঙ্গে জোর করে বিয়ে দিল। এটার কি খুব দরকার ছিল?"
পূরবী বলল,"ওদের দোষ দিয়ো না। আমি ওদের জোর করেছি। কাছে পেয়ে তোমাকে হারাতে চাই নি।"
"আমি যদি তোমাকে ফেলে চলে যাই!" বলল পূর্ণ।
"আমি খুঁজে ঠিক তোমার কাছে চলে যাব। আর যদি তাড়িয়ে দাও, তবে তোমার সদর দরজার এককোণে আশ্রয় নেব। আমি তোমার কাছে আশ্রয় নিয়েছি। মারলে তুমি আমাকে মারবে, বাঁচালে তুমিই আমাকে বাঁচাবে। আমি কথা দিলাম,কোথাও নালিশ জানাতে যাব না। এমনকি বাবা-মায়ের কাছেও না,"কথাগুলো বলতে বলতে পূরবীর গলা ভারী হয়ে এলো।
পূর্ণ তাকে কাছে টেনে নিয়ে বলল,"তুমি আমাকে খুব ভালবাসো?"
"খুব!" বলেই সে পূর্ণকে জড়িয়ে ধরল। সে আবার বলল,"নয়তো আমার বাবা তোমার বাড়িঘর না দেখে দু-ঘন্টার মধ্যে আমাকে তোমার হাতে তুলে দেয়!"
পূরবীর কথা পূর্ণর মাথায় ঘুরতে লাগল।
লক্ষ্মী পূজার থেকে লক্ষ্মী প্রতিমা বিসর্জনের দিকে পাড়ার মানুষের আগ্রহ অনেক বেড়ে গেল। মেয়ের সঙ্গে তার শ্বশুর বাড়িতে কে যাবে! কেউ রাজী নয়। মেয়ে কাঁদছে, মা ও কাঁদছে। পূরবীর জামাইবাবুর সকাল থেকে দেখা নেই। তিনি নাকি বলে গেছেন, তিনি বিশেষ এক কাজে গেছেন। ফিরতে রাত হবে।
অগত্যা পূর্ণ তার শ্বশুরকে বলল,"কোনো চিন্তা করবেন না বাবা। পূরবী একাই আমার সঙ্গে যাবে। আমার সঙ্গে কেউ আসেনি। তাই আমি বলছি, আগামীকাল সন্ধ্যায় বৌভাতের নিমন্ত্রণ রইল। যতজন সম্ভব নিয়ে যাবেন।" পূর্ণ এভাবে কথা বলায় খানিকটা হতবাক হয়ে গেল তার শ্বশুর। পূরবীও তার মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। পূর্ণ বলল,"তোমার ভয় নেই। চলো আমার সঙ্গে।"
তারপর দুজনে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
ট্যাক্সিতে বসে কাকে কী বলে ফোন করছে কিছুই বুঝতে পারছে না পূরবী। সে শুধু ভাবছে, তার শ্বাশুড়ী তাকে মেনে নেবে কিনা। সন্ধ্যার কাছাকাছি পূরবী পৌঁছে গেল শ্বশুর বাড়ির সদর দরজায়।
সদর দরজা খুলতেই পূরবী দেখল একটি ফুলের বাগানের ভিতর দিয়ে পথ। সেটি একটি পুরাতন দ্বিতল বাড়ির দরজা পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়েছে। বাড়ির বারান্দা বেশ উঁচু। পৈঠা দিয়ে উঠতে হয়। সেখানে দাঁড়িয়ে পূর্ণ ডাকল,"মা, কোথায় আছো? এক্ষুনি বেরিয়ে এসো।"
ঘরের দরজা খোলাই ছিল।
"যাচ্ছি বাবা যাচ্ছি। কাল থেকে কোথায় যে ছিলি! ভেবে রাতে আমার ঘুম হয় না।" বলতে বলতে বেরিয়ে এলেন পূর্ণর মা। তাদের দেখে থমকে দাঁড়ালেন। কিছুক্ষণ স্তম্ভিত হয়ে রইলেন। পূর্ণ কিছু বলার চেষ্টা করল। তার মা গম্ভীর হয়ে বললেন,"কোনো কিছু বলার দরকার নেই। ওখানে চুপ করে দাঁড়া। যতক্ষণ না আমি বলছি তোরা ঘরে ঢুকতে পারবি না।"
তারপর তিনি ঘরের ভিতর গিয়ে দরজা দিলেন। ভয় পেল পূর্ণ। পূরবী তাকে বলল,"এবার কি হবে?"
"সব ঠিক হয়ে যাবে," তাকে আশ্বাস দিল পূর্ণ।
দেখতে দেখতে ভরে গেল উঠোন। গ্রামের মানুষ জেনে গিয়েছে। আধঘন্টা পরে বরণডালা নিয়ে বেরিয়ে এলেন পূর্ণর মা। পেছন পেছন একটি বৌ শাঁখ বাজাতে বাজাতে এলো। সে পূর্ণদের বাড়িতে থালা-বাসন মাজে, কাপড় কাচে। পূর্ণর মা বধুবরণ করে নতুন বৌকে ঘরে তুলে নিলেন।
পূর্ণ তাদের বিয়ের ঘটনা মাকে বোঝাতে চাইল। তার মা বললেন,"আমি কিছু শুনতে চাই না। আমার বাড়ির লক্ষ্মী এসে গেছে। ঘরে সন্ধ্যা প্রদীপ দেবার লোক পেয়ে গেছি। তুই গ্রামের লোক আর কণেযাত্রীদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা কর।"
"খামারে সব ব্যবস্থা হচ্ছে। প্রতুলও আসছে।" বলল পূর্ণ।
"প্রতুল কে?" জানতে চাইল পূরবী।
"আমার বন্ধু। খাদ্যদপ্তরে একই সঙ্গে চাকরি করি," উত্তর দিল পূর্ণ।
পূর্ণর উত্তর শুনে খুশিতে ভরে উঠল পুরবীর মন।
সন্ধ্যায় পুরবীর মা ফোন করে মেয়ের কাছে কুশল জানতে চাইলেন।
পূরবী তার মাকে সব কথা শোনাল। সে জানাল,"কাল বৌভাতে গ্রামের সব লোককে নিমন্ত্রণ করেছে আমার শ্বাশুড়ী। জানোতো মা, তোমার জামাই খাদ্যদপ্তরে চাকরি করে। আর আমার শ্বাশুড়ী আমাকে খুব ভালোবাসেন।"
পুরবীর মা তাদের জন্য মঙ্গল কামনা করলেন।
_________________________
হারান চন্দ্র মিস্ত্রী
গ্রাম ও পো- আমতলা,
থানা-ক্যানিং,
জেলা-দক্ষিণ ২৪ পরগনা,
পশ্চিমবঙ্গ, ভারতবর্ষ,
পিন নং-743337
মোবাইল নং- +91 9733702450
হোয়াটস অ্যাপ নং-+91 9733702450