ঋণস্বীকার- ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত।
রিন্টু ও পিঁপড়ে
ইমরান খান রাজ
আজ রিন্টুর ২য় সাময়িক পরীক্ষার ফল প্রকাশ হবে। তাই সে খুব চিন্তিত। কারণ বাবা বলেছে পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করতে হবে। না করতে পারলে ভয়াবহ শাস্তি ! সবেমাত্র চতুর্থ শ্রেণীতে পড়াশোনা করে রিন্টু। এরপরও বাবার কঠোর নির্দেশনা। আজ ক্লাসে গিয়ে সবার পেছনের বেঞ্চে বসে সে। কারও সাথে কথা না বলে, মাথা নিচু করে চুপটি মেরে বসে থাকে। এদিকে স্যার প্রবেশ করেছে ক্লাসে। এক এক করে ডেকে সবার রেজাল্ট তাঁর তাঁর হাতে তুলে দিচ্ছেন স্যার। হঠাৎ ডাক পড়লো রিন্টুর। স্যারের ডাকে সারা দিয়ে সামনে এগিয়ে যায় সে। স্যার রেজাল্ট হাতে দিয়ে বললেন, বাবা রিন্টু, তুমি পড়াশোনা করো না কেনো? এইবারও তোমার দুই বিষয়ে ফেল এসেছে। বার্ষিক পরীক্ষায় কিন্তু ভাল ফলাফল করতে হবে৷
স্কুল ছুটির পর ধীর পায়ে হেঁটে বাসার দিকে যেতে থাকে রিন্টু। বাসায় পৌঁছে প্রথমে মা'কে রেজাল্ট কার্ড দেখালে মা কিছু না বলে সরাসরি রিন্টুর বাবার কাছে নিয়ে যায়৷ বাবা তো রেজাল্ট দেখে বেজায় চটে যান রিন্টুর ওপর। খুব রাগারাগি করে তাঁকে। পরে তাঁর মা বুঝিয়ে-শুঝিয়ে রিন্টুকে নিয়ে পাশের রুমে চলে যায়। বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে রিন্টু। খুব আদরের। বাবার স্বপ্ন, রিন্টু একদিন অনেক বড় হবে। তাই ছোটবেলা থেকেই তাঁর পড়াশোনার ব্যাপারে বাবা খুব কঠোর। তবে বাবার খুব প্রিয় এবং আদরের ছেলে সে। কিন্তু আজ রিন্টুর খুব মন খারাপ। বাবা বকেছে তাঁকে ! মা খাবার টেবিলে দিয়ে খেতে বলে। তবে সে খাবার না খেয়ে শুধু এক বোতল পানি নিয়ে চলে যায় মাঠে।
মাঠের এক কোণে বসে সে একটু একটু করে পানি খায়। হঠাৎ সে লক্ষ্য করে, তাঁর পাশেই একটা গর্ত। সে খুব আগ্রহ নিয়ে গর্তের ভিতরে চোখ দেয়, দেখার জন্য। কিন্তু ভিতরে অন্ধকার থাকায় কিছুই দেখতে পারে না। তখন সে তাঁর হাতে থাকা পানির বোতল নিয়ে পুরো পানি ঢেলে দেয় গর্তের ভেতর। কিন্তু কোন সারা শব্দ নেই। হঠাৎ বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার শুনতে পায় রিন্টু। তারপর দেখে গর্তের ভেতর পানির মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে এক পিঁপড়া। রিন্টু তো অবাক! পিঁপড়ে আবার কথা বলতে পারে ? পিঁপড়ের আর্তনাদ শুনে, রিন্টু দৌড়ে গিয়ে একটা গাছ থেকে ডাল ভেঙে আনে। সেই ডালটি গর্তে ঢুকিয়ে পিঁপড়েটিকে উপরে তুলে আনে রিন্টু। জীবন বাঁচানোর জন্য রিন্টুকে ধন্যবাদ জানায় পিঁপড়ে। তখন পিঁপড়েটি বলে, তুমি কি আমার বন্ধু হবে? রিন্টু পিঁপড়ের কথা শুনে রাজি হয়ে যায়। তারপর রিন্টু, পিঁপড়ে'কে জিজ্ঞেস করে, তুমি এই গর্তে একা কেনো? তোমার বাবা-মা কোথায়? বাবা-মায়ের কথা শুনে পিঁপড়েটির মন খারাপ হয়ে যায়। তারপর মৃদুস্বরে উত্তর দেয়, গত বর্ষায় আমার বাবা-মাসহ আমার প্রজাতির সকল পিঁপড়ে পানিতে ডুবে মারা যায়। এখন একমাত্র আমিই বেঁচে আছি। আমার কোনো বন্ধু নাই। আমি খুব একা। এই কথা শুনে রিন্টু বলে, কে বলেছে তুমি একা! আজ থেকে তো আমরা দু'জন বন্ধু। আমরা সারাজীবন বন্ধু হয়েই বেঁচে থাকবো৷ রিন্টুর কথা শুনে পিঁপড়েটি অনেক খুশি হয়। তারপর রিন্টু ও পিঁপড়ে মনের আনন্দে গল্প করতে থাকে।
--------------------
নামঃ ইমরান খান রাজ
শিক্ষার্থী, শেখ বোরহানউদ্দিন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজ।
ঠিকানাঃ সাতভিটা, নারিশা, দোহার-ঢাকা ১৩৩২।
মোবাইলঃ 01930173778 অথবা 01843234606