ধারাবাহিক উপন্যাস ।। পরজীবী - পর্ব- ৬ ।। অভিষেক ঘোষ
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ
১৯৮৮ - ১৯৯১
বছর বাইশের মাধবী, সুন্দরপুর থেকে মাইল দশেক দূরে ব্লকের একমাত্র হসপিটালের বেডে যখন বাইকের স্টার্ট নেওয়ার কর্কশ শব্দে অন্ধকার একটা কালঘুম থেকে জেগে উঠলো, তখন ব্যথার সমুদ্রে ভাসতে থাকা তার শরীর পুরোপুরি টালমাটাল মনের দখলে চলে গেছে । সে কী মনে রাখতে চায় আর কী ভুলে যেতে চায়, কোনটা আগে, কোনটা পরে; এবং সবকিছুর মধ্যে যে একটা 'কেন' থাকে - এগুলো কোনোকিছুই আর তখন তার নিয়ন্ত্রণে নেই । তার মন শরীরের অসহ্য ব্যথার সলিলে মোচার খোলার মতো দুলছে তখন । একের পর এক ফ্ল্যাশব্যাক, তার জীবনের সবচেয়ে আতঙ্কের মুহূর্তগুলোই যেন ফিরে ফিরে আসছে তার মাথায়... বছর দুই আগে.. ১৯৮৮ । সেই ঘূর্ণিঝড় ।
"গেল রে... চালটা উড়ে গেল.." - মজিদ কাকার আর্তনাদে পিছন ফিরে সে দেখে, দূরে উড়ে চলে যাচ্ছে টিনের চালাটা ! গরু-ছাগল আর ভেড়াগুলো চিল্লামিল্লি লাগিয়ে দিয়েছে । তার পঙ্গু বাবা দাওয়ায় বসে আছে, সহদেব মন্ডলের একটা পা অকেজো । চরের মালিক কৃষ্ণকান্ত মিত্তির তার বাবাকে একটা ক্রাচ বানিয়ে দিয়েছে ! কিন্তু কেন ? মাধবী নেহাৎ ছোটো নয় । সে সবই বোঝে । পেটের ভাত জোটাতে তার মা সাবিত্রী, কৃষ্ণবাবুর সাথে শোয় মাঝে-মাঝে । সে তার মা আগেও অনেকের সাথে শুয়েছে । লোকে আড়ালে বলাবলি করে, তার আসল বাবা নাকি কৃষ্ণবাবুই ! ওই লম্বা, চওড়া, বছর চল্লিশের লোকটা সত্যিই কি তার বাবা ? সেই জন্যই কি মাধবীকে লোকটা কখনও বকে না বা, তার পঙ্গু বাবা সহদেবের মতো কখনও গায়ে হাত তোলে না ? নোংরা গালিগালাজ করে না ? এসব নিয়ে অনেক ভেবেছে সে । যদিও কৃষ্ণবাবুর চোখ-মুখের সাথে তার চোখ-মুখের কোনো মিলই নেই । তবু যদি কথাটা সত্যি হয় ? তাহলে কৃষ্ণবাবু এখন কোথায় ? সেই ছাব্বিশ তারিখ লোকটা শেষবার এসেছিলো, সেদিন সারা রাত তার মা পাশের ঘরে জন্তুর মতো শব্দ করেছে, সে শুনেছে । অভ্যাস মতো এই রাতগুলো সে ঘুমোতে পারে না আর তার বাবা সহদেব এই রাতগুলো নদীর কোলে গিয়ে চুপ করে বসে থাকে । তক্তপোশ থেকে নামার পর লোকটা রেডিওতে খবর শুনছিলো... কী যেন সব শব্দগুলো.. মালাক্কা.. আন্দামান.. সীমান্ত.. ঘূর্ণিঝড়.. ২০০ কিমি. গতিবেগ.. উফফ্ !
সরকারী দপ্তর থেকে দু-জন লোক এসেছিল, বোট থেকেই মাইক নিয়ে তাদের দায়সারাভাবে সাবধান করে গিয়েছে ২৭ তারিখ । তাদের পাঁচটা ডিঙি আছে মোট, জনা চল্লিশ লোক । কিন্তু এতগুলো জীব-জম্তুর কী হবে ? হাঁস-মুরগি, ছাগল-ভেড়া তবু নৌকায় তুলতে পারে, গরু-মোষ এই অবস্থায় জলে ভাসিয়ে ওপারে তুলতে গেলে, ডিঙি সমেত তারাও ভেসে যাবে । অথচ এই সময় এত জল থাকার কথা নয়, কিন্তু টানা বৃষ্টি হলে তো জল থাকবেই । এইজন্যই সেবার ভোটে দাঁড়ানো এক বাবু এসে ভাঙা মন্দিরতলায় দাঁড়িয়ে বলেছিলো, এখানে স্কুল বানিয়ে লাভ নেই, হাসপাতাল বানিয়েও লাভ নেই, সব তো নদীই নিয়ে নেবে আজ না হয় কাল ! গত পঞ্চাশ বছরে পশ্চিমবঙ্গের নথি থেকে নাকি মুছে গিয়েছে তিন-তিনটে গ্রাম পঞ্চায়েত আর তার পঞ্চাশটার মতো মৌজা ৷ সরকারি হিসেবে তারা ‘অস্তিত্বহীন’ ৷ এক একজন মানুষ কত বার যে ভিটেচ্যুত হয়েছে, তারা নিজেরাই তার হিসেব রাখতে পারে না । ভাঙনে বিঘের পর বিঘে চাষের জমি, বাড়ি-ঘর, গাছপালা, মন্দির-মসজিদ, রাস্তাঘাট সব জলের তলায় চলে যায় ৷ তারপরে কয়েক বছরের মধ্যে নদীর বুকে নতুন চর জেগে উঠতে থাকে ৷ দুই একটা বছর টিকে গেলে, পলিতে চর উঁচু হয় ৷ ধীরে ধীরে চরের জমি চাষযোগ্য হয় ৷ ভিটে হারানো কৃষিজীবী মানুষ সেই চরে গিয়ে বসত তৈরি করে, চাষাবাদ শুরু করে ৷ বসত শুরু করার পরে যে যতটুকু পারে, জমি দখলে নিয়ে চাষ করতে শুরু করে ৷ কিন্তু তার পরেই জমির সাবেক মালিকরা সেই জমির মালিকানা দাবি করতে আসে । তখন মাপজোখ শুরু হয় ৷ কিন্তু ডাঙা থেকে দুই তিন কিলোমিটার দূরে নদী পেরিয়ে ওই চরের জমির মালিকানা ঠিক হবে কী করে ? তখনই ঢুকে পড়ে কৃষ্ণকান্তবাবুর মতো লোক । এনারা চরে প্রজা বসান নানা টোপ দিয়ে । যেমন মহিষপোঁতা গ্রাম থেকে তাদের এনে এখানে যখন বসানো হয়েছিলো, মাধবী তখন ক্লাস ফোরে পড়তো । তার পরও সে চার বছর মহিষপোঁতা আদর্শ বিদ্যাপীঠে পড়েছে । এইট পাস করার পর তার মা স্কুল ছাড়িয়ে তাকে ঘরের কাজে পুরোপুরি বহাল করে । তাছাড়া সহদেবের পক্ষে অনেক কিছুই করা সম্ভব হয় না, সেসব মাধবীকেই করতে হয় । সে স্কুলও অবশ্য তেমনি ছিল, মাস্টার আসে না অর্ধেক দিন । এলেও রচনা লিখতে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে, নয়তো ছাত্রদের বলে পাকা চুল বেছে দিতে । মাধবীকে অঙ্কের মাস্টার বলেছিলো কতবেল এনে দিতে, চালতা আনতেও বলেছিলো একবার, আনলে ও পাঁচ নম্বর বেশি পাবে । আর স্কুল ? মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ বলতে ওই তো পাঁচটা ডিঙি । পাঁচ মাইল মতো দূরত্বে মহিষপোঁতা, তার ওপাশে আবার একটা চর । এসব চরে প্রশাসন নেই, পঞ্চায়েতও নেই ৷ কারণ তাদের ভোট নেই ৷ সেখানে মানুষ বেঁচে থাকে প্রকৃতির ভরসাতে ৷ রাস্তা-ঘাট নেই, ঝড়-জলে নিরাপত্তা নেই, পানীয় জল নেই, চিকিত্সা নেই, পুলিশ নেই, ডাকঘর নেই, তাই শিক্ষার বালাইটুকুও নেই ৷ লাল ঝান্ডারা শুধু আসে ভোট চাইতে ।
চাষ ছাড়া যারা কিছু পারে না, তাদের জমির কাছেই থাকতে হয় । তাও তো অনেকে ঝাঁটা বাঁধে, মহিষপোঁতা বা চণ্ডীপুরের বিড়ির দোকানে কাজ করে, একটা সাবানকল-ও হয়েছে ওদিকে । ওদিকের চরেও তো কতো মানুষের বসত ! এতো চাষ আবাদ, কিন্তু বড়ো কোনও গাছ নেই ৷ বড়ো গাছ দেখেই চরের বয়স আন্দাজ করা যায় ৷ তাদের এই ঝাউখালির চরে কিন্তু দুটো বড়ো গাছ আছে । শুধু তো ধান চাষ নয়, বর্ষার পরেই ঝাউখালির চর জুড়ে শুরু হয় অবৈধ পোস্ত চাষ । আলু ও অন্যান্য সবজি চাষের জমিতেই প্রতি বছর পোস্তর চাষ শুরু হয়, এসব ব্যাপারে কৃষ্ণকান্তবাবুর কথাই শেষ কথা, হাজার হোক্ ফাটকা লাভ বলে কথা । তাছাড়া চরের দক্ষিণের জমিতে ভালোই ফসল হয় । নদীর পলি জমে, সেই মাটিতে সারও দিতে হয় না, জলসেচের খরচও বাঁচে । তাই তারা দক্ষিণে রয়েছে । উত্তরের মাটিতে বালি বেশি । বালি আবার বিক্রিও হয় কিছু কিছু, তবে সে বালি অতো ভালো নয় । বালির মাঝেই চাষাবাদ এবং গরু-ছাগল পালন উত্তরের চরবাসীদের প্রধান জীবিকা । ধান ছাড়াও মরিচ, আলু, কপি, গমও চাষ করে ওরা । বেশিরভাগ চরে বালির মাটি হওয়ার কারণে রাস্তা বাঁধার কোনো গল্পই নেই । তবে যেসব চর দীর্ঘদিন আগে জেগেছে, সেই সব চরে এখন দোঁয়াশ, এঁটেল মাটির স্তর তৈরি হয়েছে । এসব এঁটেল, দোঁয়াশ মাটির চরগুলোতে রাস্তাঘাট চোখে পড়ে না যদিও, সবই পায়ে-চলা রাস্তা । দশ-বিশ কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটেই তাদের বাজারে কেনা-বেচা করতে যেতে হয় । বিশেষ করে এসব চরাঞ্চলের চাষের মাল বিক্রির সময় সকলকেই বিপাকে পড়তে হয়, ঘাড়ে-পিঠে বয়ে বয়ে বাজার পর্যন্ত মাল আনতে হয় তাদের । তবে বর্ষায় দুয়ারে জল উঠে আসে, তখন ডিঙিতেই সুবিধে, যদি না সবটাই ডুবে যায় । চরের মানুষ খুবই পরিশ্রমী, তাদের শ্রমকে ব্যবহারও করতে জানে এই কৃষ্ণবাবুর মতো লোকেরা । তবে তাতে নদীপাড়ের মানুষদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয় না । এন.জি.ও. কাজ করতে এলেও বাবুরা কায়দা করে ভাগিয়ে দিতে জানে । হারানের মাকে সেবার কাঠের চৌকিতে শুইয়ে, তাতে বাঁশ লাগিয়ে ঘাড়ে করে বয়ে, অনেক দূরের পথ পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছিল, ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে, বাঁচে নি । তাছাড়া অল্প বয়সে বিয়ে আর বাচ্চা হয়েই কত মেয়ে মরে যায় ! তার কপাল ভালো ! সহদেবের হাতে থাকলে হয়তো সে এতদিনে বরের ঘরে বাসন মাজতো আর গাঁদাল পাতার ঝোল রাঁধতো । কিন্তু কৃষ্ণবাবু কখনও জোর করেন নি । কেন ? তার আসল বাবা বলেই কি ? সেভাবে ডেকে কথা না বলুক, লোকটা মনে মনে নিশ্চয় তাকে মেয়েই মানে । কিন্তু কৃষ্ণবাবু যে বলেছিলেন, ঝড়টা চলে যাচ্ছে পশ্চিমে ? তাহলে ?
সেই ঝড়টা ঘুরে যেতে যেতেও ফিরে এলো । গরীবের ঘরদোর জলের ঝাপটায় আর নদীর ভাঙনে শেষ হয়ে গেলো । কৃষ্ণবাবু এলেন না ! কেনই বা আসবেন ! তবে কি লোকটা তার বাবা নয় ? লোকটা এসে কেন তাদের নিরাপদ কোথাও নিয়ে গেল না ? সে জানে, শুনেছে, সুন্দরপুর বলে একটা গ্রামে বাবুদের বিশাল ঘরবাড়ি আছে । তার একটা কোণে ওরা রাতটা থাকলে কী ক্ষতি হতো ? আচ্ছা বেশ... মাধবী এর শোধ নেবে.. যেমন করে পারে ! এইসব ভাবতে ভাবতেই দক্ষিণের চরের সমস্ত গবাদি পশুর সাথে, খোঁয়াড়ে বসে সারা রাত সে ঝড়ের শোঁ শোঁ শব্দ শুনেছিলো আর মনে মনে বাবা-সংক্রান্ত সমস্যাটার মোকাবিলা করেছিলো । তাকে বাবার বিষয়ে ভাবতেই হল কারণ, ওই দুর্যোগেও সহদেব মন্ডল পাকা বাড়িটায় আসতে চায় নি । বাবুরা বলেন, চরের মানুষগুলোর চেয়ে জন্তুগুলোর দর বেশি, তাই ওদের জন্য পাকা বাড়ি । ঝড়-জলে দুনিয়া ভেসে গেলে ওখানে জন্তুগুলো থাকবে । সহদেব তখনই জানিয়েছিলো, সে মানুষ । সুতরাং সে কোনোদিনই ওইখানে পা রাখবে না, রাখেও নি । সেই ঝড়ের রাতেও সহদেব ওদের পলিথিন-আঁটা খড়ের চালের মাটির বাড়ির ভিতরেই থেকে গিয়েছিলো । কাঠের জানালায় বৃষ্টির বড়োবড়ো ফোঁটার একটানা নিষ্ঠুর ধাক্কা শুনেই বোঝা গিয়েছিলো, কী বৃষ্টিটাই হচ্ছে । তারপর ভোর হতে না হতে কুলকুল করে নদীর জল ঢুকে এল খোঁয়াড়ে । সকাল হতে একহাঁটু জলে দাঁড়িয়ে তারা ক্রমে বুঝলো, ঝড়ের প্রকোপ একটু কমেছে । তখন খোঁয়াড়ের মোটা কাঠের দরজাটা খুলতেই হুড়মুড়িয়ে একগাদা নোংরা জল, শামুক, মরা মাছ আর গৃহস্থালির বর্জ্য ঢুকে এলো ঘরে ।
সকাল বেলা যখন সে ফের নদীর পাড়ে গিয়ে দাঁড়ালো, নদীটা তখন অনেক মোটা হয়ে গেছে । কয়েক শত বিঘে খেয়ে ফেলেছে নদীটা । মাটির ঘরগুলো সব পড়ে গেছে, সেইসঙ্গে সহদেব মন্ডলও । সহদেবকে দেওয়ালের নিচ থেকে টেনে বার করে, বৃষ্টিতেই কবর দেওয়া হলো । চরের মানুষের অতো ধর্মীয় সংস্কার নেই । প্রচণ্ড খিদে পেটে থাকলে চোখ থেকে সেভাবে জল বেরোয় না, সেদিনই বুঝেছিলো মাধবী । হাঁটু জল কুলকুল করে বইছে, তাই সহদেবের দেহটা টেনে নিয়ে গিয়ে ময়লা ফেলার উঁচু ঢিবিটায় পুঁততে হল, তাও কি থাকবে ? জলে হয়তো টেনে নেবে । জমা জলে ভাসছে প্রচুর মরা মাছ, ভাঙা কাঠকুটো, ভিজে খড়, ছেঁড়া পলিথিন, নারকেল পাতা, গাছের ভাঙা ডাল । ধান জমিগুলোর দিকে তাকানো যায় না ! ওখানে কি আর কোনোদিন চাষ করা যাবে ? মতি কাকার বাগানের বেড়া উড়ে গিয়ে ছাতিম গাছে ঝুলছে দড়িদড়া সমেত । তাদের দাওয়ায় কাঁকড়া ঘুরছে সেই দুদিন আগে থেকে । তখনও কুলকুল করে জল ঢুকছে চরের বস্তিতে । তাদের মাটির ঘরের পিছনের দেওয়াল ভিতরপানে মুখ গুঁজে সবটা পড়ে গেছে, তার নিচেই ছিল সহদেবের নিঃসাড় দেহ । ছবিদি ওই দূরে খোলা জায়গাতেই জলের উপর হাগতে বসে গেছে, ওদের প্লাস্টিক-জড়ানো পাইখানার ঘরটাই উড়ে গেছে, কিন্তু রোজকার অভ্যেসটাতো আর ঝড়ে উড়ে যায় নি, হাগা তো পাবেই । বাবুরা মানুষগুলোর কথা ভাবে না, কিন্তু একটা ইঁটগাঁথা পাকা খোঁয়াড় বানিয়ে রেখেছে । সকলের সব গরু-মোষ, ছাগল-ভেড়া, হাঁস-মুরগি ওইখানেই ছিল রাতে । সেগুলো তাই টিকে গেছে । এরকম ঝড়-জল মাধবী আগে দেখে নি । এবার তারা হাঁটা দেবে, লম্বা হাঁটা । সবাই যতটুকু বওয়ার ক্ষমতা, সেইমতো মালপত্র নিচ্ছে সাথে । তারা সুন্দরপুর যাবে, বাবুরা আসে নি তো কী হয়েছে ! তারাই যাবে । ঝাউখালির চর থেকে জল পেরিয়ে, প্রায় বারো-চৌদ্দ মাইল রাস্তা । কিন্তু এই ভয়ঙ্কর ঝড়টা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে যখন তারা, সুন্দরপুরে পৌঁছোতেও পারবে । তাদের এখন মাথা গোঁজার মতো একটু জায়গা আর দুটো শাক-ভাত দরকার । একটা ডিঙি ভেসে গেছে, বাকি চারটে খুঁজে বের করে তারা । তারপরও লম্বা পথ, বড়ো রাস্তায় উঠে ফোর স্কোয়ার কিংগস্-এর ঝড়ে কাত হয়ে ঝুলতে থাকা বিজ্ঞাপনী হোর্ডিংয়ের নীচে দাঁড়িয়ে, এইট পাস মাধবী মনে মনে হিসেব করেছিলো, কতক্ষণ হাঁটলে বারো-চৌদ্দ মাইল রাস্তা পেরিয়ে যাওয়া যায়... কতটা শক্ত হলে তার আসল বাবার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, সব হিসেব, সব দাবী বুঝে নেওয়া যায় ।
*** *** *** *** *** *** *** *** *** *** *** ***
"এবার আপনাদের শোনাবো 'সোনার খাঁচা' ছায়াছবির একটি জনপ্রিয় গান, কথা ও সুর বীরেশ্বর সরকার । গেয়েছেন লতা মঙ্গেশকর । শুনতে থাকুন..." বেতারে নারীকন্ঠটি থেমে যেতেই একটা মৃদু শব্দ হল, তারপর গানটা শুরু হল...
"বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি..
এ কোন্ অপরূপ সৃষ্টি,
এতো মিষ্টি মিষ্টি মিষ্টি
আমার হারিয়ে গেছে দৃষ্টি !"
সহসা তন্দ্রা ভেঙে জেগে উঠলো মাধবী । শরীরে অসহ্য ব্যথা । সে আবার চোখ বুজলো, আর তার চোখের সামনে হাজির হল প্রচণ্ড বৃষ্টির এক রাত । ঝড় থেমে গেছে । বৃষ্টি তখনও চলছে । তারা তখন সুন্দরপুরে মিত্তিরদের দুতলা বিরাট বাড়িটার সামনে ভিড় করেছে । সবাই মোটামুটি অনুভব করেছে, বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় দেখে এসেছে তারা । রেডিওতে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বারবার বলছিলো, "ঘন্টায় প্রায় ২০০ কি.মি. গতিতে ২৯শে নভেম্বর বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তের স্থলভূমিতে আঘাত করে এই ঘূর্ণিঝড় । এই গতিতেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ও শক্তিশালী অবস্থা ধরে রাখে । ৩০ নভেম্বর সকাল পর্যন্ত বাংলাদেশের মধ্যবর্তী অঞ্চলে মাঝারি ঘূর্ণিঝড় হিসাবে সক্রিয় ছিলো । উপকূলবর্তী এলাকায় প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড়ে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, ফসল নষ্ট হয়েছে, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে টেলিযোগাযোগ বিঘ্নিত সর্বত্র । আশঙ্কা করা হচ্ছে এপার ও ওপার বাংলা মিলিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ, অনেকের সন্ধান পাওয়া যায় নি ।…" যারা বৃষ্টিতে ভিজছে এবং আশ্রয় খুঁজছে, তাদের কাছে খবরগুলো অর্থহীন প্রচার বলে মনে হয় । সবকটা মাথা তখন ঝুঁকে আছে, পেটগুলো খিদেয় অস্থির । মাধবীই সেই রাতে একটা বিরাট ভূমিকা নিয়েছিলো উপস্থিত চরবাসীদের সামনে কৃষ্ণকান্ত বাবুকে হাজির করতে ।
*** *** *** *** *** *** *** *** *** *** *** ***
বছর ষোলোর একটা ছেলেকে মাধবীই প্রথম দেখতে পায়, দোতলার ঘরের জানালা দিয়ে নিচে, তাদের জটলাটার দিকে চেয়ে থাকতে । সে কিছু না ভেবেই প্রথমে হাতছানি দিয়েছিলো ছেলেটাকে । উত্তরে ছেলেটা সশব্দে জানালাটা বন্ধ করে দেয় । মাধবীর মাথায় যেন আগুন জ্বলে ওঠে দপ করে । সে একটা টুকরো ইঁট মাটি থেকে কুড়িয়ে নিয়ে, ছুঁড়ে মারে জানালাটা লক্ষ করে । ইঁটটা ওই জানালাটায় লাগে না, লাগে তার পাশের জানালায় । ঝনঝন করে কাচ ভেঙে পড়তেই ভিতর বাড়িতে একটা শোরগোল ওঠে । তারা জনা পঁচিশ-তিরিশ নারী-পুরুষ, বাচ্চা-কাচ্চা বৃষ্টিতে প্রেতের মতো দাঁড়িয়ে ভিজছিলো আর কাঁপছিলো ঠান্ডা বাতাসে । ঢিলটা বাড়ির মধ্যে সেই খবর পাঠিয়ে দিলো । দুটো বড়ো বড়ো আলো তখুনি জ্বলে উঠলো সদরে । একজন বছর বাইশের স্বাস্থ্যবান যুবক নেমে এল তরতরিয়ে । মাধবীর চোখ যেন ঝলসে গেল তাকে দেখে ! কী রূপ ! মাথায় প্রায় ঢেউ খেলানো বড়ো কেতার চুল । চকচকে মুখ-চিবুক । শুধু একটা পাজামা পরে, এলো গায়ে নেমে এসেছে । হাতে ওটা কী ? বন্দুক ?
কৃষ্ণকান্ত একধাপ নেমে রাশভারী গলায় প্রশ্ন করেন, "জানালায় কে ঢিলটা ছুঁড়েছিলো ? কী হোলো ? কে ছুঁড়েছিলো ?"
ভিড়টা সেই মুহূর্তেই সন্ত্রস্ত হয়ে দু-পা পিছিয়ে যায় । "রাধা !" বলে একটা হাঁক দেন কৃষ্ণকান্ত । বন্দুকটা ভিড়ের উদ্দেশ্যে অনির্দিষ্টভাবে ধরে রেখে রাধাকান্ত সদরে এসে হাসতে থাকে । তখন কোথা থেকে যেন সাহস সঞ্চয় করে দু-পা এগিয়ে যায় মাধবী । তার দিকে তাকিয়ে নিমেষে চোখের ভাষা বদলে যায় রাধাকান্তর, মাধবীর ভিজে শরীরটা দেখে সম্ভবত তার ভিতরের হিংস্র শিকারিটা জেগে ওঠে ! জানে না মাধবী । কিন্তু তখন তার সেটাই মনে হয়েছিলো ।
"কী বলতে চাও ? খাবার চাই ?" - কৃষ্ণকান্ত সংযত হয়ে বলেন
"সেই চর থেকে এত দূর হেঁটে আসলাম শুধু দুমুঠো খেতে ? ঝড়ে ঘর-বাড়ি উড়ে গেল, বাপটা মরে গেলো, নিজের বাবা হলে, কখনও এই বিপদে ফেলে যায় না । কোথায় ছিলেন আপনি ?" - কথাগুলো বলতে বলতেই মাধবীর গলা ধরে আসে । কেন বললো সে ওই কথাগুলো ? – সে জানে না ।
শিস দিতে দিতে রাধাকান্ত মন্তব্য করে, "মেয়েটার বুকের পাটা আছে যাই বলেন ! বাবা, মেয়েটাকে চেনেন নাকি ?"
উত্তর না দিয়ে কৃষ্ণকান্ত বৃষ্টির মধ্যেই নিচে নেমে যান, সোজা এগিয়ে গিয়ে মাধবীর কাঁধে বাঁহাতটা রাখেন । তার মা সাবিত্রীর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করেন, "সহদেব বেঁচে নেই ?"
সাবিত্রী শুধু ঘাড় নাড়ে । তারপর যেন অনেক দ্বিধার পাহাড় ঠেলে বলে, "আমাদের কী হবে বাবু ? আপনার ভরসাতেই এতদূর এলাম্ ।"
"চিন্তা কোরো না । ব্যবস্থা একটা হয়ে যাবে ।" - কথাটা নিচু গলায় বলে আরেকটু গলা তুলে কৃষ্ণকান্ত সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, "দালানে চলো সবাই, ওখানেই রাতটা কাটাও, তারপর দেখছি ।" তারপর চেঁচিয়ে উঠে বলেন, "রাধা, নিতাইকে সাথে নিয়ে নেমে আয় । সঙ্গে মুড়ি, চিঁড়ে আর গামছা, শুকনো কাপড় গোটাকতক - যা হাতের কাছে পাবে, আনতে বল্ । কতজন আছে গো তোমাদের ?" - ভিড়ের দিকে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিয়েছিলেন তিনি ।
তারপর সব ম্যাজিকের মতো ঘটে গেলো । প্রায় এক হপ্তা মতো তারা মিত্তিরদের পুজোর দালানে উঠলো, আটচালার নিচে দশ-বারোটা পরিবার আর তাদের রান্নাবান্না, গল্পগুজব, খাওয়া-দাওয়া । তাদের দেখাশোনার দায়িত্ব নিলো রাধাকান্ত, অবশ্যই নিজের তাগিদে । সেদিন রাতেই যখন তারা সবে দুমুঠো খেয়ে শুয়েছে, রাধাবাবু পায়চারি করছিলো হাতে একটা ঝোলানো বাক্স নিয়ে, তার থেকে গান ভেসে আসছিলো... মনে পড়ে মাধবীর –
"এত সুর আর এত গান..
যদি কোনোদিন থেমে যায়
সেইদিন তুমিও তো ওগো
জানি ভুলে যাবে যে আমায় !"
*** *** *** *** *** *** *** *** *** *** *** ***
সেই রাতের পর থেকে কখনও রাধাকান্ত, কখনও সদানন্দ মিত্তির ওদের খাবার দিয়ে যেত । পরে অবশ্য ওরা জেনেছিল, সরকারি সাহায্য পাচ্ছেন কৃষ্ণকান্ত মিত্র, কায়দা করে সেটাকেই এমনভাবে কাজে লাগিয়েছেন, যাতে মনে হয় চরবাসীদের জন্য তাঁরই যত দরদ ! রাধাকান্ত সদানন্দকে 'কাকা' বলে ডাকতো, তাই মাধবীও সদাবাবুকে কাকা বলতো । মাধবী প্রথমে অনেক চেষ্টা করেছিলো, রাধাকান্তর ছোটো ভাইদুটোর সাথে ভাব করে নিতে । কিন্তু মেজোটা খুব টেঁটিয়া আর বদ, খালি বলে ‘তোমাদের গায়ে গন্ধ’, বলেই নাক টিপে ধরে পাশে থুতু ফেলতো । একদিন ছুটে দালান পার হতে গিয়ে ছোটো চন্দ্রকান্ত ছিটকে পড়ে গেল ! মাধবী শুধু তার হাতটা ধরে তুলতে গেছে, সূর্যকান্ত বলে উঠলো, "ছোঁবে না আমার ভাইকে !" ওমা ! ওইটুকু পুঁচকে সেও দাদার দেখাদেখি বলে কিনা... "তোমাদের গায়ে গন্ধ । চলে যাও আমাদের আটচালা থেকে ।" তারপরও মাধবী বলেছিলো, "দেখি তোর কোথায় কেটে গেছে ? কয়লা পাতা ঘষে এইটুক্ লাগিয়ে দিলেই হবে ।" - বলে হাতটা ধরতে যেতেই ওইটুকু ছোঁড়া দু-হাত পাকিয়ে তার দিকে ছুঁড়তে লাগলো ! নাক টিপলে দুধ বেরোয়, তার আবার কত্ত তেজ ! মনে হতো, ঠাস করে গালে একটা চড় বসিয়ে দেয় ।
এসবের উল্টো দিকে ছিল রাধাকান্ত মিত্তির । একদিন ক্রিকেট খেলা চলছে পাশের মাঠে, রাধাকান্ত ব্যাট করছে । এপাড়ার খাবার জলের একমাত্র কল মাঠের কোলে । মাধবী মামনির কথামতো জলের বড়ো ঘড়া নিয়ে যাচ্ছে, রাধাকান্তর মা বলেছিলেন, তাঁকে 'মামনি' ডাকতে, সে তাই বলতো, টুকটাক কাজ করে দিতো, অন্যদের মতো নিজেকে গুটিয়ে রাখতো না কৃতজ্ঞতায় । রাধাকান্ত তাকে দেখেই বলে উঠলো, "খেলবে নাকি ? ব্যাট করতে পারো ?"
কী বলবে মাধবী ? তখন কী বলা উচিত তার ? সে বুঝে পায় নি । থতথত খেয়ে বলেছিলো, "পারি না"... ওইটুকু কথাতেই সকলের কী টেনেটেনে হাসি । তখন তার মনে হলো, না পারার কীই বা আছে ? সঙ্গে সঙ্গে সে বলেছিল, "ঠিকাচে খেলবো ! কিন্তু ব্যাট করবো ।"
শয়তানটা অমনি বললো, "না না থাক্, তোমার বুকে লেগে যাবে । এখানে বল বড্ড লাফায় ।"
"দেখিই না কির'ম লাফায় !"
রাধাকান্ত তার হাতে ব্যাটটা ধরিয়ে দেওয়ার সময় ইচ্ছাকৃত একটু ছুঁয়ে দেয় আঙুলগুলো । মাধবী শিউরে উঠেছিলো ।
"আমার নাম জানো ?" আলতো গলায় বলেছিলো রাধাকান্ত, উত্তরে মাধবী ঘাড় নাড়তেই বললো, "কেমন মেয়েদের মতো নাম.. নয় ? তুমি আমায় কী বলে ডাকবে ? রাধা বলবে ?" বলতে বলতেই সরাসরি মাধবীর পিঠে তার একটা হাত ঘুরে গেলো । অপ্রস্তুত অবস্থাতেও সে বলেছিলো, "রাধাবাবু বলে ডাকি ?" বলে ব্যাট করতে দাঁড়িয়েছিলো । তার পরনে ছিল মামনির দেওয়া একটা পুরোনো চুড়িদার । রঙটা ম্যাড়মেড়ে, কার কে জানে ! চরে তারা কখনও ওসব ব্যবহার করে নি, এখানে মামনি একটা পাতলা ওড়না দিয়ে শিখিয়েছে, সবসময় বুকে আড়াআড়ি বেঁধে রাখতে । মামনি চোখে ভালো দেখে না, তারপর কর্তার উপর কত্ত অভিমান, সেভাবে বাইরে বেরোয় না, কিন্তু এখানকার লোকগুলো যে সুবিধের নয়, বুঝতে খুবই পারে । মাধবী মামনির কথা মতো, ওড়নাটা আড়াআড়ি বেঁধে নেয় । রাধাকান্ত এগিয়ে আসে, বলে "দাঁড়ানোটা ঠিক হয় নি, আমি দেখিয়ে দেবো ?" মাধবী জানে, এসব গায়ে হাত দেওয়ার তাল । সে কোনো সাড়া দেয় না ।
তারপর দেখা যায় অন্যরা বল করছে, রাধাকান্ত বাদে । বাবলু বলে একজন তাকে বল দিতে, রাধাকান্ত বললো, "আমি মেয়েদের বল করি না ।"
মাধবীর মাথা ফের গরম হয়ে গিয়েছিল ! ন্যাকামি ! তাহলে ডেকেছ কেন খেলতে ? কিন্তু সে কিছুই বলতে পারে নি সেদিন । একটা বলও সেদিন তার ব্যাটে লাগে নি, হয় কাপড়ে জড়িয়ে গেছে, নয়তো হাতে পায়ে লেগেছে, নাহলে সাঁ করে কানের পাশ দিয়ে ছুটে গেছে উইকেটের পিছনে, আর ওরা চেঁচিয়ে উঠেছে, হেসে উঠেছে তার বোকামিতে । সেদিনই রাধাকান্তর সঙ্গে তার প্রথম কথা বলা, প্রথম স্পর্শ বিনিময় । ওকে তার ভালোও লাগতো, আবার রাগও হতো খুব ! ভাবতে ভাবতেই মাধবীর চোখের কোল থেকে জল গড়িয়ে পড়ে । কী মারটাই মারলো রাধাবাবুকে ক'জন মিলে... তার চোখের সামনে !
*** *** *** *** *** *** *** *** *** *** *** ***
কৃষ্ণবাবুর অনেক লোক লাগানো আছে চারিদিকে, তারাই কেউ রাধাকান্তর সাইকেলে তার সাথে মাধবীকে লাইব্রেরীর পিছনে গড়ের পারে ঘুরতে দেখে ফেলেছিলো । কৃষ্ণবাবু প্রথমে তাকেই ধরেছিলেন, "জাতে ওঠার শখ হয়েছে ? আমার দয়াতেই এই বাড়িতে আছিস, ভুলে যাস নে । রাধার পোঁদে পোঁদে ঘোরা বন্ধ কর্ । আর তাছাড়া... তাছাড়া ভাই-বোনে ওসব হয় না !"
"ভাই-বোন ? ও যদি আমার ভাই হবে, তবে আমি তোমার বাড়ি খেটে মরি কেন ? চরের লোক বলে গতর সস্তা ?" - রুখে দাঁড়িয়েছিল মাধবী ।
"আমার মুখে মুখে চোপা ! এতো দুঃসাহস ! বেয়াদপ মেয়েছেলে ! ফের যদি রাধার সাথে ঘুরতে দেখি, চামড়া গুটিয়ে নেবো ।"
কৃষ্ণবাবুর হুমকি মিছে ছিল না, এখন সে হাড়ে-হাড়ে বুঝছে । তাকেই শাস্তিটা দিতে চেয়েছিলো, রাধাকান্ত লোকগুলোকে বাধা দিতে গিয়েই মারটা খেলো । তারা এর আগে মোটে দুবার মিলিত হয়েছে বাড়ির গুদাম-ঘরে । প্রথম বার সে বাধা দিয়ে বলেছিলো, "আমি না তোমার বোন হই ?" তার গালে আলতো চড় মেরে রাধাকান্ত বলেছিলো, "বোন না ছাই !" - সে জানতো চড় খেলে মাধবীর সাহসটা ঝট করে অনেকটা বেড়ে যায় । তবুও রায়েদের বাড়ির অত কাছে, ক্লাব ঘরে তাদের ঝুঁকি নিয়ে শোয়াটা বাড়াবাড়িই হয়ে গিয়েছিলো । মাধবী এই হাসপাতালে এসেই জেনেছে, তার গর্ভে রাধাকান্তর বাচ্চা আসছে । কিন্তু গোল বাঁধিয়েছে সদাকাকা ! তার ধারণা রাধাকান্ত তাকে রেপ করেছে ! বুড়োর মাথাটা গেছে… ভীমরতি ।
ক্রমশঃ-----