বিনিতা রায় পেশায় একজন দিনমজুর।দুবেলা দু'মুঠো খাবার জোগাড় করার জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি জীবিকা নির্বাহ করেন।তার সংসারে রয়েছে টান।নুন আনতে পান্তা ফুরোয়।তাই তিনি রোজ কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন এবং সন্ধ্যেবেলায় মজুরি নিয়ে বাড়ি ফেরেন।দুই মেয়েকে নিয়ে দুকামরার একটি টালির ঘরে থাকেন।পনেরো বছরের বড়মেয়ে অচিরা ক্লাস নাইনে এবং ছোটো দশবছরের ছোটো মেয়ে তিতলি পড়ে ক্লাস ফাইভে।দুবোন পড়াশোনায় ভীষণ ভালো।
এক সন্ধ্যেবেলায় বিনিতা বাড়ি ফিরে মেয়েদের জানান "এখন আমার হাতে কাজ নেই।নতুন কাজের সন্ধান না পাওয়া পর্যন্ত কয়েকটা দিন আমাকে বাড়িতে থাকতে হবে।"
বড়মেয়ে অচিরা মাকে জড়িয়ে ধরে বলে "তুমি চিন্তা করো না মা।কাজ ঠিক পেয়ে যাবে।"
রাতের বেলায় বিনিতা কলাপাতায় মধ্যে নুন,লঙ্কাপোড়া,কাঁচাপেঁয়াজ এবং সর্ষের তেল সহযোগে যত্ন সহকারে পান্তাভাত পরিবেশন করেন।তিতলি ব্যাজারমুখ করে বলে "মা,আমি পান্তাভাত খাবো না।তাহলে মোটা হয়ে যাবো।আমাকে দেখলে সবাই হাসাহাসি করবে।"
বোনের কথাগুলো শোনার পর অচিরা তারদিকে তাকিয়ে বলে "গ্রীষ্মের রাতে টিমটিম করা লণ্ঠনের আলোয় মাটির দাওয়ায় বসে মাটির হাঁড়িতে জলে ভেজানো পান্তাভাত খেলে শরীর ঠান্ডা এবং সতেজ থাকে।ভাত খাওয়ার সময় হাত থেকে প্রতি গ্রাসে ফোঁটায় ফোঁটায় টপটপ করে তেল এবং জল ঝরে পড়ে এবং লঙ্কাপোড়া দাঁতে কাটার কটাস কটাস আওয়াজ হয়।তবেই পান্তা খাওয়ার সুখ পাওয়া যায় রে বুনিয়া।"
"জানিস শুধু বাংলা নয়,সারা ভারতের অনেকে এই পদটি খান।তবে সব জায়গায় সেটার ভিন্ন নাম রয়েছে।এই খাবার ফারমেন্টেড তাই এটা খেলে শরীর হালকা থাকে এবং এনার্জি পাওয়া যায়।আমাদের বাংলা প্রবাদে আছে 'পান্তাভাতের জল,তিন পুরুষের বল'।তাই তো বাংলা নববর্ষের দিনে বড় বড় শহরের নামীদামী রেস্টুরেন্টগুলোতে পান্তাভাত খাওয়ার রেওয়াজ চালু হয়েছে।"
অচিরার কথা বলা শেষ হওয়ার পরে তিতলি বলে উঠে "আমি দিদিয়ার কথাগুলো বুঝতে পেরেছি।তবে এখন মা আমায় নিজের হাতে খাইয়ে দিলেই আমি পান্তাভাত খাবো।"
এরপর বিনিতা হাসিমুখে দুইমেয়ের মুখে "পান্তাভাত" তুলে দিলেন এবং দুবোনকে নিজের বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরলেন।
---------------------
(✍️কলমে রুবি সেনগুপ্ত)