ছবিঋণ- ইন্টারনেট।
কুড়ানি, এতদিন কোথায় ছিলিস ? অনেক দিন পর তোকে দেখলাম , ভালো আছিস তো? বাগানে পাতা ঝাঁট দিতে- দিতে কুড়ানি বলে না গো দাদু ,একদম ভালো নেই । রেশনে যা চাল আটা পাই মাসের অর্ধেক দিনও চলে না। সব জিনিসপত্রের বাজারদর তো লাফিয়ে- লাফিয়ে বেড়ে চলেছে। গ্যাসের যা দাম বেড়েছে ওই চাল যে ফোটাবো তারও সংস্থান নেই ।তাইতো আবার তোমাদের বাগানে কাঠ কুড়োতে আসতে হল । আমার নামটা যে কে রেখেছিল, সারা জীবনটা কাঠ কুড়িয়ে- কুড়িয়ে পরান জ্বলে গেল।
কেন শুকদেব কাজে যায় না ? শুকদেব কুড়ানির স্বামী ।শহরে ঢালাই কারখানায় কাজ করে ।না গো দাদু, যাচ্ছিল কিন্তু গত দুমাস কোমরের যন্ত্রণায় ভুগছে। কাজ করতে পারে না। ঘরে একটা সমত্তো মেয়ে, ছেলেটা একটা পাশ দিয়ে বেকার ঘুরে ঘুরে মরছে ।কোথাও চাকরি বাকরি পাচ্ছে না ।দিন দিন যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, ছেলেমেয়েরা বেকার হয়ে যাচ্ছে, এবার আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।
কথায় আছে না দাদু ,নদীর ধারে বাস ভাবনা বারো মাস। কবে সেই আমফানের ঝড়ে ঘরের চাল উড়ে গেল, পঞ্চায়েত বাবুরা দেখে গেল ,কোন টাকা দিলে না। উল্টে বলে গেল ঘর পেতে হলে বিশ হাজার টাকা দিতে হবে ।লক্ষীর ভান্ডার পাসনি! তোর মেয়ে কন্যাশ্রী পায়নি! না গো দাদু মিথ্যা বলবুনি, মেয়েটা স্কুলে যেতে বলে কন্যাশ্রী টাকা পেয়েছে। এছাড়া আর কিছু আমাদের দেয়নি। চলি গো দাদু,বেলা হয়ে গেল, এই জ্বালানি নিয়ে গেলে তবে দুটো ফোটাতে পারবো ।আমাদের মত গরীবের কথা কেউ ভাবেনা, সবাই তেলা মাথায় তেল দিতে ব্যস্ত।
কুড়ানির গমন পথের দিকে তাকিয়ে মনে- মনে বলতে থাকি ,গরিবের কথা যারা ভাবতো, আলোর পথে যারা আঁধার দূর করতে স্বপ্ন দেখতো, যারা বেকারদের শিল্প-কলকারখানা করে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখাতো, তাদের মানুষ ভুল বুঝলো।
কুড়ানি তোদের দুঃখ-যন্ত্রণায় যারা ছিল ভাগীদার, দেখিস মানুষ আবার তাদের ফিরিয়ে আনবে । সূর্যের দীপ্তি কে আড়াল করে রাখার ক্ষমতা মেঘের সাময়িক। চিরস্থায়ী নয়।
----------------------
অশোক দাশ।
ভোজান,রসপুর ,হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
মোবাইল নম্বর-৮৩৪৮৭২৫৩৩৩