আজ
মেঘ-প্রিয়ার বিয়ে। ওরা দুজনেই একটা বড় বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত, মেঘ
ওই সংস্থার রিজিওনাল ম্যানেজার,প্রিয়া একাউন্টেন্ট।মেঘকে অফিসের কাছে
দৌড়ে বেড়াতে হয় প্রায় সময়, ও থাকে টালিগঞ্জ এলাকায় বিশাল একটা
কমপ্লেক্সে 3Bhk ফ্ল্যাটে। ওর বাবা-মাও থাকেন ওর সঙ্গে। প্রিয়ার সাথে ওর
আলাপ অফিসেই, প্রথম যেদিন প্রিয়া ঐ অফিসে জয়েন করে সেদিন মেঘ অফিসে ছিল,
নতুন একাউন্টেন্ট কে দেখে মুগ্ধ হয়ে গেছিল ও, পরনে জিনস, হাল্কা রঙের টপ,
টপনট করে বাঁধা চুল, প্রায় প্রসাধনহীন প্রিয়াকে ওর ব্যক্তিত্বই আকর্ষণীয়
করে তুলেছিল মেঘের কাছে। প্রিয়া খুব সুন্দরী নয় কিন্তু খুব মিষ্টি,
মোটামুটি ফর্সা, স্মার্ট,মেঘ উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ, আপাদমস্তক গাম্ভীর্য ওর
অভিব্যক্তিতে।
দুজনের বাক্যালাপ থেকে ধীরে সেটা ভালোবাসায় পরিণত আজ,অফিসের
সবাই এতে বেশ মদতও দেয় তবে সরাসরি নয়, কথাপ্রসঙ্গে বোঝা যায়।প্রিয়া
থাকে বাগবাজার, পুরনো বনেদি বাড়ি, যদিও ওর বাবা-মা মেয়ের আধুনিকতাকে
মেনেই নেন।বাড়িতে প্রিয়ারবাবা মা ছাড়াও থাকে ওর কাকা কাকিমা, তাদের ছেলে
রিক। মেঘ বেশ কিছুদিন ধরেই নিজের ফ্ল্যাটটা সুন্দর করে সাজিয়েছে, ওর
বাবা-মা ও খুব ভালোবাসেন প্রিয়াকে। ছটফটে একটা ছেলে মানুষী আছে ওর মধ্যে,
বাড়িতে থাকলে ছোট ভাইটার সাথে ওর খুনসুটি লেগেই থাকে। প্রিয়াকে আজ একটা
বড় পার্লার থেকে সাজাতে এসেছিল, ওর মা কাকিমা কেও তারা সুন্দর করে সাজিয়ে
দিয়েছে। বাড়িটাও খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে, বাড়িতেই বিয়ের আসর
বসবে সন্ধ্যেবেলা, ছাদে অতিথিদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা।
লগ্ন গোধূলি, সন্ধ্যা
সাতটার মধ্যে, ঠিক বিকেল পাঁচটা, হঠাৎ প্রিয়ার মোবাইলটা বেজে উঠল, ওপারে
মেঘের বাবা উদ্বিগ্ন গলায় - বেটি, মেঘের অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে,
নার্সিংহোমে, সাংঘাতিক জখম, বাঁচবে কিনা জানিনা, শুনে প্রিয়া অজ্ঞান হয়ে
গেল। কাছেই বসে ছিলেন ওর কাকা, উনি তাড়াতাড়ি সবাইকে ডেকে চোখেমুখে জলের
ঝাপটা দিয়ে জ্ঞান ফেরালেন, জ্ঞান ফেরার পর সবাই জিজ্ঞেস করতে প্রিয়া শুধু
মেঘ বলে চুপ করে বসে রইল, ওকে বারবার জিজ্ঞেস করেও কেউ যখন কোন উত্তর
পেলোনা তখন ওর বাবা মেঘের বাবাকে ফোন করতেই সব পরিষ্কার হয়ে গেল। সবাই যখন
চিন্তায় প্রায় অর্ধমৃত তখন প্রিয়া বলল ও মেঘকে ওই লগ্নেই বিয়ে করবে,
প্রত্যেকে বাধা দিল,বললো, মেঘ এখন গুরুতর অবস্থায়, অন্য পাত্রে যদি ওকে
পাত্রস্থ করা যায়। শুনে প্রিয়া প্রচন্ড চেঁচিয়ে উঠে বলল, আমার কপালের
জোরে ও ফিরে আসবে আমার কাছে আজই, এই লগ্নে নয়, পরে যে লগ্ন আছে তাতেই ওর
সাথে আমার বিয়ে হবে, বলে ওই কনের সাজে ও বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত মা কালীর
মন্দিরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে মেঘের প্রাণ ভিক্ষা
করতে লাগলো।
ওদিকে নার্সিংহোমে মেঘকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে ,ডাক্তার নার্স
অক্লান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছে মেঘের প্রাণ বাঁচানোর জন্য। নার্সিংহোমের
বাইরে ওদের অফিস কলিগরা উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করছে, মেঘের মা বারবার
অজ্ঞান হয়ে যাওয়ায় তাকেও ডাক্তারের অবজারভেশনে রাখা হয়েছে, মেঘের বাবা
পাথরের মত বসে আছেন হাতদুটো প্রার্থনার ভঙ্গিতে রেখে। মেঘের সামনে রাখা
হল্টার মনিটরে রেখাগুলো ক্ষীণ হয়ে আসছিল, হঠাৎই হার্টের রেখাগুলো চাঙ্গা
হয়ে গেল। ডাক্তার-নার্স সব মেঘের কাছে ছুটে এলো,দেখলো মেঘ চোখ খুলেছে,সাথে
সাথে ওর বাবাকে জানানো হলো, মেঘ বিপদমুক্ত। এদিকে প্রিয়ার অদম্য জেদে ওর
বাবা কাকা পুরুত মশাই কে সাথে নিয়ে,প্রিয়াকে সঙ্গে করে নার্সিংহোম
অভিমুখে রওনা হয়েছে। 'প্রিয়া চলেছে সুদূরের পথে মেঘ সঙ্গ অভিসারে/ পথে
কখনো ঢাকে চাঁদ/ হৃদয় মুখর প্রিয় মিলন বাসরে'। পথেই তারা জানতে পারে
মেঘের বিপদ কেটে গেছে, সবাই বাড়ির প্রতিষ্ঠিত মা কালীর উদ্দেশ্যে হাত জোড়
করে প্রণাম করে। গল্ফ গ্রীনের নার্সিংহোমে ডাক্তার নার্স আর ওদের দুই
বাড়ির উপস্থিতিতে মেঘ প্রিয়ার চার হাত এক করলেন পুরুত মশাই
মন্ত্রোচ্চারণের মধ্য দিয়ে। অফিস কলিগরা বাইরে আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠলো,
প্রিয়ার বাবা সবাইকে তখনই আমন্ত্রণ জানালেন ওদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য।
মেঘের বাবা বললেন, প্রিয়ার ভালবাসাই ওর মেঘকে ওর কাছে ফিরিয়ে দিল, উনি
ওনার ঘরের লক্ষী নিয়ে যাবেন জোড়ে, মেঘ একটু সুস্থ হলেই। দুই বাড়িতে
সানাই এর আওয়াজ আবার গমগম করতে লাগলো।
* মাসিক কথাকাহিনি অনলাইন গল্পপত্রে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বক্তব্যের সম্পূর্ণ দায়ভার সংশ্লিষ্ট লেখক/লেখিকার; পত্রিকা সম্পাদমন্ডলী বা প্রকাশকের নয়। আমরা বহু মতের প্রকাশকমাত্র।
** প্রতিটি লেখার কপিরাইট সংশ্লিষ্ট লেখক/লেখিকার। কুম্ভিলকবৃত্তির অভিযোগ উঠলে তার সম্পূর্ণ দায়ভারও সংশ্লিষ্ট লেখক/লেখিকার।