"মা মাটি মানুষ"
ঊষা মল্লিক
রোহনের বয়স এখন আট বছর। ছোট্ট রোহন সারাক্ষণ খেলতেই ব্যস্ত। পড়াশোনা রোহনের সবচেয়ে বড় শত্রু। কিন্তু রোহনের একটা বড় গুন আছে। রোহন কিন্তু পাড়ার ঠাকুমা আর দিদিমাদের থেকে অনেক গল্প শোনে। আর কোথাও কোনো পোস্টার বাংলায় লেখা থাকলে তা সে মন দিয়ে পড়ে।
রোহন ওর বাবা কে দেখে মাঠে চাষ করতে। বাবা লাঙল দিয়ে মাটি ঠিক করে। বাবা বলেন, মাটিই হলো চাষের জন্য আসল জিনিস। মাটি ভালো না হলে, ফসল ভালো হবে না। কুমোর পাড়ার জেঠুদের কে সে গনেশ, দূর্গা, লক্ষ্মী ঠাকুর বানাতে দেখে। ঐ জেঠুদের থেকে সে শুনেছে যে, ঠাকুর সুন্দর হয়, মাটি কেমন তার উপরে। পাড়ার ঠাকুমার থেকে রোহন শুনেছে যে ছোট, বড় সব গাছ ই ভালো মাটি পেলে তাহলেই তাড়াতাড়ি বড় হয়,আর আমাদের কে ফুল ফল দেয়। দিদিমা গল্প করে যে শিশুরা মাটিতে খেলা আর ধপাস করে মাটিতে পড়ে যাবার মধ্যে দিয়েই শক্ত পোক্ত হয়। রোহন দেখেছে পাশের বাড়ির দাদু তাদের বাড়ী বানাতে গিয়ে খড় আর মাটি একসঙ্গে দিচ্ছে। আর রোহন তো প্রায় শুনতে পায়, যখন ও রাস্তা দিয়ে যায়, মাইকে করে পাড়ার কাকুরা বলে মা- মাটি- মানুষের সরকার সবার জন্য উপকার করছে। এইসব দেখে শুনে ছোট্ট রোহন বুঝতে পেরেছে যে সব কিছুতেই তো মাটি খুব দরকারি আর উপকারী । পড়াশোনা ভালো না বাসলেও , রোহন স্কুল কামাই করে না। এক মাস্টার মশাই ক্লাসে একদিন 'বাবা আর মা' এই নিয়ে পড়াছিলেন, 'মা' ও তার সন্তান নিয়ে বলছিলেন। রোহন ওর মাকে খুব ভালো বাসে। মার হাতে হাতে রোহন অনেক কাজ করে।যতটা ওর পক্ষে সম্ভব। মাঝে মাঝেই খেলা ছেড়ে দৌড়ে এসে রোহন ওর মাকে জড়িয়ে ধরে চুমু দিয়ে পালায়। মার কিছু কষ্ট হলে , রোহন ও খুব কাঁদে। 'মা' মানে যে ওর জীবনের সবকিছু, তা এই ছোট্ট বয়সেই রোহন বুঝতে পেরেছে। স্কুলে একদিন একজন মাস্টার মশাই রোহন দের ক্লাসে জিজ্ঞাসা করেছেন তার ছাত্র ছাত্রীদের কে, তাদের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি জিনিসের নাম বলতে বলেছেন। মাস্টার মশাই কে অনেক ছাত্র ছাত্রী অনেক রকম উত্তর দিয়েছে। আর রোহনের দিকে মাস্টার মশাই চোখ রাখতেই, রোহন উত্তর দিল, 'মা ও মাটি' হলো তার জীবনের সবচেয়ে দামী আর গুরুত্বপূর্ণ। মাস্টার মশাই রোহন কে জড়িয়ে ধরে বললেন যে তুই খুব বড় মনের 'মানুষ" হবি । শুনেই রোহন বলল "মা-মাটি- মানুষ"।
=======================
Thanks and regards,
Mrs. Usha Mallick
Asso. Prof and HOD,
Department of Nursing,
Aliah University

