টুকাই মোবাইলে ইউ টিউবে কি সব দেখছিল আর মায়ের হাত থেকে ভাতের গ্রাসটা মুখে পুরছিল।কি খাচ্ছে, কেমন খাচ্ছে কোন দিকে তার লক্ষ্য নেই।ওদিকে মা রমলা ও অফিস যাওয়ার তাড়ায় যত তাড়াতাড়ি পারে তার খাওয়ানো শেষ করতে চাইছিল।
শ্বশুর মশাই অনাদি বাবু আর চুপ করে থাকতে না পেরে বলে উঠলেন, বৌমা করছো কি।দাদুভাই যে ভাবে অন্যমনস্ক হয়ে খাচ্ছে তাতে তো গলায় বেঁধে যাওয়ার চান্স আছে।ওর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নাও।কি যে অভ্যাস করেছো তোমরা।ছেলেগুলোর ভবিষ্যৎ সব গোল্লায় গেল।
রমলা শ্বশুর মশাইয়ের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, কি করবো বলুনতো বাবা।ওটা ওর হাতে না দিলে যে খাবে না।চেষ্টা তো অনেক করেছি, কিন্তু কি লাভ হলো তাতে?শুধু ওর খাওয়ার জন্য এক ঘন্টা সময় নষ্ট করা।তার চেয়ে এটাই ভালো।অনাদিবাবু বলেন, শুধু তো খাওয়ার সময় না, ওতো সারাদিনই ফোন দেখে।পড়ে কখন তা তো বুঝিনা।
গজ গজ করতে করতে তিনি তার ঘরে চলে গেলেন।তার আট বছরের নাতি ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে, পড়াশুনার তো কোন নাম গন্ধই নেই।নিজের ছেলে সেই সাতটার ট্রেন ধরে চলে যায় অফিসে,বৌমা বেচারাকেই সব দেখতে হয়।ওর ই বা কি করার আছে।সংসারের কাজ তো আর কম না, তাছাড়া নিজের অফিস আছে।ওর ঠাম্মি টা মরে গিয়ে বেঁচে গিয়েছে, তাকে আর এই সব দেখতে হচ্ছে না।
মনে পড়ে যায় তার নিজের ছোট বেলার কথা।তখন তো শৈশব বাল্যকাল ছিল অন্য রকম। এত পড়াশুনার চাপ ছিল না।ছিল খেলা করার মত কত মাঠ, এখানকার ছেলেবেলার মত ঘরে বসে কাটাতে হতো না।
নিজের ছেলে অতনুর বেলায় ও এমনটি ছিল না।ওরাও কিছুটা মাঠে খেলা করার মত পরিবেশ পেয়েছে।
বৌমা অফিসে চলে গিয়েছে। নাতি টুকাই এর আজ স্কুল বন্ধ।অনাদি বাবুর পাশে বসে সে টিভিতে কার্টুন দেখছিল।সে দাদুকে বলে, আচ্ছা দাদু, আমি মোবাইল দেখলে তুমি বকো কেন গো?
মা বাবা সবাইতো মোবাইল দেখে, তাহলে?তাদের তো কিছু বলো না।অনাদিবাবু নিরুত্তর--হা করে চেয়ে থাকেন নাতির দিকে।
মনে মনে ভাবেন, তাইতো টুকাই তো ঠিকই বলেছে।ওর বাবা মা তারাও তো সুযোগ পেলেই মোবাইল ঘাটে।
টুকাই সকাল বেলা স্কুলে যায়, দুপুরে টিউটর আসে, বিকেলে ড্রয়িং মাস্টার, রাতে আবার বাবা মার কাছে পড়াশুনা করা।কে ওকে মাঠে নিয়ে যাবে, আর যাবেই বা কোথায়।মাঠ বা উন্মুক্ত প্রাঙ্গন বলতে তো কোন জায়গায় নেই।ওর সহপাঠীরা, তারাও ব্যস্ত, সেই স্কুল ছাড়া তাদের সঙ্গে তো দেখাই হয় না।
বেচারা দাদুভাই কি করবে,বাধ্য হয়ে সে মোবাইলেই সময় কাটায়।
সেদিন রাস্তায় সুবল বাবুর সঙ্গে দেখা, কথায় কথা উঠতে তিনিও তার নাতি নাতনি সন্মন্ধে এমনই বলছিলেন।
আসলে কালের তালে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে সবাই যেন কেমন টালমাটাল হয়ে পড়েছি, শিশুদের শৈশব থেকে শুরু করে কত কি ই না হারিয়ে যাচ্ছে জীবন থেকে। এটা ভালো না মন্দ তা বোঝার দায়িত্ব ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হাতে ছেড়ে দেওয়ায় ভালো। নাতির ডাকে সম্বিত এলো অনাদিবাবুর, কি ভাবছো দাদু? ঐ দেখ বিরাট কোহলি সেঞ্চুরি করে ফেললো। অনাদিবাবু নড়ে বসে দাদুভাই এর সঙ্গে সঙ্গে নিজেও হাততালি দিতে শুরু করলেন ।
------------------------------