ফুলট্যাঙ্কি পেট্রল ভরে নেয় আব্দুল। রাতে ট্রাক চালাতে তার খুব মজা।
শীত পড়েছে জাকিয়ে, তার উপর শুরু হয়েছে টিপটিপ বৃষ্টি। সে আস্তে ট্রাক চালায়, পিছনের গাড়িকে পাশ দেয় সামনে এগিয়ে যেতে।তার হেল্পার হিমু বলল,গুরু শিয়ালডাঙা ছাড়িয়ে এলাম।
আব্দুল এ'কথার ইঙ্গিত বোঝে, হিমু বড় সেয়ানা মাল। সামনেই হীরা সিংয়ের ধাবা।
পরে আরও অনেক ধাবা আছে, তবে তাদের খাবার অতো ভাল নয়।
অনেক ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে ধাবার সামনে।আব্দুল তাদের ট্রাকটাও একটা ট্রাকের পিছনে দাঁড় করায়। হিমু লাফ দিয়ে নীচে নেমে পড়ে।
চারপাশে ধানের ক্ষেত,সামনে এক টুকরো জলা জমি। তার পাশেই চারটে টালি খড়ের ছাউনি - হীরা সিং- এর ধাবা।
সামনে অনেকগুলো নারকেল দড়ির খাটিয়া পাতা।
ওরা এসে একটা খাটিয়ায় বসে, খাবারের অর্ডার দেয়।
খেতে খেতেই অনেকটা দেরী হয়ে গেল। কব্জী উল্টে ঘড়ি দেখে চমকে উঠল আব্দুল। সে দাম মিটিয়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি ট্রাকে উঠে,স্টিয়ারিং ধরে গিয়ার চেঞ্জ করল। ততক্ষণে হিমু গাড়িতে উঠে পড়েছে।
দেখতে দেখতে অনেকটা পথ পেরিয়ে এলো ওরা। সামনে আম বাগানের পাশ দিয়ে সোজা রাস্তা। আবদুল দেখে হিমু ঘুমিয়ে পড়েছে। বদমাশ ছোকড়া,শুধু খাওয়া আর ঘুম, আব্দুল মনে মনে ভাবল।
ঘুম বড় ছোঁয়াচে ভেবে সেদিক আর তাকাল না সে। বড় 'সরল দিঘি'টার কাছে আসতেই চমকে ওঠে আব্দুল। জায়গাটা নিরিবিলি,জনপ্রাণীহীন।সামনের দিকে তাকিয়ে চোখের পলক পড়ে না তার। ব্রেক কষে সে গাড়ি দাঁড় করায়।
সামনেই দু দুটো আলোর বল নাচছে।
একবার উপরে উঠে যাচ্ছে, একবার নীচে নেমে আসছে। আব্দুল আঙুল দিয়ে চোখ কচলায়।সামনে যা দেখতে পায়,তা দেখে আর তার মুখ দিযে কথা সরে না।
ভূত নয় তো? ভূত হলে তো আলো দেখলে ভয় পেত। তবে?
আব্দুল দ্বিধায় পড়ে। হিমুকে ডেকে কোন লাভ নেই ।
সে নাক ডেকে মরার মতো ঘুমোচ্ছে।
আলোর বল দুটো এখন যেন আলোর গোলা হয়ে এদিক সেদিক ছুটে বেড়াচ্ছে।
জলাভূমির অপদেবতা নাকি অন্য কোন গ্রহের জীব, এলিন নাকি আবার? নাকি কোন ডাকাত দল? দুঃশ্চিন্তা বাড়ল তার, ট্রাকে লাখ টাকার উপরে এলুমনিয়াম পাত রয়েছে। তাহলে সে কি করবে?
সে ঠিক করল, তাই যদি হয়, তবে আল্লার নাম করে ফুলস্পীডে গাড়ি চালিয়ে দেবে ওদের উপর দিয়ে, তারপর যা হয় হবে। এসব ভাবতে না ভাবতেই আলোর গোলা দুটো নাচতে নাচতে এসে ঝাপিয়ে পড়ল গাড়ির উপর।
এই আকস্মিকতায় আব্দুল গাঁ গাঁ করে গোঙাতে গোঙাতে অজ্ঞান হয়ে গেল।
অনেক পরে হিমুর ডাকে, চোখে মুখে জলের ঝাপটা খেয়ে জ্ঞান ফিরল তার।
সে মনে মনে ভাবল, রাতে গাড়ি চালাবার শখ তার মিটেছে, আর নয়।
অজ্ঞতার অন্ধকারে ডুবে থাকার ফলে, এই ভূতের ভয়টা আজও তার মনের ভিতরে সেঁদিয়ে রয়েছে, জুজুবুড়ির মতো।
------------------------------------------------------------------------