রিং বেজেই চলেছে, দেওয়াল ঘড়ি টিক্ টিক্ শব্দে, আপন মনে কাজ করে চলেছে। বারান্দা হাঁ করে চেয়ে আছে। সোফায় বসে কৃষাণু এখন অন্য জগতের মানুষ।
এদিকে ঈশিতা ফোন করেই চলেছে। একবার ঘরের ভেতর, একবার বারান্দায়, অস্থিরতার একটা মানচিত্র টপকানোর গল্প। মাথা হিজিবিজি চিন্তার পাণ্ডুলিপি লিখছে।
এদিকে সোফায় বসে কৃষাণু হতাশার জাল বুনছে।
বর্তমান আর ভবিষ্যত কৃষাণুকে জাপটে ধরে টানাটানি করছে। এ যেন শুকনো আড়ায় বর্জপাত।সত্য ও মিথ্যার দোলাচলে ঘুরতে ঘুরতে, সহসা টেবিলের ফোনটার আওয়াজ কানে আসতেই, ফোনটা হাতে তুলে দেখল-এতো ঈশিতার ফোন! কুড়িটা মিসকল দেখা যাচ্ছে। অগত্যা কৃষাণু উল্টে ঈশিতাকে ফোন করল।
ঈশিতার গলার স্বর ভেসে এল-তুমি কোথায় ছিলে কৃষাণু ? কৃষাণু বলল- তোমাকে একটু পরে আবার ফোন করবো। এই বলে কৃষাণু ফোনটা কেটে দিলো।
এদিকে ঘটনার সত্যতা পুনরায় যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে, বন্ধু তন্ময়কে ফোন করল কৃষাণু। সঙ্গে সঙ্গেই ফোন ধরে তন্ময় বলল-খবরটা আমার কাছেও আছে, আমি ও ঠিক বিশ্বাস করতে পাচ্ছি না। দেখা যাক সার্কেল অফিস তো সঠিক খবর জানাবে। আমার আর কিছুই ভালো লাগছে না। একই উত্তর কৃষাণুও তন্ময়কে দেয়। তারপর দুটো ফোন একসময় বোবা হয়ে যায়।
এদিকে অস্থির ঈশিতা, কৃষাণুর ফোনের আশায় অপেক্ষা করছে। সামনের মাসেই বিয়ের সব কথাবার্তা ঠিক করতে হবে। দীর্ঘ চার বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটবে। মা-বাবার ঘাড়ে বসে খাওয়ার দিন শেষ হয়ে যাবে। সহসা ঈশিতার হাতের ফোনটা বেজে ওঠে। তড়িঘড়ি ফোনটা হাতে ধরেই বলে-তোমার কী শরীর খারাপ হয়েছে? আমায় বলো, সব ঠিক হয়ে যাবে।
কৃষাণু বলে-তুমি শুনলে অবাক হয়ে যাবে। আমাদের বিয়েটা এখন আর হবে না, আবার অপেক্ষা করতে হবে। আমার স্কুলের চাকরিটা আর নেই। আমাদের জেলার ক্যানসিল লিষ্টে, এক নম্বরে আমার নামটা আছে। এরপর দুটো ফোনই আবার নিস্তব্ধ হয়ে যায়।
=============
অজিত কুমার জানা
গ্রাম +পোষ্ট-কোটরা, থানা-শ্যামপুর,
জেলা-হাওড়া, পিন-৭১১৩০১,
পশ্চিমবঙ্গ।