রুটি
প্রতীক মিত্র
শহরের এই দিকটায় এখনো পুরোনো পুরোনো গন্ধ।লম্বা লম্বা রকওলা শ্যাওলাধরা ছড়ানো-ছিটোনো বাড়ি, ফ্ল্যাট এদিকটাতে বড়ই বেমামান। তেমনই কোনো একটা বেঢপ বাড়ির একটা কোণে বসে রুটি বানায় পিন্টু মিত্র।সকালে অন্য একটা কিছু করে যেটা কারোরই বিশেষ জানা নেই।মোট কথা শহরের বাইরে যায়।বিকেল থেকে রুটি নিয়ে বসে।সঙ্গে আলুর তরকারি, তড়কা।ভীড় আগে অনেক বেশি হত।এখন প্রতিটা মোড়ে রুটির দোকান বলে…ওর অবশ্য কারো সাথে প্রতিযোগিতা নেই।একা মানুষ।দিনান্তে যেটুকু লাভ হয় চলে যায়।ওর দোকান খোলার আগে থেকেই রকে এসে বসে থাকে বাবু পাগল।আসলে সে পাগল নাও হতে পারে,উসকো-খুসকো চুল, নোংড়া জামাকাপড়… হুলিয়ার জন্যই মূলত বলা।তাছাড়া সারাটা দিন যেভাবে শহরের এ মাথা থেকে ও মাথা বিনা কারণে চষে বেড়ায় তাতে ওকে সুস্থ ভাবার কোনো কারণতো থাকেই না।বাবু পাগলের বাড়ি আছে।সে বাড়িতে ভাই, দাদা, তাদের বউ- বাচ্চা নিয়ে বিরাট পরিবার।এইসব ফ্ল্যাট সংস্কৃতির যুগে এমন হৈহৈ করে সবাই মিলে সংসার যাপনে ওদের পরিবারের সুখ্যাতি সর্বত্র।কুলাঙ্গার এই বাবু পাগল।সে ব্যাটাই ছন্নছাড়া।একে নিঃসন্তান তার ওপর বউ মারা যাওয়ার পর থেকে পুরোপুরি একা।ভাইদের দাদাদের একটু শুনলেই হত।জ্বালাতন কতদিনই বা আর লোক সহ্য করবে?তাই এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।পিন্টু অত ব্যাখ্যা চায়না।ও আবেগ দিয়ে মানুষকে মাপতে পারে।আর ও এটাই বুঝেছে যে যত যাই হোক, বাবুর পরিবার বাবুর ক্ষতি করেছে।না ও কারোকে এই নিয়ে কিছু বলতে যায়নি। যেমন বলতে যায়নি যে কিভাবে প্রত্যেক সন্ধ্যেতে ও বাবুকে রুটি খেতে দেয় বিনা পয়সায়। কি লাভ এইসব বলে?ওই যে পিন্টু মিত্র দোকান খুলছে।একটু দুরে উদাসীন চোখে বসে বাবু পাগল।শহরের এটা সেভাবে পাত্তা না পাওয়া এলাকাই বলা যায়।রাস্তার আলোগুলো এখানে মাঝে মাঝেই দপদপ করে।শপিং মল এসব জায়গায় হলে ভাল বাজার পাবে না।ফ্ল্যাট এদিকে বড়ই বেমানান।এখানে পুরোনো পুরোনো গন্ধটা খুব বেশি।সেই পুরোনো সময়েরই দুজন কুশীলব: পিন্টু মিত্র আর বাবু পাগল।পিন্টু মিত্রের গরম রুটি বানানো শুরু হলে বাবু পাগল একটু নড়েচড়ে বসে।আখ্যানটা একটু এগোয়।অন্যদিনের মতন।
=============
প্রতীক মিত্র
কোন্নগর, পশ্চিমবঙ্গ