বহুকাল আগের কথা।ধু ধু এক মাঠে এ গল্পের জন্ম।মাঠটি ছিল এত বড় যে এক কিনার থেকে আর এক কিনার দেখা যেত না।পোড়ো মাঠ।তাই নেহাত দায়ে না ঠেকলে কোন মানুষজন এ মাঠ দিয়ে যাওয়া আসা করত না।মাঠটি ছিল শেয়াল ভোঁদড়দের মতো ছোট জন্তু জানোয়ারের রাজত্ব।আর ছিল বিভিন্ন কীট পতঙ্গের বাসভূমি। চিল শকুনের শিকার ধরতে যাওয়া আসার জায়গা।এই বিশাল মাঠের মাঝ বরাবর ছিল বহু পুরোনো একটা বট গাছ।বিশাল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে ছিল তার ডালপালা।অঢেল ঝুরির জঙ্গলে ভরা।কবে কিভাবে গাছটা ওখানে জন্মাল বড় হল কেউ জানে না।গাছটায় অনেক ধরনের শত শত পাখি বাসা বানিয়ে বাস করত।এই বট গাছের শেকড়র ফোকরে বাস করত একটা গোখর সাপ।আর এক পাশে একটা গর্তে বাস করত একটা নেউল।সারাদিন এরা মাঠে ঘুরে বেড়াত।বিভিন্ন পোকা মাকড়,ছোট ছোট প্রাণী ধরে খেত।রাতে যে যার বাসায় ফিরত।প্রায় প্রতিদিন সকালে খাবারের খোঁজে বেরুবার সময় গোখর আর নেউলের দেখা হত।তবে এক দণ্ড পরেই দুজনে দুদিকে চলে যেত।বেশ কিছুদিন এভাবে চলল।তার পর এক সকালে গোখর নেউলকে বলল--কি হে,কোথা থেকে এসে জুটলে এখানে?
নেউল বলল--পুবের গ্রাম থেকে।
--চলে এলে কেন?
--গেরস্থরা ফাঁদ পেতে ধরতে চেয়েছিল।ফাঁদ কেটে সোজা এখানে।আর গ্রাম মুখো হইনি।কিন্তু তুমি এখানে কি করে এলে?
--সে অনেক কথা।সবে ডিম ফুটে আমরা বেশ কজন বেরিয়েছি।চোখ ফোটার আনন্দে এক দিন আমরা কয়েকজন বাইরে বেরিয়েছিলাম।একটা মাটির ঘর।তার পিছনে একটা জুতসই গর্ত।তার মধ্যে আমাদের মা আমাদের জন্ম দিয়েছিল।মা বাইরে বেরুতে বারণ করে খাবারের খোঁজে গেছিল।সেই ফাঁকে আমরা কজন বাইরে।ঘুরতে ঘুরতে আমরা গেরস্থের উঠোনে গিয়ে পড়ি।বাড়ির কর্তা আমাদের দেখে ফেলে।লাঠি দিয়ে আমাদের কজনকে মেরে ফেলে।আমি দৌড়ে ঝোপে গিয়ে লুকোই।সেই সময় মা খাবার নিয়ে ফিরছিল।আমাকে খুঁজতে গিয়ে মাকে দেখে ফেলে কর্তা।গর্তের খোঁজও পায়।মা গর্তে ঢোকার পর গর্তের মুখে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে মা আর অন্যরা সবাই মরে যায়।আমি লুকিয়ে সব দেখি।তার পর সুযোগ বুঝে সোজা দৌড়।এখানে এসে থামি।
নেউল ভাবে গোখরটা তার চেয়েও বেশি দুঃখী।নেউলের মনটা টনটন করে ওঠে গোখরোটার কথা ভেবে।বেচারা-----!সবাইকেই হারিয়েছে।
এর পর থেকে রোজ সকালে দুজনের দেখা হত। দুএকটা কথাও হত।দিন গড়াতে থাকে।শেষে দুজন দুজনের বন্ধু হয়ে যায়।
বন্ধুত্ব পোক্ত হতে থাকে দিনে দিনে।একে অপরকে বিশ্বাস করতে অরম্ভ করে।কিছুদিন পার হয় এভাবে।এক সকালে গোখর বাইরে যাবে বলে ফোকর থেকে বের হয়।এদিক ওদিক তাকিয়েও নেউলের দেখা পায় না।নেউল কি তবে এলাকা ছেড়ে চলে গেল? কিন্তু তা হলে তো তাকে বলে যেত।কাল সাঁঝে তো সে ফিরেছিল গর্তে।তবে কি তার অসুখ বিসুখ হল কিছু! কিন্তু কাল সাঁঝে তো তাকে দেখে তেমন কিছু মনে হয় নি!না কি বেশি খেয়ে ফেলেছিল কাল? পেটটা তো কাল বেশ মোটাই দেখাচ্ছিল।কদিন সে নিজে তেমন শিকার পায় নি।পেট ভরেনি তার।তাই খিদে নিয়ে ফোকরে ফিরেছে।মন ভালো ছিল না।ভালো করে তাকানো হয়নি বেশ কিছুদিন নেউলের দিকে।হয়তো আগে থেকেই শরীর খারাপ হচ্ছিল একটু একটু করে।আজ অবস্থা কাহিল।বন্ধু হয়ে এভাবে অবহেলা ঠিক হয়নি তার।আগেই খোঁজ নেওয়া উচিত ছিল।
সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে নেউলের গর্তের কাছে আসে গোখর।ডাক দেয় গলা ছেড়ে নেউলকে। গর্তের ভেতর থেকে খুব আস্তে আস্তে সাড়া দেয় নেউল।গোখর বলে--তোমার কি অসুখ করেছে বন্ধু?
নেউল বেশ দুর্বল স্বরে বলে--না তো।
--তা হলে বাইরে এলে না কেন? কাল তো গেছিলে খাবারের খোঁজে-----!
--আজ আর যেতে পারব না বন্ধু।গত রাতে আমার ছানা হয়েছে।শরীর বেশ দুর্বল।আজ না খেয়েই থাকতে হবে।তা ছাড়া-----!
--তাই বুঝি! এ তো বেশ ভালো কথা।ঠিক আছে বন্ধু।তুমি থাক।বাচ্চার দেখভাল কর।আমি যাচ্ছি খাবারের খোঁজে।তোমার জন্যেও কিছু আনব মুখে করে।সন্ধ্যে পর্যন্ত।ভেবো না, আমি তো আছি।বন্ধুর প্রয়োজনে বন্ধুই তো পাশে থাকে।সময় নষ্ট করছি না বন্ধু।সাঁঝে কথা হবে।আমার ফেরার অপেক্ষায় থেকো।আমি চললাম।
সন্ধ্যেয় ফিরল গোখর।দুএকটা মেরে ফেলা ছোট হাঁসের ছানা নিয়ে।নেউলের গর্তমুখে গিয়ে গলা ছেড়ে বলে--বন্ধু---তোমার জন্যে সামান্য কিছু খাবার এনেছি।গর্তমুখে রাখলাম।একটু কষ্ট করে এসে নিয়ে যাও।সারা দিন দৌড়োদৌড়ি করে আমি বেশ অসাড়।আজ আর কিছু বলছি না।একটু জিরিয়ে নিই ফোকরে গিয়ে।তোমার ধকল ও বড় কম নয়।সারা দিন কাটল না খেয়ে।তার ওপর-----!কাল সকালে কথা হবে।
---ঠিক আছে বন্ধু।তুমি ফোকরে যাও জিরোও।আমার জন্যে তোমার ধকল গেল বড়।কি আর করব।কদিন মনে হচ্ছে বাইরে যেতে পারব না।ছানাটা একটু ডাগর না হলে-----!
---ঠিক আছে বন্ধু।আমি ও বুঝতে পারছি ধকল কম নয় তোমারও।আমি চেষ্টা করব কদিন তোমাকে কিছু জোগাড় করে দিতে।উপোস করতে না হয় যাতে।কদিনের তো ব্যাপার---। চল তা হলে।
গর্তের বাইরে এসে নেউল দেখল গোখরকে।বেশ কাহিল লাগছে তাকে।বললে--এসো বন্ধু।তোমাকে আর আটকে কথা বাড়াব না।তোমার কাছে আমার দেনা হল।এটা আরও বাড়বে মনে হচ্ছে।দেখি কবে কিভাবে শোধ দিতে পারি।
--কিসের দেনা!বন্ধুর সাহায্য নিলে দেনা হয় না বন্ধু।মনে কিন্তু রেখো না।আমারও অসময় আসতে পারে। তখন তো তুমিই ভরসা।
--ঠিক কথা। যাও ফোকরে যাও।আমিও গর্তে ঢুকি।ছানাটা বড় বেশি নড়াচড়া করছে।সামলাতে হবে।
গোখর চলে গেল।নেউল ঢুকে গেল গর্তে।দিন পার হতে থাকে।নেউলের ছানাটা আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে।এখন মাঝে মধ্যে গর্তের বাইরে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে সে।নেউল বাধা দেয়।বোঝায়--চিল শকুনের চোখে পড়লে ছোঁ মেরে নিয়ে যাবে।পায়ে জোর বাড়ুক।দৌড়ে গর্তে ঢোকার মতো চৌকশ হও।তার পর বাইরে বেরুবে।ছানা পাহারা দিতেই দিন কাটে যায় নেউলের।তাকে ছেড়ে খাবারের খোঁজে যেতে সাহস হয় না।কখন কি ঘটে যায়!এখনো ছানাটা জোরে দৌড়োতে পারে না।তবে সারা দিনে দুএক বার নেউল বাইরে নিয়ে আসে তাকে।গর্তের আশেপাশে ঘুরতে দেয়।কড়া নজর রাখে সব দিকে।বেশি দূরে যেতে দেয় না ছানাকে।চিল শকুন বা শেয়াল বনবেড়ালদের আসা যাওয়ায় সতর্ক থাকে।গোখর প্রতি সন্ধ্যায় কিছু খাবার এনে দেয় তাকে।এখন ছানাটাও ভাগ বসায় একটু আধটু।নেউলের পেট ভরা খাবার জুটছে না বেশ কিছু দিন।সে বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে আগের থেকে।তবু ছানার কথা ভেবে বাইরে দূরে যায় না তাকে রেখে।আরও কিছু দিন যাক।আর একটু বড় হোক সে।ছানার জন্যে এটুকু কষ্ট তো তাকে করতেই হবে।
এক সন্ধ্যায় গোখর আর এলো না।গর্তমুখ থেকে তাকে ডাকল না।খিদেয় তখন অস্থির নেউল।কিন্তু করারও নেই কিছু।সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা তো করতেই হবে তাকে।গোখর কি বন্ধুত্ব শেষ করে দিল?রোজ রোজ এত ধকল হয়তো সে নিতে পারছে না।না কি তার অসুখ বিসুখ হল? সে কি খাবারের খোঁজে মাঠ পেরিয়ে লোকালয়ে গেছিল?মানুষের নজরে পড়ে জীবন খোয়াল?না কি আস্তানা ছেড়ে চলে গেল?নতুন আস্তানা পেয়ে গেছে হয়তো।সাত পাঁচ ভাবনায় রাত ভারি হতে থাকে নেউলের।
সাত সকালে ছানাকে পই পই করে বুঝিয়ে গর্তে রেখে বাইরে বেরোয় নেউল।এগিয়ে যায় গোখরর ফোকরটার দিকে।কাছে পৌঁছোতেই চোখে পড়ে তার একটা খোলস।ফোকরের বাইরে।কিছু অনুমান করে তাকায় ফোকরটার দিকে।গোখর ফোকরটার মধ্যে গোল হয়ে পড়ে আছে।নড়চড়া করছে না আদৌ।বুঝতে কিছু বাকি থাকে না নেউলের।বলে--বন্ধু,তোমার অবস্থা মনে হচ্ছে বেশ কাহিল।খোলস ছেড়েছ মনে হচ্ছে?
--হ্যাঁ বন্ধু।কাল বেলার দিকেই ঘটেছে।তাই যেতে পারিনি কাল।এখন আরও দুএক দিন বাইরে বেরুতে পারব না আদৌ।তোমার খুব অসুবিধে হবে।কিন্তু-----!
--কি আর করা যাবে।আমার চেয়ে তোমার অসুবিধে তো অনেক বেশি।তুমি থাক।অনেক করেছ আমার জন্যে।আজ দেখি আমি কিছু করতে পারি কি না।গর্তে গিয়ে ছানাটাকে বুঝিয়ে আমি বেরুব।যত তাড়াতাড়ি পারি ফিরব।তোমার জন্যেও কিছু যোগাড় করতে পারি কি না দেখি।তুমি ফোকরেই থাক।
নেউল ফেরে গর্তে।ছানাটাকে বুঝিয়ে বলে সব।সতর্ক করে বার বার।তার পর বেরিয়ে পড়ে খাবারের খোঁজে।সকাল গড়িয়ে বিকেল হয়।নেউল একটা মাঝারি মাপের কুনো ব্যাঙ নিয়ে আসে মুখে করে।গোখরর জন্যে।ছানার জন্যেও একটা খরগোশের বাচ্চার ঠ্যাঙের অংশ।গর্তমুখে গিয়ে ছানাকে ডাকে।ঠ্যাঙটা তাকে দেয়।গর্তের ভেতর ঢোকা পর্যন্ত অপেক্ষা করে।তার পর যায় ফোকরটার দিকে।গোখরকে ব্যাঙটা দিতে।
এভাবে দু তিন দিন পার।সব ভালোই চলছিল।গোখর ও একটু খরখরে হয়ে উঠেছে।।নেউলের ছানাটাও বেশ চটপটে হয়ে গেছে এ কদিনে।সকালে নেউল বেরুল খাবারের খোঁজে।যাবার সময় কদিনের মতো গেল ফোকরের কাছে।গোখরকে বলল--আমি বেরোচ্ছি বন্ধু।ছানা থাকল।পারলে একটু খেয়াল রেখো।
গোখর বলল--আজ আর আমার জন্যে খাবার খুঁজতে হবে না তোমাকে।শরীরে একটু বল পাচ্ছি বন্ধু।একটু পরে আমিও বেরুব।বেশি দূর যাব না আজ।কাছে পিঠে কিছু যোগাড় করে নেব।খিদেটাও লেগেছে বড় বেশি।তুমি যাও।আমি যতটা পারি লক্ষ্য রাখব তোমার ছানার দিকে।যত তাড়াতাড়ি পার ফিরে এসো।
--ঠিক আছে বন্ধু।তুমি চেষ্টা কর।আমিও চেষ্টা করব।
নেউল বেরিয়ে পড়ে খাবারের খোঁজে।খাবার খুঁজতে খুঁজতে মাঠটার অনেকটাই দূরে চলে যায় সে।আজ কেন যে খাবারের খোঁজ কিছুতেই পাওয়া যাচ্ছে না------!
গোখরও বেরোয়।শরীর পুরো ঠিক হয়নি তার।কিন্তু খিদে বড় বালাই।গত দু তিন দিনখাবার জোটেনি ভর পেট।আজ পেটটা ভরাতেই হবে তার।চক্কর কাটতে থাকে সে মাঠটায়।কিন্তু কপাল মন্দ।কিছুই জোটাতে পারছে না।এদিকে শরীর অবশ হচ্ছে আস্তে আস্তে।।রোদ বেড়ে যাচ্ছে চড়চড় করে।আর তো বেশিক্ষণ চক্কর কাটতে পারবে না সে এভাবে।কিন্তু খিদের জ্বালা মেটায় কি করে?নেউলকে তো বাহাদুরি করে বলে দিল খাবার আনতে হবে না!এখন---?আরও কিছুক্ষণ চক্কর কাটতে থাকে গোখর।ফোকর থেকে কত দূরে এসে পড়েছে মালুম করতে পারে না।তার দৃষ্টি বেশ আবছা হয়ে আসছে।হঠাৎ অদূরে ছোট একটা কিছু দৌড়োদৌড়ি করছে মনে হয় তার।খুব সতর্ক হয়ে এগোয় সে দিকে।তার পর খপ করে এক কামড়।কোন শব্দ করার আগেই শিকার নেতিয়ে পড়ে।বেশ আয়েশ করেই তাকে গেলে গোখর।একটু এগোয় উল্টো দিকে।ফোকরটা ঠাহর করার চেষ্টা করে।কিন্তু কিছুই তো বোঝা যাচ্ছে না!তার শরীরও তো নেতিয়ে আসছে।দারুন খিদের পর কিছুটা খাবার পেয়ে বোধ হয়।ফোকরে ফিরে একটু জিরোনো দরকার।কিন্তু------!
কানে এল নেউলের গলা--কি বন্ধু--আমার গর্তের কাছে তুমি?আমার ছানাকে দেখতে এসেছ বুঝি?
ছ্যাঁ করে ওঠে গোখরর বুক।কি ঘটল কিছুক্ষণ আগে?কি গিলেছে সে?তবে কি-----!
নেউল দেখল গোখরর পেটটা একটু মোটা।বুঝল কিছু গিলেছে সে।যাক,তার কথা ভেবে আর কষ্ট পেতে হবে না।আজ তো জোটেনি প্রায় কিছুই।ছানা নিয়ে তাকেও প্রায় উপোসই করতে হবে।এত খোঁজাখুঁজি সবই প্রায় মিছে।বললে--আজ চেষ্টা করেও প্রায় কিছুই জোটাতে পারিনি বন্ধু।দুঃখিত।তুমি মনে হচ্ছে কিছু পেয়েছ।ভালো কথা।আমাদের আজ প্রায় উপোস।তা--অমার ছানাটা কোথায়?যা জুটেছে তাকে তো খাওয়াই।একটা রাত কেটে যাবে কোন মতে।আর বেরুব না আজ।দিনের আলো ও আর বেশিক্ষণ নেই।তুমি ফোকরে যাও।আমি গর্তে ঢুকি।ছানাটার খিদে পেয়েছে।নেউল গর্তে ঢোকে।গোখর পালাতে চাইল সেখান থেকে।কিন্তু কেন যেন তার শরীরটা আটকে গেছে মাটিতে।নাড়াতে পারছে না কিছুতেই।ভয়ানক এক বিপদের ভয়ে তার দম প্রায় বন্ধ হবার জোগাড়।গর্ত থেকে বেরিয়ে এল নেউল।দিশেহারা চাউনি নিয়ে।গোখরকে শুধোল তার ছানাটাকে দেখেছে কি না।গোখর কিছু একটা বলতে চেষ্টা করল।কিন্তু পারল না।সবটাই জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে তার কাছে।খিদে আর অবসন্নতায় তার বুদ্ধি লোপ পেয়ে গেছিল।অনর্থ ঘটিয়েছে সে।সে কেবল অবশিষ্ট মনের জোরএক জায়গায় জড়ো করে পালাতে চেষ্টা করল সেখান থেকে।নেউলের চোখ এড়ালো না সেটা।সে গর্জন করে উঠল--তুমি কি আমার ছানাটাকেই গিলেছ?বন্ধুত্বের এই প্রতিদান?শেষে কিনা----!
কোন কথা না বলে পালাতে থাকে গোখর।নেউল ঝাঁপিয়ে পড়ে তার উপর।বলে--পালাচ্ছ কোথায়?আমার প্রতিদানটা নিতে হবে যে!
গোখরর লেজে সজোরে কামড় বসিয়ে এক হ্যাঁচকায় তাকে থামিয়ে দেয় নেউল।গোখর মুখ ঘুরিয়ে মাথা তোলে।ফনা চওড়া করে প্রতিআক্রমনের চেষ্টা করে।কিন্তু ছোবল মারার আগেই দ্রুত সরে যায় নেউল।গোখর আবার পালাতে চেষ্টা করতেই চরম ক্ষিপ্রতায় তার সামনে চলে আসে নেউল।গোখরর মাথাটা মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে মুহূর্তে ধারালো দাঁতে পিষে দেয়।গোখর লেজ তুলে নেউলকে জড়াতে চেষ্টা করে।নেউল লাফিয়ে সরে যায়।দু দণ্ডেই নেতিয়ে পড়ে গোখর।নেউল বন্য রাগে পাগল হয়ে গেছে তখন।সামনের পায়ের ধারালো নখ দিয়ে সে চিরে ফেলে গোখরর পেট।পেট থেকে বেরিয়ে আসে নেউলের মরা ছানা।প্রবল উন্মত্ততায় নেউল চিবোতে থাকে গোখরর শরীর।গোটা শরীর গিলে তার রাগ কিছুটা কমে।পাশে পড়ে থাকা মরা ছানার দিকে চোখ যায়।দুঃখে হতাশায় নেতিয়ে পড়ে নেউল।
সময়ের পথ বেয়ে শোক কমে যায় নেউলের।কিন্তু সাপ জাতটার উপর রাগ যায় আরও বেড়ে।সে এখন সাপ দেখলেই পরম আক্রোশে আক্রমণ করে।কামড়ে খুবলে খেয়ে ফেলে তার গোটা শরীর।এ রাগ ক্রমে চারিয়ে যায় নেউল জাতটার মধ্যে।আজও কমেনি নেউলদের রাগ।কমবেও না হয়তো কোন দিন।
----------------------------
নিরঞ্জন মণ্ডল
জগদীশপুর/রাজারহাট।
কোলকাতা-700135