ঝিলের ধারে
বড় ঝিল।সেটা পরিষ্কারের কাজ।চাড্ডিখানি কথা নয়। খরচ কিছু কম হয়নি।একদিক পরিষ্কার হয় তো অন্যদিক থেকে পানা ঘিরে ধরে। আশপাশের বস্তিবাসী মানুষগুলোও কিছু কম যায় না।ঝিলকে নোংরা করার বেলা তাদের তরফে এন্তার নোংরা পড়তেই থাকে ঝিলে।তাদেরকেও পরিষ্কারের চেষ্টা চলছে। এই এলাকায় বড় বিজনেজ হাব হবে।বহুজাতিক সংস্থা সরকারের থেকেই জমি কিনেছে।সেখানে বস্তির ইয়েগুলো কোথ্থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে।তাদেরকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাটাতে হবে। যেভাবে তারা গেড়ে বসেছে মনে হচ্ছে এসব যেন তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি।তাদেরকে মাঝে মাঝে ধাওয়া দেওয়া হয়।মাঝে মাঝেই লোকজন ওদের মধ্যে থেকে গুম হয়ে যায়।সেই নিয়ে কিছু এন.জি.ও আবার পোস্টারও বিলি করে মিসিং পারসনের।তারা স্পন্সর পায়।বস্তির হাল তাতে আলাদা কিছু বদলায় না।পুলিশের ওপর চাপ বাড়ে।চাপ বাড়ে হরিধনের ওপরেও।সে যে ব্যাটা বস্তির হয়েও এই পুলিশেই আছে।তার গোষ্ঠীর কাছে উঠতে-বসতে গালি খায় পুলিশের চাকরির জন্য।আর পুলিশের কাছে গালি খায় বস্তিবাসীদের সম্বন্ধে তেমন কোনো ভেতরের গোপন খবর দিতে না পারার জন্য।এন.জি.ওর দিদিমণিগুলো বস্তি আর ঝিলের আশেপাশে ঘুরে যখন বেড়ায় হরিধন তাদের সন্দেহের চোখে দ্যাখে।এক একদিন স্বপ্ন দ্যাখে ওই দিদিমণিরা ওরই গুম হওয়ার পোস্টার সাঁটছে।ওর ঘুম ভেঙে যায়। এত আলো চারিদিকে যেন সকাল হয়ে গেছে মাঝরাতেই।ওকে পুলিশের তরফে খবর দেওয়া হয়েছিল।ওই ভুলে মেরে দিয়েছিল।আজ রাতেই বস্তি উচ্ছেদের পরিকল্পনা। হরিধন চাইলে চলে যেতে পারতো।যায়নি।একি ধুয়ে যাওয়া বিবেকবোধকে একবার ঝালিয়ে দেখে নেওয়া? হরিধনকে ওর বিরাদরির সবাই গালি দিত ও বিয়েশাদি করেনি যেহেতু ও আর সংসারের গুরুত্ব কি বুঝবে? আজ রাতে অতগুলো জোরালো আলোর চোখের দিকে চেয়ে ও কি বুঝতে পারছিল না একসাথে থাকার গুরুত্ব?যদি না বুঝতো তাহলে তো চলেই যেতে পারতো?যায়নি অথচ।মানুষের বিশেষত বাচ্চার চিৎকারের আওয়াজে হরিধন আর না থাকতে পেরে বাইরে বেড়িয়ে এলে দেখতে পায় এন.জি.ওর দিদিমণিদের প্রতিবাদও বন্ধ করতে উঠে পড়ে লেগেছে প্রশাসন।হয়তো আরো কিছু পোস্টার পড়বে।হ্যালোজেনের বড় বড় হাগোড়ে আলোয় ঝিলের অন্ধকার আর যেন কিছুই নেই।সেটা দেখেই কি যেন একটা ভরসা পেয়ে স্বস্তি পায় হরিধন।ঝিলে জলের পেটে হাসতে থাকা চাঁদটা লুকিয়ে পড়ে বাড়তে থাকে পানার নিচে।
====================
প্রতীক মিত্র
কোন্নগর-712235, পশ্চিমবঙ্গ