মধুশ্রী
অঙ্কিতা পাল
বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে মধুশ্রী, সে ছোটবেলা থেকেই খুব মেধাবী। সেই জন্য স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা তাকে খুব ভালোবাসেন। এখন সে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী। কিন্তু কিছুদিন যাবৎ সে আর আগের মত স্কুলে আসেনা; পড়ালেখায় তার একটুও মন নেই, খালি আনমনা হয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে বাইরের দিকে চেয়ে থাকে। তার এই আচরণ স্কুলে শিক্ষিকাদের কাছে অস্বাভাবিক বলে মনে হয়; তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে থাকেন। পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষিকা দেবশ্রী মহাশয়া মধুশ্রী বিষয়টা নিয়ে প্রধান শিক্ষিকার সাথে আলোচনা করেন। প্রধান শিক্ষিকা ম্যাডাম রায় দেবশ্রী মহাশয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেন - হ্যাঁ ম্যাডাম আমারও মধুশ্রী আচার-আচরণ একদম ভালো লাগেনা। সেদিন দিন মানসিক রোগে আক্রান্ত হতে চলেছে। আমাদের স্কুলের তরফ থেকে কিছু করা দরকার। দেবশ্রী মহাশয়া তেনার উত্তরে বলেন - হ্যাঁ ম্যাম আমিও দেখছি কি করা যায়। যদি ওর অভিভাবকদের ডেকে পাঠানো যায়। প্রধান শিক্ষিকা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলেন। মধুশ্রীর অভিভাবককে স্কুলে ডেকে পাঠানো হয়; কিন্তু এক এক করে এক সপ্তাহ দুসপ্তাহ এক মাস হতে যায় মধুশ্রীর অভিভাবক স্কুলে দেখা করতে এলেন না। মধুশ্রী কে জিজ্ঞেস করা হলো - তোমার বাবা-মা কোথায় তারা কেন এলেন না? প্রশ্নটি শুনে মধুশ্রী চমকে ওঠে - সে হো হো করে হেসে হাতের আঁকা পেন এবং পেন্সিল নিয়ে খেলা করতে থাকে। তখন শ্রেণি শিক্ষিকা খুব রেগে গিয়ে প্রধান শিক্ষিকাকে নিয়ে ডেকে নিয়ে এলেন। প্রধান শিক্ষিকা মধুশ্রীর গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে অবশ্যই নিয়ে এলেন এবং কিছু চকলেট ও লজেন্স দিয়ে অত্যন্ত স্নেহের সাথে তাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, কি হয়েছে মা তোমার? তখন মধুশ্রী তার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল এবং দুচোখ অশ্রু ভেজা। ম্যাডাম আবার তাকে বললেন আচ্ছা ঠিক আছে বলতে হবে না, তুমি খেয়ে নাও। সে চকলেট নিয়ে ম্যামের দিকে দেখিয়ে বললো - এগুলো সব আমার? ম্যাডাম রায় হেসে হেসে বললেন - ইয়েস মাই চাইল্ড। এগুলো সব তোমার। একটু একটু করে চকলেট গুলো খেতে থাকে এবং ম্যামের দিকে তাকিয়ে থাকে এবং বলে আমি কতদিন এগুলো পাইনি খাইনি। আরো কত কিছু গান করতে লাগলো এবং বকবক করতে থাকলো। ম্যাম তার কথাগুলো কান পেতে শুনছিলেন। তার কথাগুলো শুনে ম্যামের মনে হচ্ছে মধুশ্রী কোন মানসিক সমস্যার সম্মুখীন। তিনি মানসিক চিকিৎসালয়ে থেকে একজন মহিলা ডাক্তার কে নিয়ে আসলেন এবং সঙ্গে শিশু চিকিৎসক কেও। ডাক্তারেরা মধুশ্রী সাথে শিশুর মতো মিশে থাকে এবং অনেক কথা জানতে শুরু করে বিভিন্ন কথোপকথনের মাধ্যমে তারা জানতে পারে এবং শিশু বিশেষজ্ঞ বনশ্রীর পিঠে ও পায় অনেক মারের দাগ দেখতে পান , তিনি বলেন - মধুশ্রী কে রীতিমত মারধর ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। ডাক্তারের কথামতো সঙ্গে সঙ্গেই মধুশ্রীর বাবা-মাকে ফোন করা হয় এবং তাদের স্কুলে দেখা করতে বলা হয়। মধুশ্রী র অভিভাবক তখনও অনুপস্থিত। প্রধান শিক্ষিকা এবার সশরীরে মধুশ্রীর বাড়িতে উপস্থিত হয় পুরো বিষয়টা জানতে চাই। তার বাবা মা হঠাৎই ভয় পেয়ে যায় এবং রীতিমত চিৎকার করতে করতে তাদের বাড়ি থেকে বার করে দিতে চায়। মধুশ্রীর মায়ের আচরণ অত্যন্ত খারাপ, সে রীতিমত ম্যডাম রায়এর উপরে চটপাট করতে শুরু করে। সেই সময় কাঁদতে কাঁদতে তার প্রধান শিক্ষিকাকে জড়িয়ে ধরে এবং ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলে - মা খুব খারাপ খুব বাজে তোমাকেও মারবে।অনেক জোরাজুরি করার পর মধুশ্রীর বাড়ির কাজের লোক মিনতি জানায় - দাদা বৌদি প্রায়শই মারপিট করতো । তাদের মধ্যে সবসময় মনোমালিন্য লেগে থাকতো। কিছু হলেই বৌদি মেয়েটাকে মারে আর বকাবকি করে বলে - তুই মরতে পারিস না। বৌদি (মধুশ্রীর মা মেনোকা দেবী) একদিন মেয়েকে কে হোস্টেলে দিতে চাইল কিন্তু দাদা (মধুশ্রীর বাবা রাজিব বাবু) রাজি না হওয়ায়; বৌদি মধুবনের পিঠে গরম তেল ঢেলে দেয় সে যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে।সব দৃশ্য দেখে আমার খুব কষ্ট হয় বাচ্চা মেয়েটা কি কান্না আমি তাড়াতাড়ি করে মধুবোন কে নিয়ে হাসপাতালে চলে যাই। ডাক্তার কিছু মলম ওষুধ দেয় আমি তার পর থেকে বোনকে আমার বাড়িতে নিয়ে রেখেছি। এজন্য অনেক দিন ইস্কুলে যেতে পারেনি, তার পর থেকে আমার বোন টা কেমন পাগলের মতন হয়ে গেছে। হায় কি নিষ্ঠুর বাবা-মা বলেই মিনতি কেঁদে ফেলে। প্রধান শিক্ষিকা ম্যডাম রায় মধুশ্রীর বাবা-মায়ের যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা ও মধুশ্রীর মানসিক ও শারীরিক চিকিৎসা করিয়ে তাকে সুস্থ জীবনে আলাপ চেষ্টা করেন।
================
ভাঙ্গড় দক্ষিণ ২৪ পরগনা