ভূত পেত্নীর গল্প
সিরাজুল ইসলাম ঢালী
১৯৭৬ সাল । আমি তখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি । স্বরূপ নগর থানার অন্তর্গত "নির্মান আদর্শ বিদ্যাপীঠ"। সেই সময়ে আমার বাবার মুখে শোনা শ্রেষ্ঠ ভূত পেত্নীর গল্প । প্রকাশিত কোন বইয়ে পাওয়া যাবে না । আমার এখন বয়স ছাপ্পান্ন । আজ গর্বের সঙ্গে সেই গল্পই লিখছি, মন প্রাণ দিয়ে পড়ুন । একটু গা ছম্ ছম্ করবে, বুঝলেন কিছু ? বউ আর তিন ছেলেমেয়ে । বউয়ের বয়স বত্রিশ বছর হবে । বড় ছেলে সাড়ে চার বছর, মেজ ছেলে তিন বছর আর ছোট্ট মেয়ে মাত্র ছ'মাস । বাড়ি নতুনগ্রাম । বাড়ির চার দিক বন জঙ্গলে ঘেরা, সন্ধ্যায় কেরোসিনের লাম্প জ্বালাতে হয় । মনে হয় গ্রামে কিচ্ছু উন্নতি হয় নি, আর হবেও না ।
স্বামী শেখ মতিন সোমবার কাজে বার হন, কর্মস্থল ষাট মাইল দূরে গুরুদাস নগর । আর শনিবার রাতে বাড়ি ফেরেন । সারা বছর এভাবেই চলে । কিন্তু হঠাৎ ঘটে গেল হাড়হিম করা এক ঘটনা ! অন্যান্য শনিবারের মত এবারও বউ সন্ধ্যার মধ্যে রান্না বান্না শেষ করে, ঘরে সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বেলে ঠাকুর পূজো করে, ছেলে মেয়ে নিয়ে স্বামীর বাড়ি আসার পথ চেয়ে অপেক্ষা করছিলেন । কিন্তু বিভ্রাট ঘটলো ! আকাশে কালো করে মেঘ জমতে শুরু করলো । প্রথমে হালকা পরে জোর কদমে ঝড় উঠতে শুরু করলো । মেঘের গর্জন চলতে লাগলো । এসব দুর্যোগ দেখে বউ শ্বশুড় শ্বাশুড়িকে খেতে দিয়ে, নিজেও বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে রাতের খাওয়া অতি কষ্টে শেষ করে নিলেন । ঝড়ে বারবার আলো নিভে যাচ্ছে । আর অন্ধকার সব কিছু গ্রাস করছে ।মানে সংসার করাই মুশকিল ! বুদ্ধি করে বউ ভাত তরকারি মাছ ইত্যাদি স্বামীর জন্য থালায় সাজিয়ে থালা দিয়ে ঢেকে রাখলেন । শুলে আর উঠতে হবে না । দু'কামরার মেটে ঘর, বেড়া দিয়ে ঘেরা, উপরে খড়ের চাল । ফুটোফাটা দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে । ইতিমধ্যে শ্বশুড় শ্বাশুড়ি পাশের ঘরে শুয়ে পড়েছেন । দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে বাচ্চাদের নিয়ে বউ শুয়ে শুয়ে স্বামীর অপেক্ষা করছিলেন । ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা হাওয়ায় বিশ্রী দুর্যোগে চোখে ঘুম এসে গেল । দুর্যোগে পড়ে স্বামীরও বাড়ি ফিরতে প্রচন্ড বিলম্ব হতে লাগলো ।
এক সময় আলোও নিভে গেল । অন্ধকার যেন সব কিছু গ্রাস করে ফেললো । দরজা ঠেলে এক অচেনা অজানা নর খাকি পেত্নী ঢুকে পড়লো ! বউ ঘুমিয়ে পড়েছে, কেউ বিরুদ্ধে রুখে দাড়ালো না । কড়্ মড়্ করে প্রথমে কচি মেয়েটাকে খেয়ে ফেললো । বিছানা রক্তাক্ত হয়ে গেল । পরে একে একে দুই ছেলকেও খেতে শুরু করলো । কড়্ মড়্ কড়্ মড়্ শব্দে বউয়ের ঘুম ভেঙ্গে গেল । শুরু হল চিৎকার চেচামেচি । শুরু হল বউ ও নর খাকি পেত্নীর হাতাহাতি, হল খন্ড যুদ্ধ !
কিন্তু বউ পরাজিত রক্তাক্ত ।নর খাকি পেত্নী সব বাচ্চাদের উদরস্থ করে চলে গেল ঘন অন্ধকার বনজঙ্গলের দিকে । পরে প্রতিবেশিরা সবাই ছুটে এলো । ইতিমধ্যে স্বামীও দুর্যোগ মাথায় নিয়ে বাড়ি ফিরলেন । কিন্তু সব শেষ ! রক্তাক্ত বউকে নিয়ে সবাই ছুটলেন শাড়াপুল হাসপাতালে । গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লো । সবাই নিস্তব্ধ...!
=======================
ছবি- ইন্টারনেট ।
----------------------------
যোগাযোগ :
Sirajul Islam Dhali
Address : 1,Purbayan, Subhasgram, Sonarpur, Kolkata-700147
Dated: 26.08.22