পীযূষ কান্তি সরকার
বিপুল মহারানা হোস্টেল ইনচার্জ। আলো-আঁধারিতে বসেছিলেন নিজের ঘরে। তুবড়ি এসে সেই ঘরে ঢুকল। বিপুল মুখ তুলে বললেন, " কাজ হয়ে গেছে তো!"
-- হ্যাঁ মহারানা। সব এই মোবাইলে রেকর্ড করা আছে।
--- আমায় পাঠিয়ে দে। সুজন এখন কোথায় ?
--- ও তো ব্যাগ গোছাচ্ছে। বাড়ি যাবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
--- গেটে কে আছে ?
--- আজ্ঞে শশধর বাহাদুর।
--- ফোনটা ধরিয়ে দে।
মহারানা ফোনে শশধরকে বললেন, "সুজনকে সার্চ করবে। আমি এখনই আসছি।"
সুজনের ব্যাগ-পোশাক সার্চ করে শশধর দুটো ডিমসেদ্ধ আর ছোটো একটা টিফিন-কৌটো ভরা 'আলুভাজা' পেয়েছে। বিপুল মহারানা পৌঁছে সে সব দেখেই তাকে শো-কজ নোটিশ ধরালেন। পরদিন সেই শো-কজের উত্তর নিয়ে আসতে বললেন।
ছেলেদের খাওয়ার পর জিনিস বাঁচলে অনেকেই লুকিয়ে-চুরিয়ে নিয়ে যায়। সুজনও দেখে দেখে দুর্জন হয়ে পড়ে ছিল। তবে এমন ঘটনা কেমন করে ঘটল সেই মুহূর্তে সে তা বুঝতে পারল না।
পরদিন হেডমাস্টার ঘোষসাহেব তার শো-কজ লেটারের উত্তর ভালো করে না-পড়েই রায় দিলেন, " আমি থানা-পুলিশ করতে চাই না। তোমার রিটায়ারমেণ্টের আর মাত্র একবছর আছে। রেজিগনেশন সাবমিট করো, যা যা প্রাপ্য সব পেয়ে যাবে। তোমার সব অপকর্মের ভিডিও রেকর্ডিং আমার কাছেই আছে।"
এইবার ব্যাপারটা তার কাছে স্বচ্ছ হল। যখন সে সেদ্ধ-ডিম আর আলুভাজার কৌটো ব্যাগে ভরছিল, আশেপাশে তুবড়ি মোবাইল নিয়ে ঘোরাঘুরি করছিল। তুবড়ির বয়স এখন পঁয়ত্রিশ ছুঁই-ছুঁই। এই মুহূর্তে চাকরি না-পেলে আর সে পাবে না। কী বোকা সে ! তুবড়ির চক্রান্ত বুঝতেই পারল না !
মুখে অবশ্য ভয়ের লেশমাত্র না-রেখে সে বলল, " ভিডিও-টা দেখতে চাই !"
হেডমাস্টারের ডানদিকে বসা বিপুল মহারানা বললেন, "অবশ্যই । তোমার ইচ্ছা অপূর্ণ রাখব না।"
ভিডিও দেখার পর সে নিশ্চিত হল তুবড়িকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার জন্যই এই প্রহসন।
একেই হাতে-নাতে ধরা পড়া অন্যদিকে জিনিস সরানোর মোক্ষম প্রমাণ। যদি ঘুণাক্ষরেও সে টের পেয়ে যেত, জিনিসগুলো ব্যাগে না-ভরেই চলে যেত ...।
দেওয়ালের গায়ে সাঁটা মনীষীদের ছবির দিকে চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে।
======================
ছবি- ইন্টারনেট ।
----------------------------
পীযূষ কান্তি সরকার
কদমতলা, হাওড়া -১, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।