পতাকার জন্য
প্রতীক মিত্র
কি আর ওর পেট ভরে?তবু মেয়েটা এত বার বলেছে যখন ওইটুকু জায়গাতেই ও লগাটা মাটিতে পুঁতে পতাকাটা টাঙানোর চেষ্টা করে।বেশ ক'বারের চেষ্টায় কাজটা সম্পূর্ণও হয়।মেয়ের মুখে হাসি দেখে কারখানায় ঘটা সমস্ত দুর্ঘটনা অপমান মিথ্যেগুলো আর একবার হজম করে কিছুক্ষণের জন্য হলেও ও নরমভাবে সরলভাবে সৎভাবে বেঁচে নেয়।কিছুক্ষণের জন্য।পতাকাটা তখনও পতপত করে উড়ছে।এক একটা দিন মনে হয় বাঁচাটা নরম তুলতুলে সরল সত্য হোক।সুযোগটা অবিনের
এসেছিল ওর ছোট্ট মেয়ের হাত ধরে। মেয়ে একটু বড় হওয়ার পর থেকেই তিনরঙা পতাকা
দেখলেই স্যালুট করে।আশেপাশের দোতলা বাড়িগুলোর তুলনায় অবিনদের ভগ্নপ্রায়
নোনাধরা বাড়িটা বড় বেমানান।টিনের ছাউনিতে ছাদও নেই। ফলে অন্য বাড়িগুলোতে
পতপত করে দম্ভ নিয়ে ২৬ জানুয়ারী আর ১৫অগষ্ট তিনরঙা পতাকা উঠলেও ওদের সে
সুযোগ নেই।তবু গতবছরের আবদার অবিনের মনে ছিল বল পতাকা কেনা
হয়েছে।স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন বলে কেনা হয়েছে অনেকটা বেশি দাম দিয়েই।সেই
পতাকা বুকের কাছে ধরে ইতিমধ্যে ছবিও তুলেছে মেয়ে।তবু যেন কোথাও একটা খামতি
থেকে যাচ্ছে।সেই খামতিটা মেটানোর চেষ্টাতেই পায়ে জখম নিয়ে লেংচে লেংচেও
লগাটা জোগাড় করেছে সামনের বাগান থেকে।বাগানের মালিক বাগানেই তখন গাছে ঝুলে
থাকা আমের দিকে তাকিয়ে কিসব যেন ভাবছিল।অবিনকে সে পছন্দ না করলেও অবিনের
মেয়েটা তাকে দাদু দাদু বলে বলে অবিনকে সে লগাটা দিয়ে দেয়। কারখানায় প্রকৃত
অর্থে কি ঘটেছিল সেটাতো আর ওর পক্ষে জানা নয় তবে চুরি করতে অবিন যদি সত্যিই
গিয়ে থাকে, তার সাজা সে পেয়ে গেছে। পায়ের ওপর ভারী মেশিন যেভাবে পড়েছে কাজ
আর ও কোনোদিন করতে পারলে হয়।এখন মেয়ের পাল্লায় পড়ে যদি ওর একটু সৎ হওয়ার
ইচ্ছে জাগে সেটা মন্দ কি। অবিনের বাড়ির সামনের ফাঁকা একটুখানি জায়গা
আছে।আসলে জায়গাটা অনেকটা ছিল।বেদখল হয়ে গেছে।ওর বাবা কিনেছিল।কোন কালে।অবিন
গাফিলতি করে ওই জায়গা নিজের রাখতে পারেনি। যেটুকু দখল হওয়া বাকি ভেবেছিল
গুমটির দোকান দেবে।ফ্যাক্টরির কাজটা চলে যাওয়াতে সেটাও অনিশ্চিত হয়ে
গেল।নেতা-নেত্রীরা নিজের পকেট ভরতে ব্যস্ত।তাই দিয়ে মেয়ে খিলখিল হেসে চলেছে।হেসেই চলেছে।
====================
ছবি- ইন্টারনেট ।
----------------------------
প্রতীক মিত্র
কোন্নগর,
পশ্চিমবঙ্গ