Click the image to explore all Offers

অণুগল্প ।। অধরা স্বপ্ন ।। অশোক দাশ


অধরা স্বপ্ন
অশোক দাশ
 

শরতের আকাশে সাদা মেঘের ভেলা ।নদীর ধারে মেঠো আলে, সাদা কাশের বনে , শ্বেত শুভ্র  বিজয় কেতন। মনে করিয়ে দেয় মা আসছেন। ঘরে ঘরে নতুন করে মাতৃ আবাহন। মৃৎশিল্পীরা ব্যস্ত মৃন্ময়ী মূর্তি গড়তে। নতুন থিমে পূজা মন্ডপ বর্ণালী আলোয় উদ্ভাসিত হবে। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের অন্যতম প্রাণের উৎসব দুর্গাপূজা।
      কিন্তু এবারের পূজোয় রনিতা- র মনে নেই কোন আনন্দ। নেই আবেগ অনুভূতি। বিষন্ন মুখে কার পথ চেয়ে যেন বসে আছে। নিরবে অশ্রু মোচন করে চলেছে। রনিতা- র চোখের সামনে ভেসে ওঠে তার দাদা রঞ্জন- এর ছবিটা। কতবার দাদার হাত ধরে কলকাতায় পুজো দেখতে গিয়েছে, একটার পর একটা মন্ডপে ঘুরে ঘুরে সারারাত কেটে গেছে। কত আনন্দ হইচই আড্ডা। এবারের পুজোয় কেহ আর নতুন জামা কিনে এনে বলবে না, তোর পছন্দ হয়েছে তো রনিতা!চোখ দিয়ে টপটপ করে জল ঝরে পড়ে।
      রনিতাদের ছোট্ট সংসার। মা-বাবা রঞ্জিত রনিতা কে নিয়ে চারজনের সংসার। বাবা চাষের কাজকর্ম করেন, মা গৃহবধূ ,রঞ্জন এমএ বিএড করে টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। রনিতা সবেমাত্র ক্লাস টেনে পড়ছে।
      কলকাতার রাজপথে শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে, ধর্না মঞ্চে রঞ্জিত কয়েক মাস ছিল। হঠাৎই বিনা প্ররোচনায় পুলিশের লাঠিচার্জ, টেনে হিজড়ে জাল গাড়িতে তোলা ,লক আপে অমানুষিক নির্যাতন। তারপর ঠাঁই হয় হাসপাতালে।
         কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছিল। কিন্তু আঘাত ছিল মনে, আঘাত ছিল অন্তরে। অনেক কষ্টে বাবা-মা তাঁকে তিল তিল করে মানুষ করেছিল ।তাদের স্বপ্ন ছিল ছেলে চাকরি করে তাদের মুখে হাসি ফোটাবে। কিন্তু সে সাধ আর পূর্ণ করতে পারল না রঞ্জিত। এই অসম সমাজ ব্যবস্থা তাদের অন্ধকারে ঠেলে দিল।
       ক্রমশ তার শরীর অবসন্ন হয়ে পড়তে লাগলো ,শারীরিক পীড়ন, মানসিক অবসাদ কাটিয়ে উঠতে সে পারল না। সহযোদ্ধা- পরিবার- পরিজনকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে  সে চলে গেল।
       এইসব ভাবতে ভাবতে রনিতা কান্নায় ভেঙে পড়ে। কখন তার মা পাশে এসে দাঁড়িয়েছে খেয়াল করেনি। স্নেহময়ী জননীর করস্পর্শে সে সম্বিত ফিরে পায়। এবং মাকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলতে থাকে দাদাকে যারা মেরে ফেলল তাদের শাস্তি চাই।
     দূর থেকে ভেসে আসে সদর্প মিছিলের প্রতিধ্বনি --,রঞ্জন হত্যার বিচার চাই--- দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই--- সব হাতে কাজ চাই--- সব পেটে ভাত চাই------- ।
    গোধূলি সূর্যের অস্তরাগে রাঙা হয়ে ওঠে রনিতার বিষন্ন মুখ।

===================

 
অশোক দাশ
ভোজান, রসপুর, আমতা, হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ ,ভারত।

 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.