ভাগ্যশ্রী
সুচন্দ্রা বসু
জিটি রোডের ধারে মুখবন্ধ বস্তাটি পড়ে থাকতে দেখে ভিড় করে স্থানীয় বাসিন্দারা। কেউ কেউ ভেবেছিল হয়তো বস্তায় টাকা আছে। কেউ সন্দেহ করেছিল, লাশটাশ হবে হয়তো! কিন্তু কাছে যেতেই লক্ষ্য করে বস্তাটা নড়েচড়ে উঠল। কেউ আবার কৌতূহল হয়ে বস্তায় লাথি মারতেই শুনতে পেল চিৎকার করে বলছে মরে গেলুম মরে গেলুম।বস্তার মুখ খুলতেই আবাক কাণ্ড! বস্তার ভিতর থেকে বেরিয়ে এলেন সাদা চুলের এক বুড়ি।
বুড়িকে বস্তার ভিতর দেখে প্রথমে হকচকিয়ে গেছিল ঘটনাস্থলের বাসিন্দারা। তারা ঘটনাটা পুলিশকে জানিয়ে ওই বুড়িকে বস্তা থেকে বার করে কাছাকাছি চায়ের দোকানে নিয়ে যায়।বুড়িকে বসিয়ে তারা চা ও কেক খাওয়ায়।
মহিলা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন এলাকায় বুড়িকে ঘিরে ভিড় জমে গেছে। ভিড় সরিয়ে বুড়ির ঠিকানা জিজ্ঞাসা করার সময় জানতে পারে বুড়ি হিন্দিভাষী।। তাঁর বাড়ি বরানগরে। নাম শিলা কুমারী। ঠিক কী ভাবে আনা হয়েছে, তা সবিস্তারে কিছু তিনি বলতে পারেননি। তাঁর কথাবার্তাও কিছুটা অসংলগ্ন ছিল।
পুলিশ তাঁকে কাছাকাছি এক হাসপাতালে ভর্তি করে তাঁর বাড়ির খোঁজ করেছে।তারা অতি কষ্টে বুড়ির বাড়িতে কেউ আছেন কি না তা জানতে পেরেছে। ওই বুড়ি বলেছে তার পোষা একটি কালোবিড়াল ও একটি কালোছাগল আর মুরগী নিয়ে তার সংসার।এরা ছাড়া আর কেউ নেই তার।
বুড়ির কথা বলে তবে তা বোঝা দায়।সে আবার খোনা।নাকে নাকে জড়ানো কথা। তবে তার সংসার চলে কিভাবে তা ওই হাসপাতালের নার্সরা জানতে চায়। বুড়ি বলে ছাগলের দুধ আর মুরগী মুরগীর ডিম বিক্রি করে কোনরকম আমার চলে যায়। তবে আমার ভাগ্যশ্রী বিড়ালের জন্য মাঝে মাঝে মাছ আনতে হয়।সকালে ওর একটু মাছ না হলে পেট ভরে না।বিড়ালটি বড় ভালো।
বিড়াল মুরগীগুলোকে মেরে দেয় না। না গো মুরগীগুলোর সাথে বন্ধুর মতো খেলা করে। ভাগ্যশ্রী লছমীর সাথে খেলা করে।
- লছমী কে? তোমার মেয়ে?
- আমার বিয়েই হয়নি। মেয়ে হবে কোথা থেকে? লছমী আমার ছাগল।
- তুমি বিয়ে কর নি কেন?
- আমার বাবা অনেক চেষ্টা করেছিল। আমার এই নাকে নাকে কথা শুনে তারা আর যোগাযোগ করত না।এরপর অনেক পণ চেয়েছিল একজন। আমি সেখানে রাজি হই না। এছাড়া বাবা মায়ের বয়স হয়ে গেল। ওদের দেখবে কে ভেবে বাবা মায়ের কাছেই রয়ে গেলাম।
-এখন এই বিড়াল ছাগল মুরগী নিয়ে সারাদিন কাটিয়ে দাও?
- হ্যাঁ কি আর করব। আমার ভাগ্যশ্রী একেবারে মানুষের মতো।
তাই নাকি?
- সে তো রাতে আমার পাশে আমার বালিশে মাথাদিয়ে ঘুমায়। ইঁদুর ঢুকলে আমায় জাগিয়ে দেয়।
-মানে?
- ও থাবা দিয়ে আমায় ধাক্কা মারে।কিন্তু নখ দিয়ে আঁচড় দেয় না। ও ইঁদুর মারে নি কখনও।আমি উঠলে ও দৌড় দিয়ে ইঁদুর তাড়িয়ে দেয়।
- বাঃ বিড়াল ইঁদুর মারে না হতে পারে?
- হ্যাঁ আমার ভাগ্যশ্রী এইরকম।
- তবে বলি শোন।স্বাধীনতায় ফিস্ট করবে বলে পাড়ার ছেলেরা একবার মুরগী চুরি করতে ঢুকেছিল। ভাগ্যশ্রী ঘরে দাপাদাপি শুরু করে দেয় আমার কানের কাছে এসে মাও মাও করে ডাকতে থাকে।তারপর থাবা দিয়ে আমার ঘুম ভাঙিয়ে ঘরের দরজার কাছে ছুটে যায়।দরজা খুলে দিতেই সে বাইরে মুরগীর ঘরের কাছে চলে যায়।আমিও ওর পিছনে ছুটেছিলাম।আমায় দেখে ছেলেগুলো পাঁচিল টপকে পালায়।
তারপর তারা পাড়ায় রটিয়ে দেয় আমার বাড়ির বিড়ালটি কুকুরের থেকেও সাংঘাতিক। একদিন তারা আমাকে এসে বলল ভাগ্যশ্রী চোর ধরায় বেশ দক্ষ।ওকে কয়েকদিনের জন্য ভাড়া দিলে দিন পিছু দু'শো টাকা পাবে।আমার শরীরটা তেমন ভালো যাচ্ছিল না।তাই ভাবলাম চিকিৎসার টাকাটা উঠে আসবে।আমি একটা ঝুড়ি ব্যাগে ভাগ্যশ্রীকে ভরে দিলাম। ও কিছুতেই যেতে চাইছিল না। মাও মাও করে খুব ডাকছিল। ওরা আমার হাতে দু'শো টাকা গুঁজে দিয়ে ওকে নিয়ে পশ্চিম পাড়ায় এক খামারির বাড়ি নিয়ে যায়। লছমি এক মাস সবে
গাভিন হয়েছে।দুধ তেমন পাই না।সংসারে একটু টান পড়েছিল। তাই দু'পয়সা আসবে ভেবে ভাগ্যশ্রীকে কাজে লাগাই।পরদিন তারা আবার আসে। জানতে চাইলাম ভাগ্যশ্রী কেমন আছে? হ্যাঁ ওর খবর দিতেই তো এলাম।
ওরা আসতেই একটা মিষ্টি গন্ধ নাকে আসে। ওদের বললাম কি মেখছিস তোরা। এই তো সুগন্ধি আতর।এই সবে কিনে তোমার বাড়িতে এলাম।
কই দেখি।বলতেই আমার কাপড়ে খানিকটা আতর ঢেলে দিল। কাপড়টা নাকের কাছে আনতেই আমার আর কিছু মনে নেই।
===============
ঠিকানা
২৬৭/৫ জি.টি.রোড পানপাড়া
শ্রীরামপুর হুগলি