Click the image to explore all Offers

ছোটগল্প ।। বদনামের ভয়ে ।। উত্তম চক্রবর্তী




   বদনামের ভয়ে      

 উত্তম চক্রবর্তী

 

খবরটা জীবনকে দিয়েছিল থানার সাব ইন্সপেকটার বলাই সামন্ত পুলিন আর দীপক মণ্ডল নাহলে জানতেই পারতো না যে ওদের বোন আজই আসছে থানায় পুলিশের সুরক্ষা চাইতে প্রায় দুইমাস যাবত ওদের বোন মানসী ও খুড়তুতো ভাই অনন্ত দুজনেই পলাতক পুলিনের বন্ধু জীবন এসে কালই খবর দিয়েছে ওরা নাকি একটা ঘর ভাড়া নিয়ে একসাথে আছে নৈহাটির মিত্র পাড়ায় শ্যামনগর থেকে জীবন গিয়েছিল নৈহাটি থানায় কোন এক কাজে যাবার পথেই  মিত্র পাড়ায় ওদের দুজনকে দেখেছে একটা বাড়িতে ঢুকতে জীবন রিক্সা থামিয়ে আসে পাশের লোকদের জিজ্ঞাসা করলে তারা জানায় যে এখানে মাস দুই হল ওরা ভাড়া এসেছে

মানসীর বয়স এখন একুশ, লম্বা সুন্দর চেহারা শুধু গায়ের রং একটু চাপা ধিরেন মণ্ডলের স্ত্রী আগে কয়েকবার স্বামীকে ইশারায় জানিয়েছিলেন যে ওঁর খুড়তুতো ভাইয়ের ছেলে অনন্তর এই বাড়িতে ঘনঘন আসাটা উনি পছন্দ করেন না একদিন নাকি ওদের দুজনকে নৈহাটির ফেরি ঘাটে ওপার থেকে লঞ্চে করে ফিরতে দেখেছে পুলিনের বন্ধু জীবন পুলিন এসে মাকে সেটা জানিয়েছিল সেই থেকেই সন্দেহটা আরও গাঢ় হচ্ছিল ওঁর কিন্তু ধিরেন মণ্ডল তার আদরের একমাত্র  মেয়ে এরকম একজন ঘনিষ্ঠ আত্মিয়র সাথে প্রেম করতে পারে সেটা বিশ্বাসই করেননি 

দুই মাস আগে এক সন্ধ্যায় মানসী আর অনন্ত দুজনেই বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। অনন্তর বাবা ধিরেন মণ্ডলের দুঃসম্পর্কের খুড়তুতো ছোট ভাই কিন্তু মানসী যে এই ভাবে একদিন ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাবে সেটা  কিছুতেই মন থেকে মানতে পারেননি ধিরেন মণ্ডল লজ্জায় ওঁর মাথা কাটা যাবার যোগা। কিন্তু পারিবারিক বদনামের ভয়ে পুলিশে খবর না দিয়ে চারিদিকে ওদের খোঁজ খবর নেওয়া চলতে থাকে

এদিকে অনন্ত ল পাশ করা ছেলে আগেই ব্যারাকপুর কোর্টে গিয়ে ওদের দুজনের সুরক্ষার ব্যাপারে কোর্টের সাহায্য চেয়ে দরখাস্ত করে দেয় ব্যারাকপুর কোর্ট সেই দরখাস্ত মনজুর করে পুলিশকে যথাযথ বন্দোবস্ত করতে আদেশ পাঠায় পুলিশকে কোর্ট আদেশ পাঠিয়েছে জেনে অনন্ত তার আদরের মানসীকে নিয়ে নতুন সংসার গোছাবার কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল অনন্ত আগেই নৈহাটির মিত্র পাড়ায় এই এক কামড়ার ঘরটা ভাড়ায় নিয়েছিল আর সেই সন্ধ্যায় মানসীকে নিয়ে সোজা ভাড়া বাড়িতেই তোলে পরদিন ওরা দুজন শ্যামনগর কালী বাড়িতে গিয়ে বিয়ে করে নেয়

কিন্তু দুই মাস বাদে জীবন সেদিন ওদের পাড়ার লোকদের সাথে যখন কথা বলে অনন্ত ও মানসীর খোঁজ খবর নিচ্ছিল তখন ঘরের জানালার পর্দা সরিয়ে গোপনে অনন্ত তাকে দেখে ফেলে মানসীকে জানালে মানসী ভয়ে একদম চুপসে যায় কারণ এর আগেও জীবন নাকি মানসীর দিকে খুব খারাপ নজরে তাকাতো আর মানসী ওকে দেখলেই ওর সামনে থেকে পালিয়ে যেত বুঝতে পারতো জীবন ওর শরীরের দিকে কু দৃষ্টিতে দেখে এবং সেটা মানসীর একদম ভালো লাগত না

অনন্ত বুঝে যায় যে এই খবর আজই পৌঁছে যাবে দীপক বা পুলিনের কানে পরদিন সকালেই অনন্ত নৈহাটি থানায় ফোন করে জানায় যে ওরা ব্যারাকপুর কোর্ট থেকে পুলিশ প্রটেকশনের জন্য সাহায্য চেয়ে আবেদন করে কোর্ট অর্ডার পেয়েছে। থানায় নিশ্চয়ই তার খবর আছে। থানার দারোগা জানায় ওদের কাছে এখনো কোন আদেশ আসেনি। তবুও ওরা যেন কোর্টের আদেশের কপি নিয়ে একবার থানায় সশরীরে এসে হাজিরা দেয় ভয়ে জর্জরিত অনন্ত বলে যে ওরা রাত এগারোটায় সবার নজর এড়িয়ে থানায় আসবে সেই সন্ধ্যায় ডিউটিতে এসেই ও সির কাছে এই ব্যাপারে আদেশ পায় বলাই সামন্ত। সাথে সাথে ফোন চলে যায় বন্ধু জীবনের কাছে। সেদিন জীবন এই মেয়েটির কথাই বলেছিল বলাই সামন্তকে। খবর পেয়েই জীবন জানিয়ে দেয় বন্ধু পুলিনকে আর পুলিন বড়দা দীপককে।

শ্যামনগর থেকে পুলিন আর দীপক এসে হাজির হয় থানার সামনের গলিতে রাত পৌনে এগারোটায়। চাদর মুড়ি দিয়ে একটা দালানের আড়ালে লুকিয়ে থাকে দুই ভাই একটু বাদেই বোন আর অনন্তকে আসতে দেখে হটাতই অন্ধকার থেকে বেরিয়ে নির্জন রাস্তায় মনসীর বুকে সজোরে একটা ধারালো ছোড়া ঢুকিয়ে দেয় দীপক। আচমকা এই আক্রমণে ভয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায় অনন্ত। মানসী কিছু বলবার বা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার আগে শুধু শুনতে পায় বড়দা বলছে,'আমাদের পরিবারের সম্মান নষ্ট করে তোর আর বেঁচে থাকবার কোন দরকার নেইরে মানসী।'     

বোনের মৃতদেহ রাস্তায় ফেলে রেখে দুই ভাই এগিয়ে যায় ষ্টেশনের দিকে লাস্ট ট্রেন ধরবার উদ্দেশে।

      --------শেষ--------

ছবি- ইন্টারনেট ।
----------------------------

 (ব্যাঙ্গালোর)

 

 

 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.