পায়েল বলল, 'একি উঠে পড়লে পাণ্ডুলিপি শেষ ?'
'না।'
' তাহলে উঠে পড়লে ? '
' আমাকে এখনই একবার বেরোতে হবে, নীহারবাবু নেই।'
'সেকি! কালকেই তো তোমার সঙ্গে ফোনে কথা বললেন। আমি কি যাব? '
'না। তুমি বরং বাবুকে দ্যাখো।'
বেরোনোর সময় ভাবতে লাগলাম কাকে কাকে খবরটা জানানো যায়। তারপর ঠিক করলাম, আগে তো পৌঁছাই। হাঁটতে হাঁটতে মনে হল কেন যে এতদিন পাণ্ডুলিপিটা শেষ করে প্রিন্ট নিইনি ! তাহলে অন্তত স্যারকে দেখাতে পারতাম; বইটা না দেখলেও পাণ্ডুলিপিটা দেখে যেতে পারতেন। মনের মধ্যে একটা আক্ষেপ কাঁটার মতো ফুটতে লাগল। মিনিট পনেরোর হাঁটা পথ। মোবাইলটা বেজে উঠল। পায়েলের গলা, 'শোনো ফুল নিতে ভুলো না।' ফুলের দোকান পেরিয়ে গেলাম। ইচ্ছে হল না। অশীতিপর স্যারকে একটিবার দেখতে যাওয়ার কথা যাদের মাথায় আসেনি তারা আজ ফুল নিয়ে হাজির থাকবেই। ফুল দেওয়ার লোকের অভাব হবে না।
পায়ে পায়ে স্যারের বাড়ির কাছে পৌঁছে গেলাম। কিন্তু একি চারিদিক এত শুনশান কেন ! তবে কী স্যার শ্মশানযাত্রায় বেরিয়ে পড়েছেন ! আহা রে, খবরটা যদি আরেকটু আগে পেতাম। এখন কোথায় যাব আমি ! কী মনে করে সদর দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম। দরজার ঠিক পাশে থাকা বকুল গাছটির তলায় থমকে দাঁড়ালাম। রাশি রাশি সাদা ফুল ঝরে পড়ে আছে, এখনও ঝরছে। আমি যেন ঠিক প্রকৃতিস্থ নই, টলছি। বকুলফুলের গন্ধে কেমন ঝিম ধরে যাচ্ছে। দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। স্নানঘর থেকে জলের শব্দ আসছে। তার মানে ভিতরে কেউ আছে। আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে মিনিট কয়েক দাঁড়িয়ে থাকলাম। অন্যান্যবার এসেই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে হাঁক দিতাম, স্যার ! ভিতর থেকে গম্ভীর কণ্ঠ ভেসে আসত, 'কে ? চন্দন ?' আজ কী বলে হাঁক পাড়ব ? শেষে কেমন একটা ঘোরের মধ্যে ডুবে চেঁচিয়ে উঠলাম 'স্যার !' প্রায় সঙ্গে সঙ্গে স্নানঘর থেকে ভেসে এল সেই নিনাদ 'কে ? চন্দন ! একটু দাঁড়াও স্নানটা সেরে নিই।'
===============
ছবি- ইন্টারনেট ।
----------------------------
চন্দন মিত্র
ভগবানপুর, হরিণডাঙা
ডায়মণ্ড হারবার, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা ।