Click the image to explore all Offers

গল্প ।। ভালবাসার কাঁথা ।। কবিরুল (রঞ্জিত মল্লিক)

 

 
ভালবাসার কাঁথা
কবিরুল (রঞ্জিত মল্লিক)


                  ফড়িং অনেক্ষণ ধরে স্টলগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অথচ  যে জিনিসটার জন্যে এতদূর ছুটে আসা সেই জিনিসটাই খুঁজে পাচ্ছে না। ডাবলু তো বলেছিল সেদিন। ও ভুল বলবে না। দু চারদিন  আগেই ও ডালখোলার স্কুল মাঠে এসেছিল পুষ্প প্রদর্শনীতে। বড় রকমের একটা মেলাও বসে মাঠে। সেই মেলাতেই ঘুরতে ঘুরতে কাঁথার স্টলটা চোখে পড়ে ওর। 

             বেশ কিছু কাঁথার মধ্যে একটা কাঁথা ডাবলুর নজরে আসে। অপূর্ব কারুকাজ সেই কাঁথার। রং বেরংয়ের সুতোতে গ্রাম বাংলার সংস্কৃতি, লোক সংস্কৃতি ধরা রয়েছে তাতে। অত সুন্দর নিপুণ বুনন কাঁথাতে খুব একটা দেখা যায় না। ডাবলু বহুক্ষণ ধরে কাঁথাটা শিল্পীর চোখ দিয়ে অবজার্ভ করার পর বুঝতে পারল ঐ ধরণের কিছু কাঁথা সে ফড়িংয়ের বাড়িতেও দেখেছে। 

            "তুই ঠিক দেখেছিস তো?"
            "সেন্ট পার্সেন্ট সিওর। আমি ভুল দেখেনি। আর প্রতিটি কাঁথাতে রয়েছে জাত শিল্পীর ছোঁয়া।"
          "তার মানে ওগুলো  খয়েরীর কাজ। ঐ ধরণের ডিজাইন ও ছাড়া আর কেউ পারবে না।"
           "হতেও পারে। ধামসা মাদল, টুসু গান, মারাংবুরু সবই তো মিলছে আমার বর্ণনার সাথে। "
           "খয়েরী কি তাহলে বেঁচে আছে? আমি যতদূর জানি ও নেই এই পৃথিবীতে।"
           "একবার স্টলটা দেখে আয়। হয়ত হারিয়ে যাওয়া অনেক কিছু ফিরে পেতে পারিস।"

             ডাবলুর কথা শুনে সেদিন ফড়িংয়ের চোখে ভরা শ্রাবণ নেমেছিল। নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনি।  শোনামাত্র অফিস থেকে ছুটি নিয়ে চলে এসেছিল ডালখোলার স্কুল মাঠে।

               *************

              স্টলগুলো ঘুরে ঘুরে দেখতে ফড়িং অনেকটা সময় পার করল। কালই মেলা শেষ। কাঁথার স্টলটা চোখে পড়ছে না। মনটা বেশ ভার।  একটা সিগারেট ধরিয়ে সোজা মেলা কমিটির কাছে গেল।

           "দাদা কাঁথার স্টলটা দেখতে পাচ্ছি না?"
           "ওরা আজ ভোরেই চলে গেছে শিলিগুড়ি। সেখানে একটা শিল্প মেলাতে স্টল দেবে। আর হ্যাঁ, ওরা নিজেদের মধ্যে কি যেন বলাবলি করছিল। সোমবার দিন স্টল পুরো বন্ধ থাকবে। ওদের দলেরই কোন সহকর্মীর ঐদিন মৃত্যুবার্ষিকী তাই। এই নিন ওখানকার মেলার ঠিকানা। আমার নাম বললেই...."

              রোববার পেরিয়ে আজ সোমবার। ফড়িং শিল্পমেলাতে এসেছে। বাসে এখানে আসতে গায়ে বহু পুরানো কাঁথাটা জড়িয়ে ছিল। কাঁথার গায়ে ভালবাসার গন্ধটা আগের মতনই আছে। 

             স্টলটা আজ বন্ধ। স্টলের দু চার জন লোক মেলাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাদের একজনকে ধরতেই সব কিছু পরিষ্কার হয়।

            একটু পরেই ঝুপ করে সন্ধ্যে নামল। একসাথে পনেরোটা মোমবাতি জ্বলে উঠল স্টলের সামনে। একটি কিশোরী মেয়ে খয়েরীর ছবিতে মালাটা দিয়েই কেঁদে উঠল। ওর হাতে একটা সুন্দর কাঁথা। গতকাল সেটা শেষ করেছে। সেটাও বিছিয়ে দিল ছবির সামনে। 

               একটা বছর পার হতে অনেকটা সময় লাগল। 

               ...........................

               অফিসের ছুটি ম্যানেজ করে ফড়িং আজ ডালখোলাতে এসেছে। মেলাতে। ভালবাসার স্বাক্ষি হতে। পুষ্প প্রদর্শনীর ফুলগুলো ওর আর খয়েরীর ভালবাসার মতন ফুটে রয়েছে। আজ স্টল উদ্বোধন করেই চলে যাবে।

                 কাঁথাগুলো স্টলে সাজাতে পুরানো দিনগুলো ভাসছে। 

                    **********

                 চাকরির প্রথম পোস্টিং পুরুলিয়াতে। সেখানে আদিবাসী মেয়ে খয়েরী মানে ফুলবাসীর সাথে পরিচয়। তারপর প্রেম। ভিন্ন সম্প্রদায়ের মেয়েকে পরিবার মেনে নেয়নি। তাই ওদের বিয়েটা হয়নি। ফড়িংও অবিবাহিত।ফুলবাসী ভাল কাঁথা বুনত। পুরুলিয়ার ছাড়ার আগে বেশ কিছু কাঁথা উপহার দেয় ওকে। সেগুলো ভালবাসার মহান সম্পদ হিসেবে থেকে গেছে। 

               খয়েরী  বহুদিন আগে মারা গেলেও সিঙ্গল মাদার হিসেবে একটা মেয়েকে সে দত্তক নিয়েছিল। ফুলমণি মায়ের কাছ থেকে সব শিখে নিয়েছে। কাঁথাটা ফুলবাসীর মতন ভালই বোনে।
            সেই কাঁথাতে ফড়িং আর ফুলবাসীর  ভালবাসার কাহিনীও বোনা আছে।
                
                  স্টল উদ্বোধন অনেক আগেই হয়ে গেছে। ফড়িংয়ের  চোখ বেয়ে নামছে নোনা শিশির। ফুলমণির চোখেও পূর্ণিমার ভরা কোটালের জোয়ার। তার দু ফোঁটা আদুরে কাঁথাতে পড়ে তাকে ভিজিয়ে দিল।
===================
ছবি- ইন্টারনেট ।
----------------------------
 Address: 85 Kalibari Road, Nalta
                  Near Air Port Auto Stand
                   Kokata - 28
                    PO : Italgachha

Mobile: 9073939997

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.