হাসান আজিজুল হক (১৯৩৮ -- ২০২১)
বর্তমান সময়ের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম গল্পকার। উদ্বাস্তু সমস্যা, মধ্যবিত্তের নানামাত্রিক ধ্বস, জীবন সংগ্রাম, মানুষের অবদমিত যৌন আকাঙ্ক্ষা, দুর্ভিক্ষের জন্য সৃষ্ট মৃত্যুর বিভীষিকা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার নিশংসতা, কালোবাজারি ইত্যাদি চিত্রগুলি যেমন তাঁর গল্পে পাওয়া যায়, তেমনি পাওয়া যায় গ্রামীণ মানুষের জীবন ও প্রকৃতির নানা বৈচিত্রময় ছবি। হাসান আজিজুল হক ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর ১৯৫৪ সালে রাঢ়বঙ্গ থেকে পূর্ববঙ্গে স্থায়ীভাবে চলে আসেন।
তাঁর শৈশব ও কৈশোর জীবন কেটেছে গ্রামীণ জীবন ও প্রকৃতির মধ্যে। পূর্ববঙ্গের খুলনার ফুলতলায় গ্রাম্য মানুষের জীবন ও সেখানকার প্রকৃতির সাথে তাঁর আত্মিক সম্পর্ক উত্তরকালে স্মৃতির আশ্রয় লেখক জীবনে স্বর্ণ খন্ডের নয় উজ্জ্বল হয়ে ক্রিয়াশীল থেকেছে। তাঁর একাধিক গল্পে গ্রামীণ জীবন ও প্রকৃতির শিল্পসম্মত রূপ লক্ষ্য করা যায়।
তাঁর ছোটগল্প যেমন, শকুন, তৃষ্ণা, একজন চরিত্রহীনের স্বপক্ষে, মন তার শঙ্খিনী,
পরবাসী, জীবন ঘষে আগুন ইত্যাদি বিখ্যাত গল্পগুলিতে আমরা ভূপ্রকৃতি ও পরিবেশের
উজ্জ্বল সমন্বয় পেয়েছি।
"শকুন" গল্পটি যৌনতাকে আশ্রয় করে গড়ে উঠলেও সমাজের অবক্ষয়ের মূল কারণ যে আর্থ-রাজনৈতিক অসঙ্গতি ও অসামঞ্জস্যের মধ্যেই নিহিত আছে লেখক সেটাই স্পষ্টভাবে দেখিয়েছেন। তাঁর লেখায় "সুদখোর শোষকেরা আমাদের সমাজে অমঙ্গলের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। শকুন যেমন মৃত প্রাণীর মাংসে জীবন ধারণ করে থাকে, আমাদের সমাজেও তেমনি নিষ্ঠুর ধনিক শ্রেণী মৃতপ্রায় অসহায় দুস্থ মানুষের উপর তাদের নগ্ন থাবা প্রসারিত করে থাকে।"
শকুন গল্পটি প্রতীক ও রূপকের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে। গ্রামের কয়েকটি ছেলে দিনের আলোয় ফিরতে না পারা একটি সকলকে নিয়ে মেতে ওঠে।
অবশেষে শকুনটার মৃত্যু হয়। শকুনটির মৃত্যুর আগে ছেলেরা খেলারছলে তার গা থেকে একটি একটি করে সমস্ত পালক খসিয়ে নিয়ে তাকে অসুন্দরের প্রতিমূর্তি বানিয়ে ফেলে। ক্লান্ত ছেলেদল গ্রামের মধ্যে ঢুকতেই তালগাছ ও ন্যাড়া বেল গাছের আবছা ছায়ায় সাদা মত কি যেন দেখতে পেল। সেটা আসলে অন্য কিছুই নয়, কাদু শ্যাখের রাঁড় বোনের সঙ্গে জমিরুদ্দির অবৈধ যৌন সঙ্গমের ফলে জাত একটি অপূর্ণাঙ্গ মানব শিশুর অস্পষ্ট দৃশ্য। গল্পটির প্রতিটি ছত্রে রয়েছে গ্রাম্য জীবন ও গ্রাম্য পরিবেশের সঙ্গে সাযূজ্য রেখে প্রতীক ও রূপকের মাধ্যমে সামাজিক জীবনের একটি জীবন্ত দলিল চিত্রায়িত করেছেন।গল্পের শেষে ছেলেদের অত্যাচারের মৃত শকুন ও অর্ধস্ফুট মানব শিশুর যোগসূত্র বাঁধা পড়ে যায়। এই অবৈধজাত মানব শিশুর মাধ্যমে লেখক সামাজিক শোষণের উপস্থিতির সচেতন স্বাক্ষর রাখেন। হাসান আজিজুল হকের গল্পে তাই আমরা গ্রহণগ্ৰস্ত সময় ও সমাজের চিত্রায়ন দেখতে পাই।
আবার এই অবক্ষয়গর্ভা সমাজের মধ্যেও সুচেতনা ও প্রতিবাদের স্ফুরণ ঘটে। এই মুক্তির বোধই হাসান আজিজুল হকের অন্বিষ্ট।
"তৃষা" গল্পে প্রধান চরিত্রের জীবনে কোন স্বপ্ন নেই, লক্ষ্য নেই ---- শুধু যেন অবক্ষয়ের স্রোতে সে ভাসমান। লক্ষ্যহীন জীবনে কখনো উদগ্র হয়ে ওঠে কামুকতা, কখনো নির্লজ্জ পেটুকতা। ক্ষয়িষ্ণু সমাজের প্রতীক হিসাবে অবধারিতভাবেই বাশেদকে জারজ সন্তানেররূপেই অবতীর্ণ হতে হয়। প্রবল কামুকতা ও মাত্রাহীন পেটুকতার অতৃপ্ত জ্বালায় সর্বদাই তার হৃদয় বিদীর্ণ হয়েছে। অচরিতার্থ কামনা-বাসনা তাকে বারংবার দিকভ্রষ্ট করেছে। সে পেটভরে কোনদিন আহার করার সুযোগ লাভ করেনি। তাই স্বপ্ন দেখতো তার চারপাশে সর্বদাই যেন ভুরিভোজের আয়োজন চলছে। বাশেদ শুধু পেটের ক্ষুধায় যন্ত্রণাকাতর হয়না, না-পাওয়া যৌন-ক্ষুধাও তাকে কাতর করে। গল্পের শেষ প্রান্তে এসে আমরা দেখি, মাত্র
চার আনার বিনিময় গ্রামের সখি নামক একটি মেয়ের সঙ্গে সঙ্গম ব্যবস্থা কল্পনা করে, তখন বাশেদের সারা শরীরে কামাগ্নি প্রজ্বলিত। কিন্তু সঙ্গমের পূর্বেই এক পর্যায়ে শরীরের সমস্ত শক্তি হারিয়ে ফেলে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করতে থাকে।
মূলগল্প থেকে লেখক আজিজুল হকের ভাষায়:
"বাশেদ প্রাণপণ চেষ্টায় উঠে দাঁড়ালো। আর
আর কিছু সে চিন্তা করতে পারল না। অন্ধ
একটা শক্তি তাকে টেনে নিয়ে চলল। উঁচু-নিচু
মাটিতে তার পা কাঁপতে লাগলো আর সেই
প্রবৃত্তিতাড়িত পদক্ষেপ বেসামাল হতে হতে
কখন এসে পড়ল একটা গর্তের মধ্যে। বিশাল
তালগাছের মতো বাশেদ মাটিতে পড়ল আর
গড়িয়ে চললো ঢালু পার বেয়ে কিংবা বলা যায়
একটা তীক্ষ্ণ তীব্র মৃত্যুর মতো অমোঘ প্রবৃত্তি
গড়াতে গড়াতে এগিয়ে চলল ঢালু পার
বেয়ে, তার মৃত্যুর দিকে।"
"তৃষ্ণা" গল্পে বাশেদ এই সমাজের একজন প্রতিনিধি। জীবিকার চিন্তাই যার কাছে প্রধান সমস্যা। তার কাছে আহারের চিন্তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অস্তিত্বের সংগ্রামে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারলো না। প্রতিকূল স্রোতের সে মৃত্যুবরণ করেছে। আবার এই সমাজের মধ্য থেকেই জেগে ওঠে প্রতিবাদী মানুষ, যারা সেই প্রতিকূলতাকে জয় করতে সচেষ্ট। আজিজুল হকের গল্পে মধ্যবিত্ত মানুষেরা বিপর্যস্তগ্ৰস্ত। লেখকের ভাষায়:
"জীবনটা জীবনের মতো বাতাসে উড়ছে। সুকুমার হৃদয়বৃত্তি তাদের কাছে জীবনে প্রহসনের নামান্তর।"
"একজন চরিত্রহীনের স্বপক্ষে" গল্পের মধ্যেও "তৃষ্ণা" গল্পের মত একই অসুস্থতা, বিকৃতি, বিবর্ণ ও বিস্বাদ জীবনের পরিচয় ফুটে উঠেছে। মধ্যবিত্ত প্রৌঢ়প্রায় সতীনাথের অতৃপ্ত যৌনজীবন, পারিবারিক সম্পর্কের বাইরে পরস্ত্রী ভামিনী-র সঙ্গে অবৈধ যৌনতা, তার বিকৃতি ও অস্থিরতার কাহিনী। প্রতিপত্তি ও প্রভূত ভূ-সম্পত্তির অধিকারী ব্যক্তি গ্রামীণ সমাজে অর্থের বিনিময়ে রক্ষিতা পুষতে পারে তার নিদর্শন সতীনাথ। তাই লেখক লেখেন:
"অজপাড়াগায় খারাপ পাড়া বলে নির্দিষ্ট কিছু
নেই। মাঝে মাঝে দুটি একটি হাড়ি ডোম বাউরী
কিংবা বাগদী মেয়ে কুল ছিটকে রান্ডি হয়ে
যায়। সেটা বেশি দৃষ্টিকটু হয়ে উঠলে
ছোটলোক পাড়াতেও তার জায়গা নেই। বলে,
শালী সতী লয়। রেখেঢেকে করলে ভাবনা নেই
অবশ্য।"
ক্ষয়িষ্ণু সমাজের চারপাশের আবেষ্টনী এই গল্পের নায়ক সতীনাথকে সুস্থ চিন্তার অধিকারী করেনি।
চরিত্র হননের মধ্য দিয়ে পরিতৃপ্তি লাভ কি সে তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য বলে ধরে নিয়েছে। যা গল্পে ফুটে উঠেছে:
"সতীনাথ রাত নটার সময় ঝিমোয় আর তেঁতুল গাছের জটলার মধ্যে জটলার মধ্যে কুঁড়েটার কথা ভাবে। মেয়ে মানুষটা তো থলে থলে হয়ে এল। মেয়েমানুষ যে এবার নোংরা মাগী হয়ে গেল।....
যা ভাবে তা তো আর প্রকাশ করা যায় না। হয়তো অনেকদিন টাকা দিয়ে আসছে, শাড়ি, শেমিজ
দিয়ে আসছে, তেলটা নুনটা দিচ্ছে, তাই মেয়ে মানুষটার কাছে যা ভাবে, যা করবে বলে ভাবে,
যত নোংরাই হোক সে বলতে পারে.... "
"পরবাসী" গল্পে লেখক যেন নিজেই পাঠকদের সামনে হাজির হয়েছেন। ব্যক্তিগত জীবনে হাসান আজিজুল হক নিজের জন্মভূমি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে
দেশ খন্ডিত হবার সঙ্গে সঙ্গে দুটি সম্প্রদায়ের মানুষের স্নেহ ভালবাসার সম্পর্ক চিড় ধরেছিল। একদিন হঠাৎ দেখা গেল একে অপরের সাজানো বাগানের মত সংসারকে লন্ডভন্ড করে দিচ্ছে। প্রকৃতিতে সবুজের চিহ্ন লেশমাত্র নেই। শুধু ভাইয়ের খুনে রক্তরঞ্জিত হাত। তারই মধ্যে শোনা যায় ওয়াজদ্দির কণ্ঠস্বর ,
"তোর বাপ কটো? মা কটো? একটা তো? দ্যাশও তেমনি একটো।"
এই অসাম্প্রদায়িক ও সুকুমার জীবন দর্শন নিয়েও ওয়াজদ্দিকে খুন হতে হলো উগ্ৰ ধর্মান্ধ মানুষের হাতে। চোখের সামনেই নিহত হয় স্ত্রী-সন্তানরা।
অতঃপর নিরাপত্তা সন্ধানী বশির দেশ ছেড়ে পালাতে থাকে। পথে একসময় সে একটি শুকনো খালে আশ্রয় নেয়। সে দেখতে পেলো তারই মত এক অসহায় মানুষ খালের পাড়ে আশ্রয় নিয়েছে।
অকস্মাৎ আদিম হিংস্রতায় বশির ধুতি পরা ওই লোকটিকে কুড়ুলের প্রচন্ড আঘাতে হত্যা করে। প্রতিশোধের স্পৃহায়। কিন্তু মৃত্যু যন্ত্রণাকাতর লোকটাকে দেখে বশিরের মনে হয় সে যাকে হত্যা করলো সেই মুখটা ঠিক যেন ওয়াজদ্দির মুখ।
কৃষক বশিরের এই জাগরণের মধ্য দিয়ে লেখক দেখিয়েছেন আমাদের, যাবতীয় ধর্মীয় আচ্ছন্নতা এবং সাম্প্রদায়িক বিভেদচেতনার চেয়ে মানবতা অনেক ঊর্ধ্বে। অশিক্ষিত ওয়াজদ্দি ও বশিরের আত্মোপলব্ধির নিকট বিবেকহীন ক্ষমতালিপ্সু মানুষের মূঢ়তা ধিকৃত হয়। বশির ও ওয়াজদ্দির চরিত্রের মধ্য দিয়ে লেখকের নিজের পরিবারের ও পারিপার্শ্বিক ঘটনাকে এক ভিন্ন ছাঁচে তুলে ধরেছেন, যা বাংলার প্রকৃতি ও কৃষিজীবী মানুষের মর্মগত চেতনার প্রতিচ্ছবি।
একজন যুবতী নারী তার অন্তরের প্রেমকে কতভাবে লালন করতে পারে, কতটা ছলা-কলা, ছলনাময়-রহস্যময় প্রেমের ফাঁদে ফেলে। সেই নারী তার প্রেমিককে কতভাবে খেলাতে পারে, লেখক তা সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন --- "মন তার শঙ্খিনী" গল্পে। হামিদা ও শাদু সমাজের নিম্ন শ্রেণির দুই যুবক যুবতী। দুজনের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু অভাবের তাড়নায় হামিদার বিয়ে হয় ভিন গাঁয়ের এক ধনীর সঙ্গে। তার জমি-জিরেত ভালোই ছিল। হামিদার বিয়ে হয়ে গেলেও সে কুৎসিত বরের কাছে না গিয়ে নিজের গাঁয়ে দাদীর কাছেই থাকলো। হামিদার বিয়ের পর শাদুর জীবনে নেমে আসে হতাশার অন্ধকার। বিষণ্নতা ও বিষাদময়তা তাকে আচ্ছন্ন করে রাখতো। এদিকে গভীর রাতে হামিদা
শাদুকে তার ঘরে আসার আহ্বান করতো। এই অপ্রীতিকর আহ্বানে শাদু সাড়া না দিয়ে হামিদাকেজানায়:
"হয় স্বামীর ঘরে যা, নইলে তাকে তালাক দিয়ে আমাকে বিয়ে কর।"
হামিদা এই প্রস্তাবে রাজী হয়না। হামিদা শাদুকে প্রেম দেয়, আর তাকে নিয়ে নানাভাবে খেলতে থাকে ---- এতেই তার আনন্দ।
স্বামীর ঘরে না গিয়ে শাদুর সঙ্গে মেলামেশা করতে হামিদার নীতিবোধ এতটুকু বাধে না। গ্রামীণ জীবনের অভাবগ্রস্ত নারী ও পুরুষের জীবনে কামনা-বাসনার একটি বাস্তব চিত্র লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন হামিদা ও শাদু র মধ্যে দিয়ে।
"জীবন ঘষে আগুন" গল্পটির পটভূমি বাংলার খরা কবলিত ও দুর্ভিক্ষ পীড়িত গ্রাম্য অঞ্চলের। একটি গ্রামীণ মেলাকে কেন্দ্র করে রচিত হলেও গল্পাংশকে লেখক মিলিয়ে দিয়েছেন সমকালীন জীবনের স্পন্দনের সঙ্গে। এই গল্পে লেখক নিম্নবর্গের মানুষদের সংঘবদ্ধতাকে যৌক্তিক প্রেক্ষাপটে স্থাপন করেছেন। উচ্চবর্গের মানুষ এবং পুরোহিত শ্রেণীর অত্যাচারে তারা বিপন্ন। ক্ষমতাবান বাবুদের লুব্ধ দৃষ্টি পড়ে তাদের রমণীদের উপর। বাগদী রমণী কৃষ্ণভামিনীর ক্ষোভের মধ্যে মূর্ত হয়ে ওঠে যুগ যুগ ধরে প্রবাহিত শোষণের চিত্র। উচ্চশ্রেণীর ঘন্টাবাবু নিম্নবর্গের রমণী কালীর অসহায়তার সুযোগ নেয়। কোন বর্গের সচেতন মানুষ এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠে ঘন্টাবাবু-কে হত্যা করে।
পশ্চিম বাংলার দিগন্ত বিস্তৃত বিলকে তিনি শৈশব ও কৈশোর পর্যন্ত খুব কাছ থেকে দেখেছেন। দেশ ত্যাগের আগে পর্যন্ত বিল ছিল তার কাছে নিত্যসহচরের মত। শৈশব ও কৈশোরের স্মৃতি বিজড়িত বিলকে নতুন করে তিনি আবার ফিরে পান খুলনার ফুলতলায়। পশ্চিমবঙ্গে ও প্রকৃতির সঙ্গে সেখানকার মানুষ ও তার গল্পে ছায়া ফেলে বারবার। তার স্মৃতিকাতরতা কখনোই প্রাদেশিকতা পাংশুল হয়ে ওঠেনি। বীপ্সায় ব্যঞ্জনা ও চরিত্রে তা
দৈশিকতা সীমা ছাড়িয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের শোষিত কৃষকদের সঙ্গে নির্বিকল্পভাবে একাত্মতা স্থাপনের জন্য উন্মুখ হয়। মানুষের জীবন প্রবাহের সঙ্গে প্রকৃতির সাহচার্য ঘনিষ্ঠতায় আবদ্ধ। হাসান আজিজুল হকের গল্পে প্রকৃতি স্মরণযোগ্য অবস্থান জুড়ে আছে। তার গল্পে প্রকৃতি মানুষের কর্ম ধারার সঙ্গে এমন ভাবে ওতপ্রোত হয়ে আছে যে, জীবন ও প্রকৃতি একে অন্যের পরিপূরক হয়ে ওঠে। তার প্রকৃতি চেতনা দেশের শ্রমজীবী মানুষের জীবনের তাৎপর্যকে প্রতিভাসিত করে তোলে।
গ্রামীণ জীবন ও প্রকৃতি তাঁর গল্পে সামগ্রিক আয়তনে যতখানি জায়গা পেয়েছে তার সবটুকু দিয়েই গ্রামীন জীবন ও প্রকৃতির ঐক্যতান চিত্রায়িত হয়েছে।।
ছবি- ইন্টারনেট ।
___________________________________________
ঋণ স্বীকার :---
(১) 'বাংলাদেশের ছোটগল্প জীবন ও সমাজ' --
মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন। ঢাকা।
(২) হাসান আজিজুল হক, রচনা সংগ্রহ।
(৩) 'হাসান আজিজুল হকের গল্পে সমাজবাস্তবতা'
--- আবু জাফর। ঢাকা।
(৪) ' হাসান আজিজুল হক : রাঢ়বঙ্গের উত্তরাধিকার' -- মহীবুল আজিজ। চট্টগ্রাম।
__________________________________________
লেখক ••• সৌম্য ঘোষ। চুঁচুড়া। হুগলী।
___________________________________________