গল্প ।। চালতা ফুলের দিন ।। রফিকুল নাজিম
চালতা ফুলের দিন
রফিকুল নাজিম
গত ১৫ দিন ধরে বিষয়টা খেয়াল করছে অবন্তী। অবশ্য ব্যাপারটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে তার কাছের বান্ধবী- তিনু। ছেলেটা প্রতিদিন স্কুল গেইটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে। স্কুলে আসা যাওয়ার পথে বডিগার্ডের মতো তাকে অনুসরণ করে। অবশ্যই একটা নির্দিষ্ট দূরত্বে ছেলেটা অবন্তীর পেছন পেছন হাঁটে। ছেলেটা দেখতে খুব একটা মন্দ না। বেশ আলাভোলা টাইপ। মোটা কালো ফ্রেমের চশমা পরে। সুবোধ বালকের মতো চুল বা'পাশে সিঁথি কাটে। হাসিটা বেশ মিষ্টি, তবে লাজুকতা ছেলেটার হাসিকে আরো মায়াময় করে তুলে! রাতিনের এ বিষয়গুলো প্রতিদিনই আড়চোখে খেয়াল করে অবন্তী। রাতিনের জন্য কেমন যেন একটা মায়া ক্রমশই লতিয়ে উঠছে তার মনের চিলেকোঠায়! মাঝে মাঝে নিজের ওপর নিজেরই বিরক্তি আসে। কী হচ্ছে এসব! মায়ার লতানো ডগাকে অবন্তী চিমটি দিয়ে কেটে দেখেছে- লাভ হয়নি। বরং একাধিক শাখাপ্রশাখা নিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে মনের সর্বত্র। মায়া এক ভয়ংকর বিষয়।
বাড়ি ফেরার পথে তিনু অবন্তীকে বলে, দোস্ত, 'রাতিন ভাই তোর প্রেমে জমে ক্ষীর হয়ে গেছে!' 'কী যে আবোলতাবোল বকছিস! তিনি আমার প্রেমে পড়বে কেন!'- মনের ফাগুন আড়াল করার জন্যই কথাগুলো বলে অবন্তী। তালুকদার বাড়ির বড় মেয়ে অবন্তী। নিজের ঘরে অনেকক্ষণ ধরে নিজেকে আয়নায় দেখছে। কিছু একটা আবিষ্কারের নেশায় সে অস্থির। কেন রাতিন তাকে ভালোবাসে? প্রশ্নটা বারবার তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। ঘুণপোকার মত কুটকুট করে গহীনের বিশ্বাস তার সংশয়ের দেয়াল ভাঙে। পাশের রুম থেকে দাদুর মোটা ফ্রেমের চশমাটা দৌঁড়ে নিয়ে আসে সে। চশমাটা চোখে পরে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে। নিজের মধ্যে রাতিনের অস্তিত্বের উৎসস্থল খোঁজে। চিরুনী দিয়ে অবন্তী তার চুল বা'দিক থেকে ডান দিকে সিঁথি কাটে। নিজেকে আয়নায় দেখে অবন্তী নিজেই দু'হাতে মুখ ঢাকে। লজ্জায় লাল হয়ে গেছে তার গৌড়মুখখানা। কি হচ্ছে এসব! যেনো প্রচন্ড প্রতাপে অবন্তীর মন জুড়ে সাম্রাজ্য গেড়ে বসছে রাতিন।
পাশের গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের হেড মাস্টারের ছেলে রাতিন। খুব মেধাবী ছাত্র। উপজেলা সদরের নামকরা কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। ৫ম ও ৮ম শ্রেণিতে বৃত্তি পরীক্ষায় উপজেলায় প্রথম হয়েছিল। তাই উপজেলার অনেকেই রাতিনকে একজন মেধাবী ছাত্র হিসেবেই চিনে। জন্মতিথিতেই মা'কে হারিয়ে স্কুল শিক্ষক বাবার আদরে শাসনে বড় হয়েছে রাতিন।- বন্ধুমহলে বিবিসি নামে পরিচিত তিনু রাতিন সম্পর্কে অবন্তীকে সর্বশেষ খবরাখবর পরিবেশন করে। কাছের বান্ধবী হিসেবে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করতে পেরে সেও খুশিতে বাকবাকুম করছে!
কমন রুমের জানালা দিয়ে রাতিনকে দেখা যাচ্ছে। স্কুল গেইটের বিপরীতে বটগাছটার নিচে আলাভোলা ছেলের মতো দাঁড়িয়ে আছে। মাঝে মাঝে স্কুল গেইটের দিকে ইতিউতি করে কাউকে খুঁজছে। রাতিনের আকুলিবাকুলি দেখে তিনু অবন্তীর সাথে মজা করতে থাকে। রাতিনের অস্থিরতা দেখে খুব মায়া হচ্ছে অবন্তীর। কিন্তু তিনু যদি ব্যাপারটা টের পায় তাহলে তো খবর আছে। তাই রাতিনের জন্য অবন্তীর মায়া হয়। সে বুকের আস্তিনের নিচে কৌশলে লুকিয়ে রাখে। হঠাৎ তিনু চিৎকার করে বলে, 'দ্যাখ অবন্তী, তোর মজনু বুকপকেটে গোলাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অবন্তীও দ্যাখে, সত্যিই তো সাদা শার্টের পকেটে লাল টকটকে গোলাপ হাসছে আর যেন অবন্তীকে ইশারায় ডাকছে। রাতিনের এমন ছেলেমানুষি দেখে অবন্তীর রাগ হচ্ছে খুব। হঠাৎ সে রাগে গজগজ করে বলতে থাকে, 'যদি এই ব্যাটা আজ রাস্তায় আমাদেরকে ফলো করে; তাহলে তার খবর করে ছাড়বো।' কমন রুম থেকে বের হয়ে আসে দুই বান্ধবী। হঠাৎ বিজলি চমকালে যেমনটা হয় স্কুল গেইটে অবন্তীকে দেখে রাতিনের অবস্থাও তেমনই হচ্ছে। প্রতিদিনের মতো আজো রাতিন ছায়ার মতো অবন্তীর পেছন পেছন হাঁটছে। স্ক্যালের মাপে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে হাঁটছে। তিনু কয়েকবার পিছনে ফিরে বেচারা রাতিনের অবস্থান ও অবস্থার সর্বশেষ রিপোর্ট দিচ্ছে অবন্তীকে। বুলেটিন না বুঝলে তিনু নিজ দায়িত্বে বান্ধবীকে রাতিনের মনের আবহাওয়া জলবায়ুর খবর পাঠ করে শোনাচ্ছে ফিসফিস করে। তালুকদার বাড়ির দক্ষিণ দিকের চালতা গাছের নিচে এসে অবন্তী হঠাৎ থমকে দাঁড়ায়। ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে দাঁড়ায়। অবন্তীর এমন থমকে দাঁড়ানো দেখে তিনু অপ্রস্তুত হয়ে যায়। এদিকে রাতিনও নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও অবন্তীকে ফলো করার পথে ব্রেক কষে। অবন্তীর অগ্নিমূর্তি দেখে পথে হারিয়ে যাওয়া আদুলি খোঁজার মতোই একনিষ্ঠ মনে রাতিন কিছু একটা খোঁজার ভান করছে। অবন্তী তিনুর হাত এক হ্যাচকায় ছেড়ে রাতিনের মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়। রাগে রাগে গজগজ করতে করতে অবন্তী রাতিনকে জিজ্ঞেস করে, 'আপনি ছায়ার মতো আমাদেরকে প্রতিদিন অনুসরণ করেন কেন? কি সমস্যা আপনার? ছ্যাচড়ামি ছেড়ে অন্য পথে হাঁটেন। বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই স্ট্যাচু অব লিবার্টি'র মতো শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাতিন। এমন মুহূর্তের জন্য হয়তো সেও প্রস্তুত ছিলো না। অবন্তীর আরো রাগ হয়। 'এই ভীতুর ডিম, কাপুরুষের মতো পিছু পিছু না ঘুরে বীরপুরুষের মতো কি বলতে চান- বলেন।'- বিধ্বংসী কামানের গোলার মতো কথাগুলো রাতিনের কান, মগজ ও মনে আঘাত করছে। গজগজ করতে করতে ফিরে যাচ্ছে অবন্তী। রাতিন এবার মুখ খুলে বললো, 'অবন্তী, দাঁড়াও।' এবার অবন্তীর সামনে এসে দাঁড়ায় রাতিন। বুকপকেট থেকে একটা চিরকুট ও গোলাপ অবন্তীর হাতে দিয়ে বললো, 'আগামীকাল আমি ঠিক এইখানেই অপেক্ষা করবো। চিঠিটা পড়ে উত্তর দিবে, প্লিজ।' অবন্তী কোনো কিছু বলার আগেই রাতিন উল্টোপথে 'দে চম্পট' টাইপের হাঁটা শুরু করলো। অবন্তী ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে বেচারাটার চলে যাওয়া পথের দিকে।
ঠিক সময়েই আগে চালতা গাছের নিচে এসে অপেক্ষা করছে রাতিন ও মুহিন। স্কুল থেকে প্রতিদিনের মতো দুই বান্ধবী ফিরছে। দূর থেকেই একপলক অবন্তীকে দেখে নিলো রাতিন। মনে হলো আকাশের মন ভালো নেই। এক রাজ্য কালো মেঘের দৌরাত্ম্য অবন্তীর চোখে মুখে। রাতিনের সামনে শান্তভাবে দাঁড়িয়ে অবন্তী প্রশ্ন করলো, মুহিনটা আবার কে? রাতিন বিস্মিত স্বরে বললো, 'কি বলো! মুহীনকে চিনো না! এই হলো আমার বন্ধু- মুহিন। দক্ষিণপাড়ার চৌধুরী বাড়ির ছেলে। খুব মেধাবী ছেলে। চৌধুরীবাড়ির বিশাল ধনসম্পদের সে একাই মালিক। ছোটো নবাব বলতে পারো তাকে।'- কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে যাচ্ছে রাতিন। মনে হচ্ছে স্কুলের সাঈদ স্যারের কাছে 'এ্যা জার্নি বাই বোট' রচনা গড়গড় করে সে বলেই যাচ্ছে। অবন্তী এক নিঃশ্বাসে তাকিয়ে আছে রাতিনের দিকে। 'জানো অবন্তী, মুহিন তোমাকে খুব ভালোবাসে। কিন্তু সে তার মনের কথাটা তোমাকে বলতে পারছিলো না। অগত্যা আমাকে চিঠিটা সে দিয়ে বললো তোমাকে পৌঁছে দিতে। কিন্তু চিঠিটা....।' কথাটা শেষ করার আগেই অবন্তী খুব কষে এক চড় বসিয়ে দিলো রাতিনের বাম গালে। আর কাল বিলম্ব দেরি না করে অবন্তী কাঁদতে কাঁদতে দৌঁড়ে চলে গেলো তালুকদার বাড়ির দিকে। ঘটনার আকস্মিকতায় চালতা গাছের মতোই হতবিহ্বলতায় অনড় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো রাতিন। তিনুও অবন্তীর পেছন পেছন যেতে যেতে বললো, 'রাতিন ভাই, কাজটা আপনি ভালো করলেন না। গত ক'দিনে অবন্তী আপনাকে নিয়ে কতোই না মায়ার নকশী জাল বুনেছে! আর আপনি.....? ছিঃ, রাতিন ভাই।'
২.
হাওয়ায় হাওয়ায় মেঘে মেঘে কেটে গেলো ষোলো বছর। এসএসসি পাশের এর আমেরিকা প্রবাসী বড় ভাইয়ের কাছে অবন্তীরা সপরিবারে চলে যায়। রাতিনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে স্নাতকোত্তর শেষ করে গ্রামের কলেজেই এখন পড়াচ্ছে। গ্রামের সবাই রাতিনকে খুব ভালোবাসে। নিবেদিত একজন শিক্ষক পেয়েছে প্রান্তিক এই জনপদের অবহেলিত কলেজটি আজ শিক্ষার বাতিঘর হিসেবে জেলায় সুপরিচিত। রাতিন দ্বাদশ শ্রেণিতে গণিতের ক্লাস নিচ্ছিলো। হঠাৎ অফিসের পিওন জলিল এসে বললো, 'স্যার, আপনের লগে একজন দেহা করতে আইছে। আমি অফিসো বইতে কইছি।' 'আচ্ছা, অফিসে গিয়ে ভিজিটরকে চা নাস্তা দাও। আমি ক্লাসটা শেষ করে আসছি।'- বলে জলিলকে বিদায় করে রাতিন।
অফিসে গিয়ে নিজের চেয়ারে বসে রাতিন। বোরকা পরা একজন মহিলা তার সাথে দেখা করতে এসেছে। সাথে ছয় সাত বছরের লাল টুকটুকে একটা মেয়ে। ভারী মিষ্টি চেহারা। মহিলা ইশারায় সালাম দিয়ে চেয়ার টেনে রাতিনের সামনে এসে বসলেন। রাতিন চোখ থেকে মোটা ফ্রেমের চশমাটা খুলে টিস্যু দিয়ে পরিষ্কার করতে করতে বললো, 'অনেকক্ষণ আপনাকে বসিয়ে রাখার জন্য আমি সত্যি দুঃখিত। এবার বলুন কি ব্যাপারে আসছেন?' মহিলা একপলকে তাকিয়ে আছে রাতিনের দিকে। কোনো কথা বলছেন না। ভদ্রমহিলা একপলকে তাকিয়ে থাকায় রাতিন কিছুটা বিব্রতবোধ করছে। তাই অন্যদিকে তাকিয়ে সে জিজ্ঞেস করে, 'আপনি কি আমার কোনো শিক্ষার্থীর অভিভাবক? কি বলবেন নিঃসংকোচে বলুন।' এবার মহিলা ডান হাতে নিজের মুখের নেকাব খুলে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়। মহিলাকে একপলক দেখেই পড়িমরি করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় রাতিনও। মাঝখানে কিছুটা সময় কেটে যায় দু'জনের মৌনতায়। নিজেকে স্বাভাবিক করে মুখে শুকনো একটা হাসি ঠোঁটের কোণে ঝুলিয়ে রাতিন বললো, 'অবন্তী, তুমি! কেমন আছো?' অবন্তী কাঁদছে। শিশুর মতো কাঁদছে। কোন উত্তর দিতে পারছে না। নিজেকে সামলে নিয়ে সে বললো, 'এতোদিনেও বিয়ে করেননি কেন?' রাতিন মৃদু হেসে বললো, 'আমার মতো চাল চুলোহীন আলাভোলাকে বিয়ে করতে কার এতো দায় পড়েছে! কারো কষ্টের আর কারণ হতে চাইনি। তাই সংসার পাতা হয়নি। আচ্ছা, আমার কথা বাদ দাও।' একটু এগিয়ে এসে ছোট্ট লাল টুকটুকে মেয়েটা কোলে নেয় রাতিন। 'ভারী কিউট মেয়ে। মেয়ের নাম রেখেছো কি?- প্রশ্নটা ছুঁড়ে দেয় অবন্তীর দিকে। অবন্তী মেয়েটার নাম বলে,'যাহিন। যাহিন তালুকদার। বড় ভাইয়ের একমাত্র মেয়ে।' অবন্তীর মুখে উত্তরটা শুনে মনে হলো রাতিনের বুকের উপর থেকে আস্তো একটা হিমালয় আলগোছে সরে গেছে। ঝড়ো বৃষ্টির শেষে প্রকৃতিতে যেমন স্নিগ্ধ ও মিষ্টি একটা প্রশান্তি থাকে, তেমনই রাতিনের মুখের উপর একটা প্রচ্ছন্ন আলোক ছটা গোপনে উপভোগ করছে অবন্তী। এবার একটু এগিয়ে গিয়ে অবন্তী রাতিনের হাত চেপে বললো,' চলো। আমাদের বাড়িতে। সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। তোমার বাবাও বসে আছেন। বড় ভাই বিকেলে শহরে যাবেন কেনাকাটা করতে।শ ত হলেও তালুকদার বাড়ির একমাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা।' রাতিন ভ্রু কুঁচকে অবন্তীকে বললো, বিয়ে!' অবন্তী বিষয়টা খোলাসা করে বললো, হ্যাঁ। হাঁদারাম, তোমার আমার বিয়ে। মাসখানেক আগে তিনুর কাছে তোমার সব কথা শুনেছি। তাই তো সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ি দিয়ে তোমাকে পেতে চলে এসেছি। কি এবারও ফিরিয়ে দিবে আমায়?' রাতিনের চোখে পানি টলমল করছে।
দু'জন পাশাপাশি হাঁটছে। নির্দিষ্ট কোনো দূরত্বও নেই আজ। যাহিন একাই বাড়ির দিকে দৌঁড়ে যাচ্ছে। সেই চিরচেনা রাস্তা। তালুকদার বাড়ির দক্ষিণ দিকের চালতা গাছের নিচে এসে দু'জনই আচমকা থমকে যায়। পাতার ফাঁকে ফাঁকে চালতা ফুল ফুটে আছে। এতো সুন্দর হয় চালতা ফুল! মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়। মৌনতায় উবে যায় ষোলো বছরের গোপন দীর্ঘশ্বাস। রাতিন হঠাৎ ম্যানিব্যাগের চোরাপকেট থেকে একটা চিঠি বের করে অবন্তীকে এগিয়ে দিয়ে বলে, 'নাও তোমার ষোলো বছরের আমানত। আর বইতে পারছি না। কৌতূহলে চিঠিটা হাতে নিয়েই খুলে অবন্তী। গোলাপের কতগুলো শুকনো পাঁপড়ি। আর চিঠিতে লেখা-
অবনী,
প্রতিদিনই আমি তোমার স্পর্শ পাই। যতোবার এই চালতা গাছের নিচে এসে দাঁড়াই, মনে হয় চালতা গাছটা ততোবারই তোমার হয়ে আমার বাম গালে চড় বসিয়ে দেয়। পাতাগুলো ধমকের স্বরে বলে, 'তুই এতো বোকা কেন রে! যা, তুই যে অবন্তীকে খুব ভালোবাসিস, সে কথাটা তাকে নির্দ্বিধায় বলে দে।'
অবনী, তোমাকে আমি খুব ভালোবাসি। গতকালের চেয়ে ঢের বেশি। কিন্তু আগামীকালের চেয়ে অনেক অনেক কম।
ইতি
তোমার আলাভোলা।
অবনী চিঠিটা পড়ে শিশুর মতো কাঁদছে। রাতিনের বুক চাপড়ে কাঁদছে সে। রাতিন অবন্তীর চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে মনে মনে বলছে- মন ভরে কাঁদো। আজকের পর তো আর কাঁদতে দিলে তো কাঁদবে! এদিকে তালুকদার বাড়িতে মনে হচ্ছে উৎসব শুরু হয়ে গেছে। বাড়ি ভর্তি মানুষজন। ভেতরে গমগম আওয়াজ হচ্ছে। আহা! রাতিনের কানে কেউ যেন সানাইয়ের সুর বাজিয়ে যাচ্ছে অনবরত।
=========================
রফিকুল নাজিম
সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার।
মাধবপুর, হবিগঞ্জ।