গল্প ।। নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ।। চন্দন চক্রবর্তী
নিঃস্বার্থ ভালোবাসা
চন্দন চক্রবর্তী
শহর জীবনে আজকাল যেন হাঁপিয়ে উঠছি ! বিশ্বাস নেই,ভালোবাসা নেই,মনের কথা শোনার মানুষ নেই । রক্তের সম্পর্কগুলো ভিতরে ভিতরে সম্পর্কহীন । মন খারাপ হলে নিজের মধ্যে রেখে লালন ছাড়া গতি নেই । সে ক্ষেত্রে প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটালে মনের কষ্ট লাঘব আমার হয় ।
মনকে ভালো রাখতে আমার ঠিকানা গঙ্গার পাড় । শহর থেকে মাত্র চার কিমি গেলেই গঙ্গাকে পেয়ে যাই । নিরিবিলি কোন জায়গা দেখে পাড়ে বসি । দিগন্ত জুড়ে জলরাশি অবিশ্রাম ধেয়ে চলেছে সাগরের পানে,যেন বলে যায় কর্তব্যে অবিচল থাকতে । জলীয় শীতল বাতাসের স্পর্শ বুকে ভালোবাসা জাগায়,বাঁচার ইচ্ছা জাগে ।
ওই যে মাঝ গঙ্গা দিয়ে দলবদ্ধ কচুরিপানা ভেসে যাচ্ছে,ওরা যেন মানুষে মানুষে সম্পর্কের বন্ধনকে দৃঢ় হতে বলে গেল । দলছুট একটা দুটো যদি স্রোতের টানে এলোমেলো হয়ে যায়,পাড়ে এসে দাঁড়িয়ে পড়ে । জোয়ার এলে অস্থির হয়ে আবার ভাটার টানে ছুটতে থাকে অভীষ্ট লক্ষ্যে ।
আজকে সবে এসে বসেছি । হঠাৎ মনে হল পিছনে কেউ দাঁড়িয়ে ! ঘাড় ঘুরিয়ে অবাক হলাম । মিষ্টি একটা বাদামী বাছুর,বয়স আন্দাজ দুমাস, আমার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ! যেন বলতে চায়,তোমার কি মন খারাপ ? এসো আমাকে আদর কর,এক নিমেষে মন ভালো হয়ে যাবে ।
হাত বাড়িয়ে ওর গলায়,মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম । ওর যেন আমাকে পেয়ে ভীষণ আনন্দ । একটু দূরে ওর মা দড়ির খুঁটে বাঁধা। একবার দুবার তাকিয়ে নিশ্চিন্তে ঘাস খেয়ে যাচ্ছে । কত সহজ সরল ওরা,নিমেষে বুঝে গেছে আমার দ্বারা ওর শিশুর অনিষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা নেই !
ঘাস ছিড়ে ওর মুখে কয়েক বার ধরলাম । টেনে নিল । এবার ফিরে আসার পালা । কি করে বুঝল কে জানে ! মাথা নেড়ে,কান বাজিয়ে,না করে যাচ্ছে । হাঁটা শুরু করেছি,পেছন পেছন আসছে । এতটা ভালোবাসা এত অল্প সময়ে ! পিছিয়ে গিয়ে দুহাতে ওর গলা জড়িয়ে ধরলাম ।
আশ্চর্য,বুকে যত কান্নার মেঘ ছিল,সরে গেল ! দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে গেছে ! মুছে নিলাম । এখন খুব ভালো লাগছে । ভাবছি এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা মানুষে মানুষে হয় না কেন ! হলে পৃথিবীটা পাল্টে যেত ।
বুক ভরে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা আর বিনে পয়সায় নিখাদ শান্তি কিনে ফিরে এলাম ।
===================