ধরায় মায়ের আগমন ও সাজ সাজ রব
সোমা মুৎসুদ্দী
মা দেবী দূর্গা ত্রিনয়নী দশভুজা ধরায় আসবেন নীল আকাশে সাদা মেঘেরা তাই খুশিতে ভাসছে।মা আসবেন তার সন্তানদের নিয়ে, মৃদুমন্দ বাতাসে কাশফুল দুলে দুলে মাকে সাদরে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে।বরণ ডালা নিয়ে শিউলি ফুলও গন্ধ ছড়িয়ে মায়ের আগমনের অপেক্ষায়। শিশির ভেজা দূর্বাঘাস ও পদ্মফুলও মায়ের চরণ স্পর্শ করার জন্য আকুল হয়ে আছে।ভারত,নেপাল ও বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে আজ সাজ সাজ রব।সবাই ব্যস্ত কেনাকাটা ও পূজার উপকরণ নিয়ে, সেই সাথে ঠাকুরপাড়াও সরগরম বিশেষ করে পুরোহিত ঠাকুররা দেবী মায়ের পূজার উপকরণ কেনাকাটায়। দূর্গাপূজা বসন্তে চালু হলেও শরতেই সবখানে পূজিত হন দেবী।সবাই মন খুলে অপেক্ষায় আছেন কখন আসবেন দেবী মা দূর্গা।এবং তার সন্তানেরা। মা আসবেন মানুষের মনের পশুকে দমন করতে ও অসুরবৃত্তি দমন করতে সেই সাথে ধরনীকে ধন ধান্যে পুস্পে সম্পদে ও শান্তিতে ভারিয়ে দিতে।
দেবী পক্ষ বা পিতৃপক্ষ হলো বছরের ১২ মাসে ২৪ টি পক্ষ রয়েছে তারমধ্যে দু'টি পক্ষ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। প্রথমটি পিতৃপক্ষ ও অপরটি দেবীপক্ষ।আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের তিথিকে বলা হয় মহালয়া।এই কৃষ্ণপক্ষকে বলা হয় অপর পক্ষ বা মহালয়া কিংবা পিতৃপক্ষ। পিতৃপক্ষের স্বর্গত পিতৃপুরুষের জন্য পার্বন শ্রাদ্ধ তর্পন করা হয়। পিতৃপুরুষেরা এই সময় যমালয় থেকে মর্ত্যলোকে আসেন।তাঁদেরকে তৃপ্ত করার জন্য তিল, জল দান করা হয়। তাদের যাত্রা পথকে আলোকিত করার জন্য উল্কা দান করা হয়। পুরান মহাভারতে বলা আছে যে মহাবীর কর্ণের আত্না স্বর্গে গেলে সেখানে তাকে খেতে দেওয়া হলো শুধু সোনাদানা ও ধনরত্ন।'ব্যাপার কী' কর্ণ জানতে চাইলেন ইন্দ্রের কাছে, ইন্দ্র উওরে বললেন তুমি সারাজীবন সোনাদানাই দান করেছো পিতৃপুরুষকে জল দাওনি তাই তোমার জন্য ধনরত্ন।কর্ণ বললেন আমার কী দোষ?আমার পিতৃপুরুষের কথা আমি জানতে পারলাম যুদ্ধ জয়ের আগের রাতে।মা কুন্তী আমাকে এসে বললেন আমি নাকি তার ছেলে, যুদ্ধে ভাইয়েরও মৃত্যু হলো,পিতৃত্বর্পনের সুযোগই পেলাম না।ইন্দ্র বুঝলেন কর্ণের দোষ নেই তাই তিনি কর্ণকে মর্ত্যে গিয়ে পিতৃপুরুষকে জল ও অন্ন দিতে অনুমতি দিলেন।এই অমাবশ্যায় পিতৃপূজা সেরে পরের পক্ষে দেবী পূজায় প্রবৃত্ত হতে হয়। তাই দেবী পূজার পক্ষকে বলা হয় দেবীপক্ষ বা মাতৃপক্ষ।
মহালয়া হলো পিতৃপক্ষের শেষ দিন ও দেবীপক্ষের শুরুর দিন।পিতৃপক্ষে আত্নসংযম করে দেবীপক্ষে শক্তি সাধনায় প্রবেশ করতে হয়। দেবী শক্তির আদিশক্তি,তিনি মঙ্গলদায়িনী,করুণাময়ী সাধক সাধনা করে দেবীর বর লাভের জন্য। দেবীর মহানালয়ে প্রবেশ করার সুযোগ পান বলেই এই দিনটিকে বলা হয় মহালয়া। মহালয়ার পর প্রতিপদ তিথি থেকে দেবী বন্দনা শুরু হয় কোনও কোনও অঞ্চলে দেবীর আরাধনা প্রতিপদ থেকেই শুরু হয়।আমাদের এখানে ষষ্ঠী থেকে দেবী বন্দনা শুরু হয় দুই মতেই দেবী পূজার রীতি প্রচলিত আছে।মা আমাদের মাঝে আসেন আমাদের মনের পশুকে দমন করে আমাদের সুখ ও শান্তি বর্ষণ করার জন্য আবার যখন চলে যান তখন সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে যান। তবুও প্রতিবছর অপেক্ষায় থাকি মা আবার আসবেন হৃদয়ে বাজবে সেই সুর বাজলো তোমার আলোর বেণু।
========================
সোমা মুৎসুদ্দী
লেখক ও আবৃত্তিকার
নন্দনকানন, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ