জেলা হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে যন্ত্রনায় ছটফট করছে ছোট্ট বিতান।তার পিঠের বেশ কিছুটা অংশ ঝলসে গেছে।নাইলনের জামায় আগুন ধরে যাওয়ার ফল।গাঁয়ের বারোয়ারী পুজো তলায় গতকাল ঘটে গেছে অঘটন।উপস্থিত জনতা জামাটা সামনের দিক থেকে ফেড়ে দ্রুত গা থেকে খুলে ফেলে দেয়।না হলে আরও বড় বিপদ ঘটতে পারত।বিতান দাস।পাশের গাঁয়ের সীমানায় এ অঞ্চলের একমাত্র মাধ্যমিক স্কুলে সপ্তম শ্রেনীতে পড়ে সে।তার বাবা রাসু দাস অদূরের গঞ্জে একটা চায়ের দোকান চালায়।সামান্য আয়।তা দিয়েই এক ছেলে এক মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে তার ছোট্ট সংসার চলে।মেয়ে ছোট।গাঁয়ের প্রাথমিক স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেনীতে পড়ে।গতকাল ছিল সপ্তমী।বিতান তার বন্ধু অনিমিখ ওরফে অনির সঙ্গে ঠাকুরতলায় গেছিল সন্ধ্যায় আরতি দেখবে বলে।অনিমিখ গাঁয়ের সম্পন্ন কৃষক অনিরুদ্ধ চৌধুরীর একমাত্র ছেলে।অনির ও ছোট একটা বোন আছে।তার ডাক নাম তিতলি।তার সঙ্গেও বিতানের বেশ ভাব।দাদার চেয়েও বেশি আব্দার তার বিতানের কাছে।বিতানও খুব ভালোবাসে তিতলিকে।যেমন ভালোবাসে তার বোন রূপালী ওরফে রূপাকে।অনির সঙ্গে বিতানের বন্ধুত্ব গাঁয়ের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই।দুই পরিবার মেনে নিয়েছিল তাদের বন্ধুত্ব।অনির মা বিতানকে বেশ ভালোবাসে।প্রশ্রয় দেয়।বিতান যে পড়াশুনোয় খুব ভালো।অনিও মোটামুটি পড়াশুনোটা চালিয়ে যায়।প্রথম দশে না থাকলেও প্রতি বছর পাশ করে যায় বেশ ভালোভাবেই।বিতান প্রাথমিক স্কুল থেকেই বরাবর ক্লাসে প্রথম হয়।তাই হয়তো তার প্রতি অনির মায়ের একটু বেশিই দুর্বলতা।অনির চেয়ে একটু বেশিই প্রশ্রয় দেয় বিতানকে।এ নিয়ে অনির মনে এক রাগ মিশ্রিত দুঃখ ছিলই।বাড়িতে ভালো কিছু রান্না হলেই মা তাকে বলত বিতানকে ডেকে আনতে।দুজনকে এক সঙ্গে খেতে দিত।কেন যেন অনির মনে হত তার মা তার তুলনায় বিতানের প্রতি একটু বেশি দুর্বল।
বিতানের বাবা যন্ত্রনাবিদ্ধ মনে বিতানের বেডের পাশে দাঁড়িয়ে।কি ভাবে যে এমন হল কিছুতেই বুঝতে পারছেন না তিনি।ভরা পুজোয় ছেলেটা হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছে!ছেলের পড়াশুনোর জন্যেই তাকে পরিচিতরা বেশ সমীহ করে চলে।রাসু বাবু ছেলে অন্ত প্রাণ।বিতানের মা ও ছেলেকে খুবই ভালোবাসে।তার যত্ন নেয়।ছেলের স্কুলের বই খাতা সব সময় চেষ্টা করেও যোগাড় করতে পারেন না রাসু বাবু।অনির বাবা মানুষটা বেশ বড় মনের।গোপনে সাহায্য করেন রাসু বাবুকে।বিতানের পড়াশুনোয় যাতে কোনো অসুবিধা না হয়।প্রথম দিকে অনিরুদ্ধ বাবুর দান নিতে কেমন একটা জড়তা আসত রাসু বাবুর।অনিরুদ্ধ বাবুর আন্তরিকতায় এখন আর সে জড়তা নেই।অনিরুদ্ধ বাবুর কথা---বিতান আমাদের পাড়ার ছেলে।আমাদের পাড়ার গর্ব।হাইস্কুলের সব শিক্ষক বিতানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।ওর মতো ছেলে নাকি হয় না।কি পড়াশুনোয় বা ব্যবহারে।ওকে গড়ে তুলতে আমার সাহায্যের হাত সব সময় বাড়ানো।জড়তার কোনো প্রয়োজন নেই।আমার নিজের ছেলে এমন হলে তো------! তাকে তো কম দিইনা আমি।তার দিকেও তো আমার নজর সব সময়।আসলে লেখাপড়া কিছুটা করলেও শত চেষ্টাতেও এমন হতে তো পারিনি!আমার বাবার চেষ্টার কোনো ত্রুটি তো ছিল না।আমারও তাগিদ ছিল।কিন্তু পারিনি।বিতান পেরেছে।আমি চাই ও অনেক দূর যাক।অনি বাবার এই চালচলন পুরোটাই জানত।এ নিয়েও তার মধ্যে একটা ক্ষোভ ছিল বাবার উপর।কিন্তু কিছুই বুঝতে দিত না কাউকে সে।মনের যন্ত্রনা একাই বহন করত।সবাই ভাবত অনি কিছুই বুঝতে পারে না।এসব বোঝার বয়স তার হয়নি।অনি এটাও বুঝত।করুন বাঁকা হাসি জাগত তার ঠোঁটে।সবকিছুর জন্যেই সে দায় চাপাত বিতানের ঘাড়ে।তার জন্যেই তো------!সে কি ভালো ফল করতে একটু সাহায্য করতে পারে না তাকে?কেবল সুযোগ নেয় অন্যায় ভাবে!শোধ তুলবে সে বিতানের এই চালচলনের।সুযোগ আসবেই কোনো এক দিন।এ সব ভাবলেও কাউকে কিছুই বুঝতে দিত না অনি।
সপ্তমীর বারোয়ারী পুজোতলা।অশপাশের গাঁয়ের বেশ কিছু লোক জড়ো হয়েছে সেখানে।আছে অনি ও বিতান।দুজনে বেশ কিছুক্ষন দুর্গার আরতি দেখল তন্ময় হয়ে।ধূপ ধুনোর গন্ধে চারদিক উজিয়ে যাচ্ছে।পঞ্চপ্রদীপের সলতে গুলো লকলক করে উঠছে পুরুতের হাতের নড়াচড়ায়।প্রতিমার মুখ থেকে যেন আলো ঠিকরে পড়ছে চারপাশে।এ সব দেখে কেন যেন বিতানের মনে ভেসে উঠছিল তার মায়ের মুখ।প্রতি বছর ক্লাসের বার্ষিক পরীক্ষার ফল বেরুনোর পর সে আনন্দে লাফাতে লাফাতে বাড়ি ফেরে।চিৎকার করে ডাকে মাকে।তার মা পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত পড়েছিল।পড়াশুনোয় বেশ ভালোই ছিল শুনেছে বিতান।কিন্তু প্রান্তিক চাষি দাদু মার পড়াশুনো চালিয়ে যেতে দিতে পারেন নি।অভাবের সংসার।মামাকে পড়ানোর তাগিদ ছিল তাঁর মধ্যে।মামা মার চেয়ে প্রায় চার বছরের বড়।মামার পড়াশুনোর খরচ যোগাতে মায়ের পড়াশুনো বন্ধ করে দেন।এতে যে দাদু বেশ কষ্ট পেয়েছিলেন তা বেশ বোঝা যায়।বারংবার এ নিয়ে তাঁর দুঃখ প্রকাশ শুনেছে বিতান।অসহায়ের মতো দীর্ঘশ্বাসও ফেলতে দেখেছে দাদুকে।মামা কিছুটা লেখাপড়া করলেও শেষ ধাপ পর্যন্ত পৌঁছুতে পারেন নি।এখন দাদুর সামান্য জমি চাষবাস আর ছোটোখাটো ব্যবসা করেন তিনি।মামাকে বেশ কয়েকবার বলতে শুনেছে বিতান---তোর ছেলে তোর মতোই বুদ্ধিমান হয়েছে রে আরতি।লেখাপড়া শিখতে না পারার দুঃখ মার মনে আজও জমে আছে।বেশ বুঝতে পারে বিতান।হয়তো তাই মা কান খাড়া করে থাকত বার্ষিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন তার চিৎকার শোনার জন্যে।চিৎকারের সঙ্গে সঙ্গেই মা দৌড়ে বাইরে এসে বলবে---ওখানেই দাঁড়া একটু বিতান।দৌড়ে ঘরে ঢুকে একটা জ্বলন্ত প্রদীপ নিয়ে তার সামনে হাজির হবে।দপদপানো প্রদীপটা বারকয়েক তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঘুরিয়ে নিজের কপালে ঠেকাবে।তার পর দু'মিনিট চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে কিছু বলবে।তবেই তাকে ঘরে ঢুকতে দেবে।বিতান বেশ বোঝে নিজের দুর্ভাগ্যকে স্মরণ করে ছেলের সৌভাগ্য প্রার্থনা করে মা।কপালে প্রদীপ ঠেকানোর সময় প্রদীপ শিখা মায়ের মুখ উজ্জ্বল করে তোলে।তখন মাকে দেবী প্রতিমার মতোই মনে হয় বিতানের।সে ঠিক করেই নিয়েছে বড় হয়ে কিছু একটা করতে পারলে মাকে পড়ার সুযোগ করে দেবে সে।সে নিজে এতে সাহায্য করবে মাকে।
আরতি শেষ হয়ে এল।মাইকে ঘোষনা হল ধুনুচি নাচের।অনি বিতানকে বলল--কি রে বিতান, বাড়ি ফেরার তাড়া আছে নাকি?
---না,তেমন নয়।
---তা হলে ধুনুচি নাচটা দেখেই ফিরব।এই তো একটুখানি রাস্তা------!
---ঠিক আছে।পুজোর ক'দিন আর বই খুলব না।কতক্ষণ আর চলবে?এক দেড় ঘন্টা হয়তো।আটটার মধ্যেই বাড়ি চলে যাব।
পুজোতলার সামনে উন্মুক্ত পরিসর মাঠ।সেখানে সমবেত লোকজন বৃত্তাকারে দাঁড়িয়ে।এক পাশে অনি ও বিতান পাশাপাশি।বৃত্তের মাঝে জনাসাতেক লোক।গাঁয়েরই সবাই।সবার দুহাতে দুটো করে বড় ধুনুচি।মাথায় গামছার পাকানো গোলা করা আলটায় একটা করে মাটির মালসা।সবগুলোতে নারকেল ঝোবড়ার জ্বলন্ত আগুন।দু'জন তাতে গুঁড়ো করা ধুনো অদ্ভুত কৌশলে উর্ধ্বমুখো ছড়িয়ে দিচ্ছে।তুবড়ির আগুনের ফোয়ারার মতোই দাউদাউ জ্বলে উঠছে আগুন।আগুন নিয়ে এ এক বিপজ্জনক মজার খেলা।ধুনুচি বহনকারী লোকগুলো আগুনের হলকার তালে সুন্দর নাচের ভঙ্গিতে পা নাড়াচ্ছে।শরীর বাঁকাচ্ছে।স্থান পরিবর্তন করছে।দেখতে বেশ ভালোই লাগছে বিতানের।জীবনে এই প্রথম সে ধুনুচি নাচ দেখছে।দেখছে তন্ময় হয়ে।অনি যে কখন পাশ থেকে সরে তার পিছনে গেছে বুঝতে পারেনি বিতান।অনির বুকের মাঝে তখন তোলপাড়।ঝড়ের বেগ তৈরি হয়েছে সে তোলপাড়ে।ঘন ঘন শ্বাসপ্রশ্বাস পড়ছে তার।সে দিকে খেয়াল করার মতো অবস্থায় নেই বিতান।তার দু'চোখ তখন আগুনের ছড়িয়ে পড়া হলকার উজ্জ্বলতায় আবদ্ধ।ঘুরতে ঘুরতে এক জন ধুনুচিওয়ালা একেবারে বিতানের গায়ের কাছে এসে পড়ে।এক মুঠো গুঁড়ো ধুনো তার ডান হাতের ধুনুচিতে উর্ধ্বমুখী ছড়িয়ে দেওয়া হয়।আগুনের হলকার আভা বিতানের চোখে মুখে।ঠিক তখনই পিছন থেকে একটা জোরালো ধাক্কা পায় বিতান।সামলাতে না পেরে সে হুমড়ি খেয়ে পড়ে সামনের ধুনুচি হাতে লোকটির উপর।লোকটি সামনে টাল খায় ভালো মতোই।তার হাত থেকে ধুনুচিটা পড়ে যায় মুখ থুবড়ে পড়া বিতানের পিঠে।পুজোয় কিনে দেওয়া নতুন নাইলনের জামাটার পিঠের দিকে আগুন ধরে যায়।দাউদাউ জ্বলে ওঠা আগুনে কুঁকড়ে গলে যেতে থাকে পিঠের দিকের নাইলন কাপড়।যন্ত্রনায় ছটফট করতে থাকে বিতান।অনি নিজের জায়গায় অনড়।সমবেত জনতার কয়েকজন দৌড়ে বিতানের কাছে যায়।তাকে দ্রুত খাড়া করে।সামনের দিক থেকে জামাটা ফেড়ে খুলে ফেলে তার গা থেকে।ততক্ষণে বিতানের পিঠের কিছুটা অংশ বেশ দগদগে হয়েই পুড়ে গেছে।অনি দৌড় দেয় বিতানদের বাড়ির উদ্দেশে।
হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রনায় গোঁয়াচ্ছে বিতান।তার শয্যাপাশে বড় করুন মুখে দাঁড়িয়ে রাসু বাবু।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছেলের কুঁকড়ে যাওয়া শরীরের দিকে।একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে রাসু বাবুর বুক চিরে।ছেলেটার কষ্ট তাঁর শ্রমক্লীষ্ট বুক গুঁড়িয়ে দিচ্ছে যেন।হঠাৎ-ই ডান কাঁধে একটা সবল হাতের স্পর্শ।মুখ ঘুরিয়ে দেখেন অনিরুদ্ধ বাবু দাঁড়িয়ে তাঁর পিছনে।কখন যে তিনি এসে তাঁর পিছনে দাঁড়িয়েছেন বুঝতে পারেননি রাসু বাবু।অনিরুদ্ধ বাবুর দিকে ঘুরে দাঁড়ান তিনি।তাঁর চোখে টলটল করতে থাকা জলের ফোঁটা গড়িয়ে নামে চোয়াল বেয়ে।গভীর জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকান তিনি অনিরুদ্ধ বাবুর দিকে।সে দৃষ্টির সামনে কেঁপে যায় অনিরুদ্ধ বাবুর বুক।রাসু বাবুর হাত দুটো ধরে তিনি কাঁপা গলায় বলেন---ক্ষমা করে দিন রাসু বাবু।যা ঘটেছে তার জন্যে দায়ী আমারই সন্তান অনি।আমি বেশ বুঝতে পারছি।অনুশোচনার প্রবল আগুনে পুড়েছি আমি কাল সারা রাত।অনিও ঘুমোতে পারেনি সারা রাত।তার মধ্যেও হয়তো অনুশোচনার তিব্র দহন।কেন---কিভাবে সে যে এমন কাজ করল আমি বুঝে উঠতে পারছি না।
নীরব শূন্য দৃষ্টির রাসু বাবুর মুখের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকান অনিরুদ্ধ বাবু।বলেন---একটা সুযোগ আমাকে দিন।বিতানের চিকিৎসার সব দায়ভার আমার।ওকে এখান থেকে ভালো হাসপাতালে নিয়ে যাব আমি।তৈরি হয়েই এসেছি।কেবল আপনার অনুমতির অপেক্ষা।বিতানকে যত দ্রুত সম্ভব সুস্থ করে তুলতে হবে।অনির মা গেছেন আপনার বাড়ি তিতলিকে নিয়ে।ও দিকটা ভাবার প্রয়োজন নেই।অনিও এসেছে।বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।এখানে আসার সাহস নেই তার।আপনার সম্মতি পেলে আমি বিতানকে এখান থেকে ভালো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেব।চুপ করে থাকবেন না।সময় চলে যাচ্ছে।একটা কথা আপনাকে আজ স্পষ্ট করেই বলি রাসু বাবু---বিতান আমারও এক সন্তান।অনির মতোই।আমরা সত্যিই ওকে খুব ভালোবাসি রাসু বাবু।ওর মতো ছেলে-----।
অনিরুদ্ধ বাবুকে থামিয়ে রাসু বাবু বলেন---যা ভালো বোঝেন----।বিতান আমার জীবন।আমার বেঁচে থাকার আনন্দ।ওর যদি কিছু------!
---কোনো খারাপ ভাবনা মাথায় আনবেন না।চলুন বিতানকে একটা ভালো চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না।
অনিরুদ্ধ বাবু বেরিয়ে আসেন বিতানের শয্যাপার্শ্ব থেকে।রাসু বাবু অতি ধীর গতিতে এগিয়ে যান দরজা মুখো।বাইরে বেরিয়ে দেখেন দরজার এক পাশে অনি জড়োসড়ো দাঁড়িয়ে। মূর্তির মতোই।এক ঝলক তার দিকে তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে এগিয়ে যান রাসু বাবু অনিরুদ্ধ বাবুকে উদ্দেশ্য করে।
ঘরে প্রবেশ করে অনি।অতি ধীর পায়ে এগিয়ে যায় বিতানের শয্যার দিকে।উপুড় হয়ে যন্ত্রনায় কাতরাতে থাকা বিতানের এটা জানার বোঝার কথা নয়।দু'চোখ তার বন্ধ।যন্ত্রনায় গোঁয়ানি বেরিয়ে আসছে মুখ থেকে।তার পিঠের একটা অংশ জুড়ে ব্যাণ্ডেজ।সে দিকে তাকিয়ে এক দণ্ড থমকে যায় অনি।নিঃশব্দে বিতানের মাথার দিকে এগিয়ে যায় সে।ডান হাতটা বাড়ায় বিতানের মাথা লক্ষ্য করে।থেমে যায় পর মুহূর্তে।কয়েক দণ্ড স্থির মূর্তির মতোই অনি।তার গাল বেয়ে এক ফোঁটা জল গিয়ে পড়ে বিতানের গালে।চমকে যায় বিতান।যন্ত্রনা কাতর চোখ খুলে দেখতে পায় অনিকে।নীরব বিরক্তিতে হয়তো বন্ধ হয়ে যায় তার চোখ পর মুহূর্তে।বিতানের মাথার পাশে বসে পড়ে অনি।তার ডান হাতটা বিতানের মাথা স্পর্শ করে।আবারও চমকে যায় বিতান।অনুশোচনা বিদ্ধ স্বরে অনি বলে----আমাকে ক্ষমা করে দে বিতান।তোর এই অবস্থার জন্যে আমিই দায়ী।হ্যাঁ---আ---মি---ই----!যন্ত্রনায় ভেতরটা পুড়ে যাচ্ছে আমার ভাই।তুই মাফ না করলে-----!
অনেক কষ্টে বিতান বলে---ধাক্কাটা যে তুই দিয়েছিস তা আমি জানি।কিন্তু কেন এমন করলি বুঝতে পারছি না!হয়তো আমার কোনো ভুলের জন্যে তোর রাগ হয়েছে আমার উপর-----।
---না বিতান।তা নয়।তোর কোনো দোষ বা ভুল নয়।ও সব পরে বলব তোকে।এখন তুই বল আমাকে মাফ করে দিচ্ছিস।জীবনে আর কোনো দিন এমন-----।
---বেশ।তা হলে সারা জীবন বন্ধু হয়েই থাকিস আমার পাশে।আমরা বড় গরীব রে অনি।ভালোবাসাটাই আমাদের বাঁচার অবলম্বন।
অনির মাথা ঝুঁকে পড়ে বিতানের মাথার কাছে।আবারও এক ফোঁটা জল অনির গাল বেয়ে ঝরে পড়ে বিতানের গালে।অনির ডান হাতটা বিতানের মাথার চুলে বিলি কাটতে থাকে।তার গলা চিরে বেরিয়ে আসে একটা শব্দ---ব--ন্---ধু---উ---উ---!
বিতান অনুভব করে তার যন্ত্রনা কমে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।
====================
নিরঞ্জন মণ্ডল/উত্তর 24 পরগণা।