Click the image to explore all Offers

গল্প ।। পার্থেনিয়ামের ঝোপের বাগান ।। কবিরুল (রঞ্জিত মল্লিক )



 
পার্থেনিয়ামের ঝোপের বাগান
কবিরুল (রঞ্জিত মল্লিক )
 

         "বলছেন কি? এখন অফিসে কত কাজ চলছে জানেন?"
          "স্যার, ছুটিটা ভীষণ দরকার।"
           "আই আণ্ডারস্ট্যাণ্ড ইওর প্রবলেম। বাট অডিট হ্যাস বিন স্টারটেড, সো আই ক্যান নট....."
            "স্যার, অডিটের কাজ তো ফ্রাইডে থেকে শুরু হচ্ছে। আপনি একটা দিন যদি এলাও করেন....."
            "মিস্টার সান্যাল, ডিউটি ইস ডিউটি। অডিটের অনেক ফাইল রেডি নেই।  তাছাড়া ছুটি তো অন্য সময় আপনি নিতে পারেন, তাই না?"
      "স্যার, ছুটিটা ভীষণ আর্জেন্ট ছিল।"
     "ওকে, আমি দেখছি। কি করা যায়।"
     "একটু দেখবেন।"

                 স্যারের চেম্বার থেকে বেরিয়েই তম ফাইলে মুখ গুঁজে বসল। জানালা দিয়ে ট্রেনের লাইনটা দেখা যাচ্ছে। লাইনের আঁকা বাঁকা জ্যামিতি অন্য এক লাইনের সাথে সংযোগ স্থাপন করছে। ফিরিয়ে আনছে পুরানো স্মৃতির টুকরো ঘটনা।

       পার্থেনিয়ামের জঙ্গল, জঙ্গলের আড়ালে ছোট্ট বাগান, পাগলীটার দরমার ঘর, আর ছোট ছোট  জীবগুলো.......।

           "স্যার, বাচ্ছাগুলো আবার এসেছে। আপনাকে না পেয়ে...."
          "তাই......"
           "আপনি একবার আসুন।"
          "ঠিক আছে, আসছি।"

            বাচ্ছাগুলোই তমর প্রাণ। বেঁচে থাকার একমাত্র অক্সিজেন। ওদের সাথে কিছুটা সময় কাটাতে পারলে বেশ ভাল লাগে। ওর দয়াতে কিছুটা খাবার তো পায় ওরা। এখানে আসার পর থেকে  ওদের ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। কেমন একটা অনুরাগের ছোঁয়া ধরা পড়ে ওদের চোখের তারায়। ওরাও উজাড় করে দিতে শিখে গেছে।

                        ............   ........  ...........

            আজ তমর অডিট শুরু হয়েছে। সকাল থেকে  বাচ্ছাগুলোকে দেখতে পায়নি। মনটা ভীষণ খারাপ। এদিকে অডিটরদের পেপার সাবমিট করতে হচ্ছে। একবারও চেয়ার ছেড়ে উঠতেও পারছে না।

             দুপুরের পরেই পিপুদের বাড়ি থেকে ফোনটা আসল। পিপুর জ্বর হয়েছে। কিছুতেই জ্বর থামছে না। ঘুমের ঘোরে আবোল তাবোল বকছে। শুনেই তমর হার্টবিট অনেকটাই বেড়ে গেল। 

             লাঞ্চব্রেকে তমর চোখ জানালা গলে রেললাইন ধরে  চলে গেল দূর অতীতে। তখন সবে পিপুদের পাড়াতে ভাড়া এসেছে। 

                         ********  ***********

           "কাকু, পাগলীটাকে তুমি ভয় পাও না?"
          "কেন? ভয় কিসের?"
          "না, কাকাই বলছিল......."
           "কি বলছিল........?"

           একদিন স্কুল থেকে পিপুকে আনতেই জোর বৃষ্টি নামলে পাগলীটা ছাতা নিয়ে এগিয়ে আসে। আর পিপুর গাল টিপে আদর করে। সেই থেকে পিপুর সাথে পাগলীটার ভীষণ ভাব জমে ওঠে। রোজ স্কুলের পথে একবার পাগলীটাকে না দেখলে রাতে ঘুম আসেনা। মাঝে মাঝে পাগলীটা স্বপ্নেও দেখা দেয়। অনুরাগের ছোঁয়া। বেঁচে থাকার জীয়ন কাঠি। 

              পাগলীটাও ভীষণ বাচ্চা ভালবাসে। পুচকেগুলোকে আদর করে খাওয়ায়। ওরাও ঠিক পিপুর মতন। 
                       ...........   ..........  ...........

                প্ল্যাটফর্ম প্রসারিত হলে দরমার ঘরটাও ভাঙ্গা পড়বে। আর পার্থেনিয়াম ঝোপের কোলে ফুলের বাগানটা....?  পুচকেগুলোর সাথে পিপুও ওখানে খেলত। ভাবতেই গাটা শিউরে উঠল তমর। 

                 ন মাস পরে......

             পুচকেগুলো এখন পিপলির অনুরাগের ছোঁয়াতে অনেকটাই বড় হয়ে গেছে। পার্থেনিয়াম ঝোপের বাগানটা ওদের ছাদে উঠে এসেছে। 

            অডিটররা দরাজ হস্তে ভাল সার্টিফিকেট দিয়ে গেছে। তবু অফিস মাস্টারের মন ভারাক্রান্ত।

             এই শীতে মরসুমী  ফুলগলো ছাদে ভালই ফুটেছে। কিছুটা তমনীষের ভালবাসার ছোঁয়া। 

               অডিটের তৃতীয়দিনে কাজ অনেকটাই গুছিয়ে এসেছিল।তাই তমনীষ দুদিনের ছুটি নিয়ে পিপলিদের বাড়িতে আসে পিপলিকে দেখতে। কারণ আরও একটা ছিল। 

            অনাথ বাচ্চাগুলোকে কে দেখবে?পাগলীটা মারা গেছে হঠাৎ স্ট্রোকে। আর পিপলি? সে তো ছোট্ট।

            আজন্ম অনাথ তমনীষ জানে বাবা মা হারার যন্ত্রণা। তাইতো ওদের টানে ছুটেছে। এতদিন পাগলীটাই ওদের দেখভাল করত।

               দুপুরের পর থেকেই পিপলির জ্বর আরো  বাড়তে থাকে। তমনীষ জানে জ্বরের একমাত্র ওষুধ ভালবাসা।

          তাই অনাথ কুকুরের বাচ্চাগুলোকে কোলে করে পিপলির কাছে এনেছিল ঝোপ থেকে। ওষুধে জ্বর কমলেও ভালবাসার মাদুলি কাজ করেছিল। পিপলি যে ওদের  ভীষণ ভালবাসে। ওদের কাছে পেয়ে পিপলি জ্বর সেরে উঠে আবার চাঙ্গা হয়ে উঠল। 

          তমনীষের ওটাই ছিল শেষ ছুটি। দু একদিনের মধ্যেই ও  টানা লম্বা ছুটি নিয়ে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে একেবারে চির বিদায়.......

            পিপলি তমকাকুকে  দেখার জন্যে প্রায়ই বায়না করে। ও জানেই না ওর আদরের তমকাকু এখন ঐ অফিস থেকে চিরতরে বদলি নিয়ে অন্য অফিসে থাকতে শুরু করেছে........

             অনুরাগের ছোঁয়া আর চোখের নোনাপানিতে ফুলগুলো রোজ হাসে। পুচকেগুলোর মতন রোদে খেলা করে।



# গল্পের নাম: পার্থেনিয়ামের ঝোপের বাগান
#লেখক: কবিরুল (রঞ্জিত মল্লিক )

         "বলছেন কি? এখন অফিসে কত কাজ চলছে জানেন?"
          "স্যার, ছুটিটা ভীষণ দরকার।"
           "আই আণ্ডারস্ট্যাণ্ড ইওর প্রবলেম। বাট অডিট হ্যাস বিন স্টারটেড, সো আই ক্যান নট....."
            "স্যার, অডিটের কাজ তো ফ্রাইডে থেকে শুরু হচ্ছে। আপনি একটা দিন যদি এলাও করেন....."
            "মিস্টার সান্যাল, ডিউটি ইস ডিউটি। অডিটের অনেক ফাইল রেডি নেই।  তাছাড়া ছুটি তো অন্য সময় আপনি নিতে পারেন, তাই না?"
      "স্যার, ছুটিটা ভীষণ আর্জেন্ট ছিল।"
     "ওকে, আমি দেখছি। কি করা যায়।"
     "একটু দেখবেন।"

                 স্যারের চেম্বার থেকে বেরিয়েই তম ফাইলে মুখ গুঁজে বসল। জানালা দিয়ে ট্রেনের লাইনটা দেখা যাচ্ছে। লাইনের আঁকা বাঁকা জ্যামিতি অন্য এক লাইনের সাথে সংযোগ স্থাপন করছে। ফিরিয়ে আনছে পুরানো স্মৃতির টুকরো ঘটনা।

       পার্থেনিয়ামের জঙ্গল, জঙ্গলের আড়ালে ছোট্ট বাগান, পাগলীটার দরমার ঘর, আর ছোট ছোট  জীবগুলো.......।

           "স্যার, বাচ্ছাগুলো আবার এসেছে। আপনাকে না পেয়ে...."
          "তাই......"
           "আপনি একবার আসুন।"
          "ঠিক আছে, আসছি।"

            বাচ্ছাগুলোই তমর প্রাণ। বেঁচে থাকার একমাত্র অক্সিজেন। ওদের সাথে কিছুটা সময় কাটাতে পারলে বেশ ভাল লাগে। ওর দয়াতে কিছুটা খাবার তো পায় ওরা। এখানে আসার পর থেকে  ওদের ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। কেমন একটা অনুরাগের ছোঁয়া ধরা পড়ে ওদের চোখের তারায়। ওরাও উজাড় করে দিতে শিখে গেছে।

                        ............   ........  ...........

            আজ তমর অডিট শুরু হয়েছে। সকাল থেকে  বাচ্ছাগুলোকে দেখতে পায়নি। মনটা ভীষণ খারাপ। এদিকে অডিটরদের পেপার সাবমিট করতে হচ্ছে। একবারও চেয়ার ছেড়ে উঠতেও পারছে না।

             দুপুরের পরেই পিপুদের বাড়ি থেকে ফোনটা আসল। পিপুর জ্বর হয়েছে। কিছুতেই জ্বর থামছে না। ঘুমের ঘোরে আবোল তাবোল বকছে। শুনেই তমর হার্টবিট অনেকটাই বেড়ে গেল। 

             লাঞ্চব্রেকে তমর চোখ জানালা গলে রেললাইন ধরে  চলে গেল দূর অতীতে। তখন সবে পিপুদের পাড়াতে ভাড়া এসেছে। 

                         ********  ***********

           "কাকু, পাগলীটাকে তুমি ভয় পাও না?"
          "কেন? ভয় কিসের?"
          "না, কাকাই বলছিল......."
           "কি বলছিল........?"

           একদিন স্কুল থেকে পিপুকে আনতেই জোর বৃষ্টি নামলে পাগলীটা ছাতা নিয়ে এগিয়ে আসে। আর পিপুর গাল টিপে আদর করে। সেই থেকে পিপুর সাথে পাগলীটার ভীষণ ভাব জমে ওঠে। রোজ স্কুলের পথে একবার পাগলীটাকে না দেখলে রাতে ঘুম আসেনা। মাঝে মাঝে পাগলীটা স্বপ্নেও দেখা দেয়। অনুরাগের ছোঁয়া। বেঁচে থাকার জীয়ন কাঠি। 

              পাগলীটাও ভীষণ বাচ্চা ভালবাসে। পুচকেগুলোকে আদর করে খাওয়ায়। ওরাও ঠিক পিপুর মতন। 
                       ...........   ..........  ...........

                প্ল্যাটফর্ম প্রসারিত হলে দরমার ঘরটাও ভাঙ্গা পড়বে। আর পার্থেনিয়াম ঝোপের কোলে ফুলের বাগানটা....?  পুচকেগুলোর সাথে পিপুও ওখানে খেলত। ভাবতেই গাটা শিউরে উঠল তমর। 

                 ন মাস পরে......

             পুচকেগুলো এখন পিপলির অনুরাগের ছোঁয়াতে অনেকটাই বড় হয়ে গেছে। পার্থেনিয়াম ঝোপের বাগানটা ওদের ছাদে উঠে এসেছে। 

            অডিটররা দরাজ হস্তে ভাল সার্টিফিকেট দিয়ে গেছে। তবু অফিস মাস্টারের মন ভারাক্রান্ত।

             এই শীতে মরসুমী  ফুলগলো ছাদে ভালই ফুটেছে। কিছুটা তমনীষের ভালবাসার ছোঁয়া। 

               অডিটের তৃতীয়দিনে কাজ অনেকটাই গুছিয়ে এসেছিল।তাই তমনীষ দুদিনের ছুটি নিয়ে পিপলিদের বাড়িতে আসে পিপলিকে দেখতে। কারণ আরও একটা ছিল। 

            অনাথ বাচ্চাগুলোকে কে দেখবে?পাগলীটা মারা গেছে হঠাৎ স্ট্রোকে। আর পিপলি? সে তো ছোট্ট।

            আজন্ম অনাথ তমনীষ জানে বাবা মা হারার যন্ত্রণা। তাইতো ওদের টানে ছুটেছে। এতদিন পাগলীটাই ওদের দেখভাল করত।

               দুপুরের পর থেকেই পিপলির জ্বর আরো  বাড়তে থাকে। তমনীষ জানে জ্বরের একমাত্র ওষুধ ভালবাসা।

          তাই অনাথ কুকুরের বাচ্চাগুলোকে কোলে করে পিপলির কাছে এনেছিল ঝোপ থেকে। ওষুধে জ্বর কমলেও ভালবাসার মাদুলি কাজ করেছিল। পিপলি যে ওদের  ভীষণ ভালবাসে। ওদের কাছে পেয়ে পিপলি জ্বর সেরে উঠে আবার চাঙ্গা হয়ে উঠল। 

          তমনীষের ওটাই ছিল শেষ ছুটি। দু একদিনের মধ্যেই ও  টানা লম্বা ছুটি নিয়ে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে একেবারে চির বিদায়.......

            পিপলি তমকাকুকে  দেখার জন্যে প্রায়ই বায়না করে। ও জানেই না ওর আদরের তমকাকু এখন ঐ অফিস থেকে চিরতরে বদলি নিয়ে অন্য অফিসে থাকতে শুরু করেছে........

             অনুরাগের ছোঁয়া আর চোখের নোনাপানিতে ফুলগুলো রোজ হাসে। পুচকেগুলোর মতন রোদে খেলা করে।

Address: 85, Kalibari Road, Nalta
                 Near Air Port Auto Stand
                 PO: Italgachha
                  Kolkata -28
                  North 24 Parganas

Mobile: 9073939997/9932958615(wh app)

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.