বিজ্ঞপ্তি
লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫
নভেম্বর ২১, ২০২৪
অষ্টমঙ্গলাঅঞ্জলি দেনন্দী, মম
ধরিত্রী ও ওমাধার অষ্টমঙ্গলায় জোড়ে আসছে। ধরিত্রীর বাপের বাড়ি শশুর বাড়ী থেকে অনেকটাই দূরে। ওমাধার নব বিবাহিতা বউকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমবার শশুর বাড়ী আসছে। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা জার্নি করে ওরা এলো। ধরিত্রীর ভাই আশিস দিদি ও জামাইবাবুকে আনতে গিয়েছিল। সে এম. কম পাস করে এখন আই. সি. ডব্লিউ. এ. পড়ে। ধরিত্রী বি. এস. সি. পাস। ওমাধার টেন পাস।বাড়ীতে ঢুকতেই ধরিত্রীর মা, বাবা, বোন, ভাই খুব সম্মানের সঙ্গে নতুন জামাইকে ভেতরের ঘরে নিয়ে গিয়ে বসালো। আশিস একটু পরে সে ঘর থেকে অন্য ঘরে চলে গেল। এবার মা ট্রেতে করে দুটি রুপোর গ্লাসে করে দইয়ের শরবত এনে টেবিলে রাখল, মেয়ে ও জামাইয়ের জন্য। ধরিত্রীর বোন সে দুটি দিদি ও জামাইবাবুর হাতে দিল। সঙ্গে সঙ্গে জামাই মেয়ের হাত থেকে গ্লাসটি নিজের হাতে কেড়ে নিয়ে, তার নিজের হাতের গ্লাসটি মেয়ের হাতে ধরিয়ে দিল। আর আড়চোখে একবার বৌয়ের দিকে চেয়ে মুচকী হাসছে। আরেকবার মায়ের দিকে তাকিয়ে হাসছে। আরেকবার বোনের দিকে তাকিয়ে হাসছে। দৃষ্টিতে শয়তানী। এবার জামাই ঢোঁক ঢোঁক ঢোঁক করে এক নিঃশ্বাসে শরবত খেয়ে নিল। মেয়েও খেলো। এবার গ্লাসদুটি নিয়ে বোন চলে গেল। মা বলল, "এখানে পোশাক রাখা আছে। চেঞ্জ করে নিও বাবা!" এই বলে সেও চলে গেল। খানিকটা পরে ধরিত্রী বলল, "তুমি ড্রেস চেঞ্জ করে নাও! আমি একটু রান্নাঘর থেকে ঘুরে আসছি।"ও এলো। মা বলল, " আমার এতখানি বয়স হল, আত্মীয় স্বজনের কত জামাইদের আপ্যায়ন করেছি, কেউ এরকম অপমান করেনি। আমি কি জামাইয়ের শরবতে ক্ষতিকর কিছু মিশিয়ে দব নাকি? " ধরিত্রী বলল, " মা গো ওখানে এই এক সপ্তাহ ধরে ও শুধু প্রতিটি মুহূর্তে আমায় এরকম অপমান করে গেছে। " মা বলল, "একদম বাজে হয়ে গেল রে!"এরপর ও বরের ঘরে গেল। তারপর মা এল। মিষ্টি ও জল দিল। দুজনে খেল। তবে ঐ সেই পাল্টাপাল্টি করে। সকলেই চুপচাপ সহ্য করছে।এরপর খানিকটা সময় কেটে গেল। ধরিত্রী স্বামীকে নিয়ে বাথরুমে ঢুকিয়ে দিল। বিরাট বাথরুম। সারি সারি সারি লোহার দামী দামী দামী বিভিন্ন সাইজের বালতি উপুড় করে রাখা আছে। ওগুলো কাজে লাগে না। এমনিই আছে।স্নান সেরে পতি বের হয়ে এ ঘরে এল। বলল, "তোমাদের বালতিগুলো;" বেশ কয়েকবার একই কথা বলল, " তোমাদের বালতিগুলো। " ধরিত্রী কিছুই বলল না।বেশ কয়েকদিন কেটে গেছে। সত্য নারায়ণের পূজোও হয়ে গেছে। এবার ওরা চলে এলো।এর ছয় বছর পর ধরিত্রীর ছেলে হল। ধরিত্রী হাসপাতাল থেকে ছেলে নিয়ে বাপের বাড়ি গেল। সেখানে ছেলেকে ছয় মাসের বড় করে বরের বাড়ি এল। এসে দেখল বাথরুমে তার বাপের বাড়ির মত বালতিগুলি। আগে এখানে একটামাত্র সস্তার প্লাস্টিকের বালতি ছিল। ওমাধার বলল, " তোমার বাপের বাড়ীর মত আমি তোমার জন্য বারোটি ঠিক একই রকম বালতি কিনে রেখেছি। শাশুড়ি বালতিগুলি ধরিত্রীকে ব্যবহার করতে দিল না। বলল, "আমার ছেলে আমার জন্য কিনে দিয়েছে। তোমার দরকার হলে বাপের বাড়ি থেকে এন!" বরও কিছুই বলল না। বৌ ভাবছে, এ কি ধরনের ব্যবহার। আরও ভাবল, সেই কত বছর আগে অষ্টমঙ্গলায় বর বলেছিল, "তোমাদের বালতিগুলো।" আর এত বছর পরে ও ঠিক সেরকম ওর মাকে কিনে দিল। আমার মায়ের মত ও ওর মাকে করে দিল। এরপর শাশুড়ি ওই বালতিগুলি ব্যবহার না করে নিজের বাপের বাড়ি অর্থাৎ ওমাধারের মামার বাড়ি দিয়ে এল। ওমাধার কিছু বলল না। চুপচাপ দেখল শুধু। এখানে সেই আগের একটামাত্র প্লাস্টিকের বালতিই রইল।এরপর ধরিত্রীর ছোট ননদের বিয়ে হল। যখন ছোট নন্দাই অষ্টমঙ্গলায় আসবে ঠিক তার আগের দিন ওমাধার আবার বাজার থেকে ঠিক ওই রকম ছয়টি বালতি কিনে নিয়ে এল। নতুন জামাইকে ওমাধার সেই বালতিগুলি ব্যবহার করতে দিল। এখানে কয়েক দিন থাকার পর যখন ছোট ননদ ও নন্দাই তাদের বাড়ি চলে গেল তখন ওমাধার ওদের সঙ্গে গেল ও সেই বালতিগুলি বোনের বাড়িতে নিজে গিয়ে রেখে এল।ধরিত্রী চুপচাপ শুধু দেখতে রইল।==================
পি- ১১৪পি এক্সটেনশনমোহন গার্ডেন।উত্তমনগর।দিল্লী ।