ব্যস্ততা
সমর আচার্য্য
এখন আর মোবাইলে অ্যালার্ম দিয়ে শুতে হয় না । সকালে ঠিক সময়েই ঘুম ভেঙ্গে যায় অরুণ আর মোনালীর । ছেলের কাঁচা ঘুম ভাঙাতে ভাঙাতেই অরুণ প্রাতঃকৃত্য সেরে রেডি হয়ে পড়ে।
ছেলেকে ব্রাশ করানো, স্কুলের ড্রেস পরিয়ে পড়ার ঘরের টেবিলে অনলাইন ক্লাসে বসাতে হয় । ততক্ষণে চা নিয়ে আসে মোনালী । ওদিকে শ্বশুর মশাই এর জন্য লাল চা আগেই দিয়ে এসেছে।
এবার মোনালী একটু বসে ছেলের কাছে । অরুণকে বাজারে যেতে হবে । বাজারের ব্যাগ হাতে প্রায় ছুটতে ছুটতে বাজারে যায় সে । রাস্তায় সাহাকাকুর সঙ্গে দেখা, এই অরুণ শোন শোন, তোর বাবা কি করছে, কেমন আছে । কাছাকাছিই বাড়ি । কিন্তু করোনার ভয়ে বয়স্কদের এখন বাড়ি থেকে বের হওয়া প্রায় বন্ধ । ফোনে ফোনেই কথাবার্তা হয় । কিন্তু আজ কয়দিন ফোন করেনি অরুণের বাবা l অরুণ বলে, হ্যাঁ জেঠু, বাবা ভালোই আছে l বলেই হনহন করে এগিয়ে চলে বাজারের পথে l
তাড়াহুড়ো করে বাজার করবার ই কি উপায় আছে l তার মত হাজার অরুণ তো ইতিমধ্যেই ভীড় করে ফেলেছে l যে দোকানে যায় সেখানেই ভীড় l মাছের বাজারেতো ঢোকার উপায় নেই l এত ভীড়, দেখে তো মনেই হয়না যে দেশে করোনা আছে। যাইহোক কোনমতে ঠেলেঠুলে বাজার সেরে বাড়ি আসে l মোনালী চেঁচিয়ে ওঠে l এত দেরি করে বাজার থেকে ফিরলে আমি কি করে পারবো l সাড়ে আট তো বেজেই গেল l কখন রান্না হবে, আর তোমাকে খেতে দেব l গজগজ করতে করতে মোনালী রান্না ঘরে চলে যায় l
অরুণ ছেলের ক্লাসের খবর নিতে নিতেই স্নানের জন্য তৈরী হতে শুরু করে l নয়টা পয়ত্রিশের স্টাফ স্পেশালটা না ধরতে পারলে অফিস যাওয়াই হবে না l তাই এত ব্যস্ততা l
কোনমতে নাকে মুখে দুমুঠো গুঁজে ছুটতে হয় তাকে l মোনালিও ঘুম থেকে উঠে পর্যন্ত ছুটেই চলেছে । একটু বিশ্রাম নেওয়ার সময় নেই।
অরুণ খাচ্ছিল, তখন তার বাবা এসে বললেন, আমার চশমাটা একটু ঠিক করে আনতে হবে l কাল রাতে ওটা হাত থেকে পড়ে গিয়ে একটা কাচ ভেঙে গিয়েছে l অরুণ বলে ওঠে, আমি কখন সময় পাবো বলতো l তোমার বৌমা ওটা ঠিক করিয়ে আনবে l মোনালী ঝাঁজিয়ে ওঠে, আমিই বা কখন সময় পাবো বলতো? সব কাজ সেরে এই রোদে দুপুর বেলা কি যাওয়া যায় l আবার ওদিকে বিকেল পাঁচটায় তো সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায় l
অরুণের বাবা বলেন, ঠিক আছে, তোদের যখন সময় নেই তখন আমিই আজ একবার বের হবো l
অরুণ কথার কোন উত্তর না দিয়ে প্রায় ছুটতে ছুটতে ট্রেন ধরতে দৌড়ায় l
অফিস থেকে ফিরতে ফিরতে রাত প্রায় নয়টা হয়ে যায় l বাড়ি ফিরে খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়ে l
বৌ মোনালী তখন নানা রকম বায়না করে l এটা নেই, ওটা নেই l ছেলের পড়াশুনার কথা, সংসারের আরো হাজারো সমস্যার কথা l অরুণ জিজ্ঞাসা করে, বাবার চশমাটা ঠিক করা হয়েছে? মোনালী বলে, না, বাবা নিজেই গিয়েছিল, কিন্তু ভীড় বলে দোকানদার রেখে আসতে বলায় বাবা না রেখেই চলে এসেছে l চশমা ছাড়া একমুহূর্ত চলবে কি করে l
অরুন বলে, ঠিক আছে কাল আমি অফিসে যাওয়ার সময় দেখে নেবো l
রাতের খাওয়ার পরে আর দেহ চলতে চায় না অরুণের l
সারাদিনে যে ধকল যায় l তার উপর এই গরমে দেহ ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়ে l বিছানায় দেহ এলিয়ে দিলেই চোখে ঘুম এসে যায় l
মোনালী তখনো বিছানায় আসেনি l শ্বশুরের ঘরে ছেলে আর শ্বশুরের বিছানা করে শুইয়ে দিয়ে তারপর নিজের ঘরে এসে দেখে, অরুণ ঘুমিয়ে পড়েছে l
অরুণের ঘুমন্ত মুখের দিকে খানিক তাকিয়ে থাকে, মনের মধ্যে দুষ্টুমি আসে l ধাক্কা দিয়ে অরুণের ঘুম ভাঙিয়ে দেয় l বলে, কি বেরসিক গো তুমি l আমি আছি এ কথা বোধহয় ভুলেই গিয়েছো l বলেই স্বামীকে জড়িয়ে ধরে আদর করে l অরুণ ঘুম জড়ানো চোখেই বলে, এখন ঘুমিয়ে পড়ো l কাল আরো সকাল সকাল অফিসে যেতে হবে l স্পেশাল মিটিং আছে l সাড়ে সাতটার ট্রেনটা ধরতে হবে l
বলেই মোনালীর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে l মুহূর্তের জন্য মোনালীর মনটা হতাশ হয়ে যায়। মনে মনে ভাবে, এই কি সেই অরুণ ? যে বিয়ের আগে একমুহূর্ত তাকে না দেখলে অস্থির হয়ে পড়তো। বিয়ের পরে মোনালীর হাত না ধরা ছাড়া যার ঘুম আসতো না। একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে বুক থেকে। পরক্ষণেই তার মনে পড়ে , আরে কাল তো তাকেও ছেলের স্কুলে যেতে হবে সকাল আটটায় l মাতৃ সম্মেলন আছে l এখন রাত প্রায় বারোটা বাজে l আর দেরি না করে, পাশ ফিরে সে ও শুয়ে পড়ে l
-------------------------------