ব্যক্তিগত নিবন্ধ ।। সাহিত্যের কারবারীদের কাছে খোলা চিঠি ।। অংশুদেব
সাহিত্যের কারবারীদের কাছে খোলা চিঠি
অংশুদেব
ওঁ ফেস বুকায় নমঃ।
ওঁ ফেসবুক গ্রুপায় নমঃ।।
হঠাৎ পূজার মন্ত্রে পরিবর্তন কেন ? মহালয়ার পিতৃ তর্পনে মাও একটু জল পাচ্ছিল ।তাও গেল। ব্রাহ্মণদের অর্থ ইনকামের হিড়িকে পিতৃ কুল বিশুদ্ধ মিনারেল ওটারে মুখ ধুচ্ছেন, নয়তো পচা নর্দমা গঙ্গা হয়ে যাচ্ছে । ব্রাহ্মণরা সব পারে । আর পারে সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদকরা । সাহিত্য সেবা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন । জাতির মান মনন বিবেক বিকাশ চিন্তন সব এক কর্মে সমাধান ।
এই নেট দুনিয়ায় একছত্র আধিপত্যের বাজারে বই, পত্রিকা মুদ্রণ মাধ্যমকে তবু কিছু মানুষ ছাড়তে পারেনি । ভালো ভালো ছাত্র- ছাত্রীরা এই নেট জ্ঞান ভান্ডারের যুগে বলেন ,বইয়ের বিকল্প হয় না । আমরা যারা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বিরুদ্ধে তারা টিভির সামনে বসলে উঠি না, মোবাইল হাতে পেলে ছাড়ি না । যেন সুন্দরী হওয়া অপরাধ ।
এই যুগে সাহিত্য করা একটা বিলাসিতা । আপনি অবশ্যই কবি লেখক প্রবন্ধকার উপন্যাসিক হবেন , অনুপাতে যদি পকেটে টাকা থাকে । এই সুযোগে একটা টাটকা অভিজ্ঞতার কথা বলে নিই । অনেক দিন হল সাহিত্য আসর বর্জন করার ব্রত পালন করছিলাম । তার প্রধান কারণ আমি স্কুল মাস্টার,অধ্যাপক ,আমলা বা চাকরি জীবি নই। পাতি রোজগেরে ।সাহিত্যের আসরে তাদের আদর বেশি ,যারা কড়কড়ে একশ ,কি দুশো,কি পাঁচশ, হাজার ঝপঝপ বের করে দিতে পারেন।যিনি বিজ্ঞাপনটা পাইয়ে দেন । এঁরাই প্রথম সারির লেখক,কবি । এদের নিয়ে হুড়োহুড়ি, আদিখ্যেতা ।ওই তারাপীঠের লাইনের মতো । টাকা অনুযায়ী কদর ও অধিকার । তারাপীঠের লাইন যে ভেঙে বেরিয়ে এসেছে,সে সাহিত্য আসরেরও লাইন ভাঙবে ।
পত্রিকা প্রকাশ মানে পত্রিকা বিক্রি, সাহিত্য আসর থেকে এর যাত্রা শুরু । বড় কোনো কবি বা লেখক বলে দেবেন নতুন কার কার লেখা নেবে। অপরের লেখা(শ্রম), অপরের টাকা ,আমি বড় সম্পাদক বহুদিনের সূতিকাগার । বামপন্থী ডানপন্থীতে এখানে কোনো ফারাক নেই।
নতুনরা আর কবিরা একটু হ্যাংলা হয় ।লেখা দিয়ে বা পাঠিয়ে ফেলে । লিখলেই স্বাভাবিক প্রকাশের ইচ্ছা থাকবে । আমার এ রোগটা এক জুনিয়র বন্ধু বাড়িয়ে দিল । ফেসবুকের লেখা দেখে চেপে ধরল । দিয়ে ফেললাম।তা হঠাৎ রাত এগারোটায় ফোন এলো ,কাল বিকেলে চলে আসুন। পত্রিকাটা প্রকাশ করা হবে । কবিতা আনবেন ,শুনব ।
এই ধরণের আমন্ত্রণ আমাদের ভাগ্যে খুব একটা জোটে না । তাই চলে গেলাম, কবিতা পাঠ করলাম, শুনলাম ।বেশীরভাগ জন কর্মজীবনে অবসর নেওয়ার পর লেখা ধরেছেন । ইঁদুর পচে ওঠা থেকে কুকুরের মৃত্যু সব সামাজিক দায়বদ্ধতার কাব্য ।কে কি করেন ,কোন পদাধিকারী, কোন কোন পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত - এই আলোচনা। কেউ কিন্তু কারো লেখা নিয়ে কথা বলছে না বা সাহিত্য নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না ।নামী দামীরা হাততালি পাচ্ছে । সুটসাট লেখা আদান প্রদান, পত্রিকা দেওয়া নেওয়া - সেই ট্রাডিসন ।
তার মধ্যে পত্রিকা উদ্বোধন হল এবং ঘোষিত হল - সকল লেখককে পত্রিকা কিনে নিতে হবে । আমি অটো ভাড়া আর মেয়ে একটা বই কিনতে টাকা দিয়ে ছিল ,সেটা নিয়ে বেরিয়েছিলাম । সকলে ঝপ ঝপ একশ পাঁচশ বের করতে থাকল । এই রকম লজ্জার কথা আমার লেখার গুরুও বলেছিলেন । তিনি লেখা ছেড়ে দিয়েছেন ।
আমি পর নির্ভর ।কাল থেকে এসে পর্যন্ত একটাই কথা ভাবছি , আমি যদি না লিখি কার এমন ক্ষতি হবে ? কি এমন উপকার বা হচ্ছে ?
একটা কষ্ট হবে ।ধীরে ধীরে লেখাটা একটু শিখেছি ।তা অনেক দিনের ঘষামাজায় । চাকরি জীবনের ইনকাম,ঘোরা, খাওয়া দাওয়া,মস্তির পর সাহিত্য যারা করতে আসেন, তাঁরা কেরিয়ারিস্ট । বেশিরভাগ বাংলা লিখতে পড়তে জানতেন না স্কুলে । একজন তো বড় কবি বললেন, সমাপিকা ক্রিয়া কি ? তিনি জানেন না ওসব । তাঁদের অধিকাংশই বাংলার ঐতিহ্যবাহী লেখা পড়েই নি ।কি হল , আমাদের এত পড়ে ? কয়েক লাখ নিয়ে রিটিয়ার করলে দু চারটে পত্রিকায় লেখা তো বের হত।বড় লেখক না হতে পারি ছোট লেখকের তো সম্মান পেতাম !
না পাই । এই ফেসবুক আমাকে অনেক দিয়েছে । এমনকি একটা গ্রুপ সারাবছরের লেখা থেকে দুটো লেখা নিয়ে পত্রিকায় ছাপিয়েছে। উপন্যাস লিখিয়েছে , কবিতা নিয়ে কাটা ছেঁড়া করে ।অনেকে করে ।আমার সাধনা সার্থক । তাঁরা আমার লেখা পড়ে । মুদ্রিত পত্রিকা কেউ পড়ে না । আমার একটা উপন্যাস বিনা মূল্যে পড়তে দিয়ে এসেছিলাম এক বড় লেখককে । আলোচনার শুনতে গিয়ে মনে হল পড়েনি । বইটা উই ধরা মূল্য নিয়ে বের করে আনলাম চৌকির তলা থেকে। ফেসবুক বেঁচে থাক ।ফেসবুক বোধহয় আমাদের মতো নিঃস্ব কবি লেখকদের জন্য ।
২৭সেপ্টম্বর ২০২২