Click the image to explore all Offers

চিঠির পাতা ।। খোলা চিঠি ।। বিশ্বনাথ প্রামাণিক



চিঠির পাতা

বর্তমান মোবাইল আর ইন্টারনেটের যুগে প্রায় বিস্মৃত এক শিল্প। একদিন মনের আবেগ লুকানো থাকত  এর পাতায় পাতায়। লুকিয়ে চিঠি পড়া বা লেখা ছিল নয়ের দশকের পূর্বের কিশোর-কিশোরী, যুবক- যুবতিদের স্বপ্ন। একসময় একটা রঙিন চিঠির খাম আসা মানে বুকের ধুক-পুকুনি কয়েকগুন বেড়ে যেত। এমনি  প্রায় হলুদ হয়ে যাওয়া এক চিঠির পাতা থেকে চয়ন করা এক কিশোরের ভাবনা বানান ও আবেগ অপরিবর্তিত রেখে প্রকাশ করা হল। 

 বন্ধুরা, আপনারাও প্রকাশ করতে পারেন এমনতর হাজারো বিস্মৃত প্রায় সাহিত্যে ভরপুর চিঠির পাতা।      

 

  খোলা চিঠি

 

                                                                                                                              এক মায়াবি বৃষ্টির রাত।

                                                                                                                                     ১লা  আষাঢ় ১৪০৮

মায়া,

আশাকরি "গণদেবতা"- "করুণা"-য় ভালো আছো। আজ এই 'আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে' "আট বছর আগে"- একদিনের কথা বড় বেশি মনে পড়ছে মায়া। ছিলাম শান্ত "সমুদ্র নীল আকাশ"-এর ছায়াতলে। হঠাৎ একদিন পড়ন্ত বেলায় তুমি শোনালে "বাঁশরী"- তানআর সেই থেকে

“ রূপ লাগি আঁখি ঝুরে গুনে মন ভোর

প্রতি অঙ্গ লাগে কান্দি প্রতি অঙ্গ মোর”

এ প্রাণের আবেগ আমি কোথায় লুকায়ে রাখি! তুমি ছিলে আমাদের 'হরিঘোষের গোয়াল'-এর "নেপথ্য নায়িকা" কিন্তু "কল্যাণী" "বনে যদি ফুটলো কুসুম", "পালাবদল"-এর খেয়ালে মনে হল তুমি হলে দূর আকাশপারের "নীহারিকা", কিংবা "আলোর আড়ালে" "মনের ময়ূর"      

সে "বাকি ইতিহাস" "হেমন্তর গোধূলি"-তে হারিয়ে গেছে। তারপর " নির্জনপৃথিবী"-তে "আমি একা, বড় একা"       

আজও মনে পড়ে, সেদিন যেন কেমন করে এসে দাঁড়িয়েছিলাম"বৈতরণীর তীরে" সাক্ষাৎ হয়েছিল তখনো নাম না জানা সে এক "বনলতা সেন"-এর সঙ্গে, এক "ধূসর গোধূলি" বেলায়। ভাবলাম কোন "যাদুকরী"! আমার "কৃষ্ণপক্ষ"-এর "মরাচাঁদ"-কে "পুনর্জন্ম" দিয়ে জ্যোৎস্নালোকিত করে তুলতে চায়! মনে "প্রশ্ন" জাগল তার "রবি করোজ্জ্বল নিজ দেশে" আমার "নষ্টচাঁদ" "বসন্ত"-এর গান শোনাতে পারবে কি! কিন্তু মন বললে "ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত" তাই সেই "বৈশাখের নিরুদ্দেশ মেঘ" "যমুনা কী তীরে" এসে বাঁধলে বাসা। গড়ে উঠল নীড়, হাঁ "নষ্টনীড়" সেই থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিনিয়তঃ চলতে থাকল "মেঘ মল্লার" এর সুরে সুরে "মেঘ রৌদ্র"এর খেলা।    

বনলতা ছিল আমার "পথের সাথী", আমার "রসকলি", আমার "মুক্তি", আমার "প্রেম" কিন্তু আমার "বিধিলিপি" এমনই যে সুখ "মন্দাকিনী"- অমৃতধারা একই পথে দীর্ঘদিন প্রবাহিত হয় না। আমি আজও বুঝে উঠতে পারলাম না "ভানুমতি () চিত্তবিলাস" দূরে নিকটে "ঘরে-বাইরে" আমি হয়ে পড়লাম বন্ধুদের "চোখের বালি"  

তবু সে ছিল ভালো। যদি জানতাম আমার মনের "মালঞ্চ"-এ "স্বর্ণলতা" হয়ে তুমি চিরদিন বিরাজ করবে, তাহলে "হরিষে বিষাদ" হৃদয় নিয়ে বাকী জীবন "রজনী" "রজনীগন্ধা" হয়ে "কালিন্দী" নই কুলে কাটিয়ে দিতে পারতুম।       

কিন্তু সে যে শুধু "দৃষ্টি প্রদীপ" জ্বেলে চেয়ে রবে, কথা কবে না, সেদিন বুঝিনি।

তবুও তো  যোগভ্রষ্ট মুনির মত তরঙ্গিণীর মায়া ত্যাগ করতে পারলুম না। আর এখানেই আমার "দিবসের শেষে"- "অশনিসংকেত" প্রতীয়মান হয় নিত্য নিত্য। রচিত হয় "ব্যবধান"- হৃদয়ের সঙ্গে নিষ্ঠুর বাস্তবের।  আজও প্রতিনিয়ত আমি শুনতে পাই হৃদয়ের কড়ানাড়া, দেখতে পাই কেমন করে "স্বর্ণসন্ধ্যা" নামে আমার ভুবনে! তবু তুমি "আমার হৃদয়ে বাঁচো"আর বাঁচাও তোমারই হাতে গড়া এই "বিষবৃক্ষ"কে-"নতুন পাতা" "বসন্ত" আর "প্রেম"নিয়ে সে হয়ে উঠুক "অমৃতের পুত্রকন্যা"।  "মরীচিকা" হেন ভুবনে, আমার উত্তরের প্রতীক্ষায় থাকা তোমার মৌনতাই, তোমার "ঘরে ফেরার দিন" হোক। আমি না হয় চিরকাল “নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে”-ই থাকব প্রিয়ে।       

তারপর দেখবে হয়তো একদিন সব পাতা গেছে ঝরে, সব ফুল গেছে শুকায়ে, আর "শীতের প্রার্থনা বসন্তের উত্তর"-এর প্রতীক্ষায় থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। সেদিন যদি কোন এক "ধূসর গোধূলি" বেলায় তোমার দুটি আঁখি পাত হতে  নীরবে "অশ্রুকণা" ঝরে পড়ে, সেদিন বুঝো "আজ বসন্ত" তারপর "শেষ পান্ডুলিপি" আঙলে "যে আঁধার আলোর অধিক" সেই আঁধারে যদি মনে হয় মোরে, "একদা তুমি প্রিয়ে" "কাকজ্যোৎস্না" গায়ে মেখে 'তুঙ্গভদ্রার তীরে" দাঁড়িয়ে জানতে চেয়েছিলে যে কথা, উত্তর তার চাপা পড়ে গেছে মৌনতার অন্তঃসলিলে", তাহলেও দোষ দিব না তোমায়।

আজ মনে পড়ে কবিগুরুর লেখা সেই বিখ্যাত কবিতাটি-

"দেখেছি অনেকদিন      বন্ধন হয়েছে ক্ষীন

ছেঁড় নাই এই করুনার বসে।

গানে লাগি তো না সুর    কাছে থেকে ছিলে দূর

যাও নাই কেবল আলসে।

পরান ধরিয়া তবু         পারিতাম না তো কভু

তোমা ছেড়ে করিতে গমন।

প্রানপথে চেয়ে থাকি     দেখিতাম মিলি আঁখি

পলে পলে প্রেমের মরন।"

তাই আমার "মলিন মালা"য় গাঁথা "স্বপ্নের ফুল" কারো "মায়াকানন"-এর "সূর্যশিকার" হবার পূর্বেই বিদায় সওগাত গাইতে হয়। আমার "স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ" সব দূরে ফেলে বলি- "প্রভু নষ্ট হয়ে যাই" তবু তুমি "চিত্ররূপ মত্ত পৃথিবীর 'পরে "আমার হৃদয়ে বাঁচো" আর আমি হৃদয়ের খাতায় "ছায়ার আলপনা" এঁকে গুনগুন করে গাই -  

আবার যদি কোনদিন কোন প্রাতে

দেখা হয়ে যায় তোমার সাথে

মুখটা লুকায় নাও  যদি ঘোমটার অন্তরালে

জানিব সে তোমার মুখ নয়,

অন্য কারো, অন্য কোন জাতের।

আর কি! ভালো থেকো। তোমার আকাশ ভরে উঠুক নীলে নীলে।

বিদায় বন্ধু বিদায়

ক্ষণিকের এই পাওয়া

কখনো হবে না হারা ধরার ধুলায়

বিদায় বন্ধু বিদায়।

                                                       ইতি

                                                                                তোমার চির শুভাকাঙ্ক্ষী

                                                                                   তপন।

--------------------------------------

                               


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.