Click the image to explore all Offers

অণুগল্প ।। বেমানান ।। চন্দন মিত্র

 

ছবি ঋণ- ইন্টারনেট 

বেমানান

চন্দন মিত্র 

 

বিনয়ের পুলিশ হওয়ার পিছনে হিন্দি ও দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার যথেষ্ট প্রভাব আছেঅন্যায়ের  সঙ্গে আপোষহীন এক লড়াকু পুলিশ অফিসারের ছবি তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়, যে চোর-ডাকাত,  নেতা-মন্ত্রী কাউকে রেয়াত করে না। রীতিমতো পরীক্ষা দিয়ে, দৌড়ঝাঁপ কমপ্লিট করে সে পুলিশের চাকরিতে ঢুকেছে নিছক চাকরি করার জন্য নয়, আদর্শের তাড়নায়ট্রেনিং শেষ করে সে  এক শহুরে থানায় সাব ইন্সপেক্টর হিসাবে নিয়োগ পায়। চাকরি জীবনের দ্বিতীয় দিনে তার এমন এক অভিজ্ঞতা হয়, যা তাকে বায়বীয় আদর্শের আকাশ থেকে এক ঝটকায় বাস্তবের মাটিতে আছড়ে ফেলে।

   নাইট ডিউটি শেষ করে কোয়ার্টারে যাওয়ার পথে বিনয় দেখে এক প্রৌঢ়, আখের রস বিক্রি  করছেন। সে এগিয়ে গিয়ে বলে, আমাকে এক গেলাস দেবেন। প্রৌঢ় অবাক চোখে বিনয়ের দিকে তাকিয়ে থাকেন। বিনয় বলে, কই দিন। প্রৌঢ় বলেন, আমাকে আপনি বলবেন না স্যার, আমি  মুখ্যুসুখ্যু মানুষ আপনাদের দয়ায় করে খাচ্ছি। বিনয় ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। সে বলে, আপনি আমার বাবার বয়সী আপনাকে আপনি বলাই উচিত। আর আমাদের দয়ার করে খাচ্ছেন বিষয়টা ঠিক বুঝতে পারলাম না। আপনি তো রাস্তা থেকে অনেকটা দূরে বসেছেন, কারোর অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। প্রৌঢ়, তাঁর দুর্বল পেশির জোরে পেষাই যন্ত্রের চাকা ঘুরিয়ে চলেন। চাকার সঙ্গে লাগানো ঘুঙুরগুলি একটানা কান্নার মতো বাজতে থাকে। আখের অশ্রু দরদর ধারায় নির্গত হয়ে বালতিতে জমে।   

    এক গেলাস খাওয়ার পর বিনয় আরও এক গেলাস চেয়ে নেয়। পকেট থেকে রুমাল বের করে মুখ মুছে সে মানিব্যাগ বের করে। প্রৌঢ় করজোড়ে জানান, মাফ করবেন স্যার, আমি আপনার কাছ থেকে দাম নিতে পারব না। বিনয় বিস্ময়ের সঙ্গে জানায়, এটা আপনার ব্যবসা, দাম না-নিলে আপনার চলবে কী করে ! আপনার তো সংসার আছে। প্রৌঢ় রসবিক্রেতা তেমনই  করজোড়ে কোটরে ঢোকা চোখদুটি পিটপিট করতে বলেন, স্যার আপনি বোধহয় নতুন তাই জানেন না।     

 ================

চন্দন মিত্র

ভগবানপুর (হরিণডাঙা)

ডায়মন্ড হারবার, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

সূচক- ৭৪৩৩৩১        

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.