Click the image to explore all Offers

অণুগল্প ।। সন্দেহের পরিণতি ।। মহা রফিক শেখ

 ছবিঋণ- ইন্টারনেট

সন্দেহের পরিণতি 

মহা রফিক শেখ

হৈমন্তীর সাথে রানার প্রায়ই ঝগড়া লেগেই থাকে। রোজ সন্ধ্যায় রুটিন মাফিক কিচিরমিচির। দুপুরের দিকে ফোনে হৈমন্তীর চেল্লামিল্লি। সম্পর্কে দুজনের স্বামী স্ত্রী। বিগত পাঁচ বছরের বৈবাহিক সম্পর্ক। তবুও কোথাও যেন একটা টানাপোড়েন।

আসলেই হৈমন্তী প্রথম থেকে সন্দেহপ্রবণ। সন্দেহ বাতিকে ভুগছে। যেকোনো বিষয়ে-  যে কোন সময়ে।

কখনো বা সীমা অতিক্রম করে হুলুস্থুলস কান্ড ঘটিয়ে দেয়। এই ব্যাপার গুলো মোটামুটি পাড়ার লোকেরা জেনে গেছে।

  রানা বেচারা শিক্ষিত ভদ্রলোক। বহু কষ্টে লেখাপড়া করে আজ একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করে। টার্গেট আর প্রেশারে বেচারার দম ফেলার সময় নেই। কিন্তু এরই মাঝে তার স্ত্রী হৈমন্তী "সন্দেহ সন্দেহ"  করে তাকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।

অফিসে গেলে কোন মহিলা সহকর্মীর সাথে রানার নাকি প্রেম আছে। অফিসের বাইরে গেলে কোন মেয়েকে নাকি দেখে। কোন অপরিচিত মেয়েকে নিয়ে নাকি শপিং করাতে যায়। পার্কে মেয়েদের সাথে ঘুরঘুর করে। নিজের বাড়ি এলে পাড়ার কোন মেয়ের সাথে নাকি রানার প্রেম চলে-।  ইত্যাদি ইত্যাদি। এরকম হাজারো উদ্ভট অবাস্তব ভাবনার তীর রানার দিকে ছুঁড়ে দেয়। বউয়ের ভ্রান্ত সন্দেহে এবং অফিসের চাপে রানা আত্মহত্যারও সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু বাচ্চার মুখ চেয়ে কিছু করতে পারেনি। রানা একদিন সিদ্ধান্ত নিল যে হৈমন্তীকে শহরের ভালো একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ কে দেখাবেন। সেইমতো এক ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট করে হৈমন্তীকে পরের দিন  দুপুর বারোটার সময় আসতে বলল নির্দিষ্ট চেম্বারে। আর রানা অফিসের একটা জরুরী কাজ সেরে ঠিক বারোটায় ওই চেম্বারে হাজির হবে। এ রকমই কথা হল- দুজনের মধ্যে। সকাল হতেই হৈমন্তী বারোটার অনেক আগেই পৌঁছে গেল ওই চেম্বারে। বারবার ফোন করতে লাগলো রানাকে। কিন্তু কোন রিপ্লাই আসছে না।। ক্রমাগত রিং বেজেই চলছে। কোন সাড়া নেই। হৈমন্তী প্রচন্ড রেগে গেলেন এবং তার সন্দেহ বাতিকতা ক্রমশ ঝড়ের আকারে বাড়তে লাগলো। রাগে তার মুখ একেবারে লাল হয়ে গেছে। হঠাৎ চেম্বার থেকে কিছুটা দূরে প্রচুর মানুষের জটলা এবং চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ কানে আসতে লাগলো। পাশের একটা লোককে হৈমন্তী জিজ্ঞাসা করল  "কি হয়েছে ওখানে? লোকটি বলল-  একটা মারাত্মক বাইক দুর্ঘটনায় একটা লোক নিস্তেজ অবস্থায় পড়ে আছে। রক্তে সারা রাস্তা ভেসে যাচ্ছে। হৈমন্তী কৌতুহলবসত সেখানে গিয়ে হতবাক। তার নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এতো তারই স্বামী! পাশে পড়ে থাকা ফোনটা তখনো অবিরত বেজে চলছে - হয়তো অফিসের কোন বসের। হঠাৎ সাইরেন বাঁচিয়ে একটা গাড়ি এল। না ,কোন এম্বুলেন্স নয় । শববাহ গাড়ি। চোখের নিমেষে নিথর রানাকে নিয়ে চলল - শান্তির শেষ গন্তব্যে। মহা শ্মশানে। হয়তো সন্দেহের অবসান এবার ঘটবে।

=============

 

মহা রফিক শেখ । 

গ্রাম ও ডাক - মহিসার, থানা - খড়গ্রাম, জেলা - মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম বঙ্গ -742147

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.